‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি, শিল্পায়নের আগামী’ স্লোগানকে সামনে রেখে তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতে কার্বন নিঃসরণ হ্রাস, নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্য অর্জনে শ্রমিকের মানবাধিকার ও সমতা নিশ্চিত করা এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রিতে রাখতে জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক শক্তিতে বিনিয়োগ হ্রাসের দাবি নিয়ে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী ‘দ্বিতীয় জাতীয় আন্তবিশ্ববিদ্যালয় নবায়নযোগ্য শক্তি বিতর্ক প্রতিযোগিতা’।
অক্সফ্যামের সার্বিক সহযোগিতায় ঢাকার প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটিতে শনিবার থেকে শুরু হওয়া এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে দেশের ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রতিযোগিতাটি আয়োজনে সহায়তা করছে ডিবেট ফর হিউম্যানিটি (ডিএফএইচ) ও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়।
এর আগে ২০২২ সালে প্রতিযোগিতার প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
বিতর্ক প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবদুল মান্নান চৌধুরী।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পরিবেশকে বাঁচাতে হলে আমাদের নবায়নযোগ্য শক্তি নির্ভরতা বাড়াতে হবে। নীতিনির্ধারকরা এ নিয়ে অনেক কথা বলেন, কিন্তু তা বাণিজ্যভিত্তিক। তারা কাজও করবেন সেভাবেই। কার্বন নিঃসরণ কমানো, নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করা নিয়ে আমাদের কর্মপরিকল্পনা অনেক, কিন্তু বাস্তবায়ন কম।
‘আমরা পরিবেশ বাঁচানোর কথা বলছি। আমরাই আবার সুন্দরবনের গাছ কাটছি, বান্দরবানে বাঁধ দিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছি। তাই তরুণদের এগিয়ে আসা জরুরি। এসব বিষয়গুলো নিয়ে তাদের কাজ করতে হবে। না হলে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়া কঠিন হবে।’
যা আছে মূল প্রবন্ধে
বিতর্ক প্রতিযোগিতার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশের ক্লাইমেট জাস্টিস ও ন্যাচারাল রাইটস বিভাগের প্রধান ড. মোহাম্মদ ইমরান হাসান।
মূল প্রবন্ধে জলবায়ু ন্যয্যতা, তৈরি পোশাক খাতে কার্বন নিঃসরণ হ্রাস, শ্রমিকের সুরক্ষা ও সমতা নিশ্চিত, জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক শক্তিতে বিনিয়োগ হ্রাসের ইত্যাদি বিষয়গুলো উঠে আসে।
এতে বলা হয়, জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির প্রতিবেদন (২০২১) অনুযায়ী, বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখতে বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ২০৩০ সালের মধ্যে অর্ধেকে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে।
তৈরি পোশাক খাতের কার্বন নিঃসরণের বিষয়ে প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, খাতটির প্রায় ৯৭ শতাংশ জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল। যদিও বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, কিন্তু আরএমজি খাতের জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা ও পরিকল্পনা না থাকায় লক্ষ্য অর্জন খুব সামান্যই হয়েছে।
প্রবন্ধে আরও বলা হয়, দেশের পোশাক শ্রমিকদের বড় একটি অংশ মজুরির দিক থেকে বৈষম্যের শিকার। দেশে একজন পোশাক শ্রমিকের ন্যূনতম মাসিক বেতন ১০০ ডলার, যার মধ্যে ৩৬ ডলার খরচ হয় পুরো পরিবারের খাদ্যের পেছনে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিক্রয়কর্মীর বেতন মাসে প্রায় ৪ হাজার ডলার।
বিতর্কে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান
বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রাম, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সটাইল (বুটেক্স), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, সরকারি তিতুমীর কলেজ ঢাকা, শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকান-ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এআইইউবি), তেজগাঁও কলেজ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়।