বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রোহিঙ্গার পর ‘পালিয়ে আসা’ জান্তা সৈন্য আরেক আপদ

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ২০:০৭

‌দীর্ঘ ছয় বছর ধরে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। এবার নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে বার্মিজ সামরিক জান্তা বাহিনীর সদস্যরা। অস্ত্রসহ বাংলাদেশে ঢুকে পড়া এই সামরিক সদস্যদের নিয়ে বাংলাদেশকে অবশ্যই ভাবা উচিত।

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে আরাকান আর্মি ও বার্মিজ সামরিক জান্তা বাহিনীর মধ্যে চলে আসা সংঘর্ষে বার বার বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। দীর্ঘ ছয় বছর ধরে দেশটি থেকে পালিয়ে আসা ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। এবার নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে বার্মিজ সামরিক জান্তা বাহিনীর সদস্যরা। এই সামরিক সদস্যদের অস্ত্রসহ বাংলাদেশে ঢুকে পড়া আরেক মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দীর্ঘদিনেও যখন রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়নি মিয়ানমার, তখন আবার সাম্প্রতিক সহিংসতা নতুনভাবে ভাবিয়ে তুলেছে বাংলাদেশকে। বিশেষ করে অস্ত্রধারী সৈন্যদের পালিয়ে আসার ঘটনা বেশকিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা আশ্রয় কেন্দ্র। এখানে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের বড় মাথাব্যথার কারণ। ফাইল ছবি

যেসব প্রশ্ন উঠেছে তার মধ্যে রয়েছে- ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গা নিধন ও বাংলাদেশে পাঠানোর ঘটনায় সম্প্রতি পালিয়ে আসা এসব সৈন্যের ভূমিকা ছিল কি না? এছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্থিরতা সৃষ্টি কিংবা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গুপ্তচরবৃত্তি করছে কি না। এসব প্রশ্ন সামনে নিয়ে আশ্রিত সৈন্যদের খতিয়ে দেখে এরপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে বাংলাদেশকে।

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, জানুয়ারির মধ্যভাগ থেকে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে আরাকান আর্মি ও বার্মিজ সামরিক জান্তা বাহিনীর মধ্যে চলে আসা সংঘর্ষে প্রায় ৩৫০ জন জান্তা বাহিনীর সদস্য বাংলাদেশে পালিয়ে এসে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে মূলত বার্মিজ সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বা বিজিপির সদস্যই সর্বাধিক। এই বিজিপি বাহিনীর নেতৃত্বসহ পুরো বাহিনীই বার্মিজ সামরিক জান্তা সরকার দ্বারা পরিচালিত। তাই তাদের পুরনো কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

গত ২০১৭ সালের ২৪ ও ২৫ আগস্ট বার্মিজ সামরিক জান্তা বাহিনী এবং এই বিজিপি বাহিনীর সদ্যস্যরা একত্রে অংশ নিয়েছিলো রোহিঙ্গা নিধনে। এর ফলে এখনও বাংলাদেশের ঘাড়ে চেপে বসে আছে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা। যেসব সৈন্য ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা নিধনে অংশ নিয়েছিল পালিয়ে আসা এই সামরিক সদ্যসদের মধ্যে তাদের থাকার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না।

এছাড়াও পালিয়ে আসা সৈন্যরা জানে যে, কারা ওই রোহিঙ্গা গণহত্যায় অংশ নিয়েছিল বা তাদের নাম-পরিচয় কী। যে কারণে আরাকান আর্মি তাদের ওপর ক্ষিপ্ত। কেউ কেউ মনে করছেন, দুরভিসন্ধি আছে বলেই নিজেরা প্রাণে বাঁচতে দেশ না বাঁচিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে মিয়ানমারের ওইসব সৈন্য।

সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এসে বান্দরবানে আশ্রয় নেয়া বিজিপি সদস্যদের কয়েকজন। ছবি কোলাজ: নিউজবাংলা

এদিকে আরও যে প্রশ্নটি ভাবিয়ে তুলছে বিশ্লেষকদের তা হলো- পালিয়ে আসা সৈন্যদের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পারে বার্মিজ সামরিক জান্তা সরকারের গুপ্তচর। যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে এবং রোহিঙ্গাদের না ফেরানোর এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছে। এছাড়াও সীমান্তে অস্থিরতা তৈরির কূটকৌশলও করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিয়ানমার তাড়াহুড়ো করলেও আমাদের তাড়াহুড়ো করা যাবে না। তারা আদৌ বর্ডার গার্ডের সদস্য কি না এটা নিশ্চিত হতে হবে। আবার এদের মধ্যে কেউ গুপ্তচরও থাকতে পারে। এগুলো বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই প্রয়োজন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এদের মধ্যে এমন কেউ ঢুকে পড়তে পারে, যারা বাংলাদেশে ঢুকে নানা ধরনের মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য নিয়ে বিদেশে অপপ্রচার করতে পারে। কেউ কোনো সন্ত্রাসী দলের সদস্য হলে সেটা আমাদের নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের প্রশ্ন হতে পারে।

নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, আশ্রিতদের মধ্যে কেউ মানবাধিকার লঙ্ঘন বা যুদ্ধাপরাধের মতো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত কি না, সেটাও নিশ্চিত হতে হবে। তা না হলে তিনি ফিরে গিয়ে একই ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে পারেন।

মিয়ানমার সীমান্তে সতর্ক পাহারায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি। ফাইল ছবি

এই পর্যায়ে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের এই সামরিক সদস্যদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কী ভাবছে বাংলাদেশ সরকার?

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা এ বিষয়ে সরকারের সামনে দুটি পথ খোলা আছে বলে উল্লেখ করেছেন। এক- বার্মিজ জান্তা সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় এসে এই দলটিকে সমূলে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া। কিন্তু এতে বিপদ কমবে না। তাই ফেতর পাঠানোর আগে তাদের নিয়ে তদন্ত করা দরকার।

অন্যদিকে অধিকাংশ বিশ্লেষক মনে করেন- বাংলাদেশের উচিত হবে না এতো সহজে ব্যাপারটার মীমাংসা করে ফেলা। সরকারের উচিত হবে পালিয়ে আসা এই বার্মিজ সেনা-সদ্যস্যদের পরিচয় নিশ্চিত করা, ২০১৭-এর ২৪ ও ২৫ আগস্টে তাদের ভূমিকা খতিয়ে দেখা। যদি রোহিঙ্গা গণহত্যা এবং জাতিগত উচ্ছেদে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিচারের জন্য সংশ্লিষ্টদের বাংলাদেশ সরকার প্রয়োজনে এই বিষয়ে জাতিসংঘ অথবা আইসিজে বা আইসিসি-এর সহায়তাও চাইতে পারে।

এ বিভাগের আরো খবর