কৃষকের ফসলের ক্ষেতে হাঁটু সমান পানি; ডুবে গেছে আলু, পেঁয়াজ, রসুন, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল। শুষ্ক মৌসুম এবং সম্প্রতি বৃষ্টি না হওয়ার পরও এমন অবস্থা হয়েছে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার ফতেজংপুর এলাকায়।
হঠাৎ দেখে মনে হতে পারে, এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে, কিন্তু বন্যা নয়, তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের বাঁধ ভেঙে এমন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে এলাকাটিতে। এর ফলে পানিতে তলিয়ে গেছে প্রায় ৫০ বিঘা জমির ফসল।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে বাঁধটি ভেঙে চারদিক পানিতে ভেসে যায়। এখনও জমিতে পানি জমে থাকায় ক্ষতির আশঙ্কায় দিন পার করছেন কৃষকরা।
তারা বলছেন, আলু ও পেঁয়াজের জমিতে পানি জমে রয়েছে। এখনও আলু তোলার সময় হয়নি, কিন্তু এভাবে জলাবদ্ধতা হওয়ায় এখনই এসব জমির আলু তুলে ফেলতে হবে। তা না হলে আলু পচে যাবে।
অপরিণত আলু তুলে ফেললে উৎপাদনে ঘাটতি হবে। সেই সঙ্গে এসব আলু বেশি দিন সংরক্ষণ করাও যাবে না।
পেঁয়াজ নিয়েও একই আশঙ্কা স্থানীয় চাষিদের। আবার ভুট্টার গাছ নিয়েও বিপদে আছেন তারা।
ভুক্তভোগী কৃষকরা যা বলছেন
ফতেজংপুর কাচারিপাড়ার কৃষক আফজাল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পাড় ভেঙে আমার ছয় বিঘা জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে তিন কাঠা জমিতে পেঁয়াজ, পাঁচ কাঠায় আলু, দেড় বিঘা জমিতে ধান আর বাকি জমিতে ভুট্টা চাষ করেছিলাম। এসব ফসল এখন পানির নিচে রয়েছে।’
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘আমরা এখানকার সবাই গরিব মানুষ। এই অবস্থার জন্য এলাকার অন্তত ৫০ বিঘা জমির ফসলের ক্ষতি হবে।’
একই ইউনিয়নের কামারের মোড় এলাকার কৃষক শাহীন আলম বলেন, ‘ফসলের জমি দেখে মনে হচ্ছে শীতকালে বন্যা। ফসলের যে ক্ষতি হলো, তা কে পূরণ করে দেবে?’
যাদের দায়ী করছেন ভুক্তভোগীরা
টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে বাঁধ কেটে পানি সেচের ব্যবস্থা করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এ কারণেই বাঁধ ভেঙেছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী কৃষকদের।
এ বিষয়ে শাহীন আলম বলেন, ‘অবৈধভাবে বাঁধ কেটে পানি নিচ্ছিল যেসব কৃষক এবং ক্যানেলের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে যারা রয়েছেন, তারাই এর জন্য দায়ী। কর্তৃপক্ষ ঠিকমতো দেখাশোনা করলে এই পাড় ভেঙে যেত না।’
তার অভিযোগ, কৃষকদের এত ক্ষতি হয়ে যাওয়ার পরও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কেউ খোঁজ নিচ্ছেন না।
স্থানীয় বাসিন্দা মোস্তাকিম বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে এই বাঁধে দুর্নীতি চলে আসছে। এখানে যারা পানি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত, তারাই এ ঘটনার জন্য দায়ী।’
তিনি বলেন, ‘অবৈধভাবে পানি সরবরাহের ঘটনা এখানে দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আসছে, কিন্তু কোনো প্রতিকার নাই। এর মাশুল দিতে হলো আমাদের। পাড় ভেঙে যাওয়ায় তো আমরা সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’
ফতেজংপুর চৌধুরীপাড়ার বাসিন্দা আলমগীর চৌধুরী সোহাগ জানান ভিন্ন তথ্য।
তিনি বলেন, ‘পাড় তৈরির সময় খরচ বাঁচাতে কর্তৃপক্ষ প্রথমে বালি দেয়, তারপর মাটি ভরাট করে। আমরা গিয়ে তখন কাজ বন্ধ করে দিই। তাদের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণেই এই পাড় ভেঙে গেছে।’
কর্তৃপক্ষ যা বলছে
অবৈধ পাইপ দিয়ে পানি নেয়ার কারণে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন নীলফামারীর সৈয়দপুরে দায়িত্বরত পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান।
তিনি বলেন, ‘স্থানীয় কিছু সুবিধাভোগী কৃষকের অবৈধভাবে পানি নেয়া এবং ইঁদুরের গর্তের কারণে বাঁধের ওই অংশ ভেঙে গেছে।’
নতুন করে বাঁধ মেরামতে অর্থের অপচয় হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঠিকাদার রয়েছে। এতে করে সরকারিভাবে অর্থের অপচয় হবে না।’
কৃষিজমি প্লাবিত হলেও কৃষকের ক্ষতি হবে না বলে দাবি করে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘কৃষকের জমিতে যেটুকু পানি জমেছে, তা দ্রুত নেমে যাচ্ছে। অন্যদিকে বাঁধ মেরামতের জন্য আমরা দ্রুত কাজ চালাচ্ছি।’
সেচ প্রকল্পের কার্যক্রমও শিগগিরই শুরু করা হবে জানান প্রকৌশলী মেহেদী হাসান।