পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে অস্থিতিশীল করার জন্য অনেক চক্রান্ত ছিল। গণতন্ত্র রক্ষায় অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে ভারত। এজন্য দেশটির জনগণ ও সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।’
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের আমন্ত্রণে তিনদিনের দ্বিপক্ষীয় সফরে নয়াদিল্লিতে রয়েছেন ড. হাছান মাহমুদ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে দিল্লিভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনে (ভিআইএফ) মিডিয়া ইন্টারঅ্যাকশনে তিনি এমন মন্তব্য করেন। সূত্র: বাসস
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এটি সত্য যে ভারতের জনগণ এবং সরকার আমাদের গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের মতো এবারও আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল।’
অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ভিআইএফ পরিচালক ড. অরবিন্দ গুপ্ত। ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. মুস্তাফিজুর রহমান মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন। অনুষ্ঠানে কূটনীতিক, গবেষণা ফেলো, শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক নির্বাচন ভালো, প্রাণবন্ত ও অংশগ্রহণমূলক এবং উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান বলেন, ‘আমি বলব, আমাদের নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে এবং ভারতীয় উপমহাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি ভালো নির্বাচন ছিল। আমাদের জনগণ স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের চিঠিকে স্বাগত জানান। বলেন, ‘আমরা তাদের স্বাগত জানাই কারণ উভয় নেতাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র চমৎকার বন্ধুত্বের বন্ধন উপভোগ করছে এবং আমরা জনগণের স্বার্থে ভবিষ্যতে আমাদের বর্তমান সম্পর্ককে আরও জোরদার করার অপেক্ষায় রয়েছি। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের প্রধান উন্নয়ন সহযোগী এবং আমরা গত বছর আমাদের সম্পর্ক উদযাপন করেছি।’
ধর্মীয় সংখ্যালঘু ইস্যুতে ড. হাছান বলেন, ‘বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় তাদের অধিকার ভোগ করে আসছে। কারণ আওয়ামী লীগ একটি ধর্মনিরপেক্ষ দল এবং ধর্মনিরপেক্ষতা আমাদের দলের প্রধান স্তম্ভ। পাশাপাশি কিছু ধর্মান্ধ শক্তি আছে। তারা আওয়ামী লীগকে ভোটও দেয় না এবং সময় সময় তারা আমাদের সমাজকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে বর্তমান সরকার ধর্মের নামে যারা সমাজকে অস্থিতিশীল করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।’
তুলনামূলক তথ্য তুলে ধরে ড. হাছান বলেন, ‘গত বছর বাংলাদেশে ৩০০ জনেরও কম মানুষের জন্য একটি করে দুর্গা পূজা মণ্ডপ স্থাপন করা হয়েছিল। অপরদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে প্রতি এক হাজার জন্য একটি মণ্ডপ স্থাপন করা হয়েছিল। এটি প্রমাণ করে যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বাংলাদেশে কতটা ধর্মীয় স্বাধীনতা উপভোগ করছে।’
বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুর সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে- এমন অভিযোগ খণ্ডন করে মন্ত্রী বলেন, ‘এমন তথ্যের সঙ্গে আমি একমত নই। বরং সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতো বাংলাদেশে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর হার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।’
বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব বৃদ্ধির বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনের প্রাক্কালে একটি মহল ভারতবিরোধী মনোভাবের তাস খেলার চেষ্টা করলেও বর্তমান সময়ে এই কৌশল কাজ করে না। বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনের আগে এই তাস খেলতে চায়। কিন্তু এখন তা অকার্যকর।’
জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘কানেক্টিভিটি, ভিসা প্রক্রিয়ার প্রতিবন্ধকতা দূর করা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ জোরদার করতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করবে।
‘এখনও ভিসা পেতে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারতীয় ভিসা সেন্টারের সামনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করেছি। ভিসা পাওয়ার বাধা কমানো হয়েছে এবং আরও বেশি লোক দুই দেশের মধ্যে ভ্রমণ করবে। এটি মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ জোরদার করবে।’
ভিসামুক্ত ভ্রমণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সেই দিনগুলোর অপেক্ষায় আছি, যখন কেউ সীমান্তে এসে তার পাসপোর্ট দেখিয়ে গন্তব্য দেশে প্রবেশ করবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ পরে সন্ধ্যায় ফরেন করেসপন্ডেন্টস ক্লাব অফ সাউথ এশিয়ায় (এফসিসি, সাউথ এশিয়া) ‘বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া রিলেশনস টুডে’ বিষয়ে আরেকটি মিডিয়া ইন্টারঅ্যাকশনে যোগ দেন।
বাংলাদেশের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ড. হাছানের এটিই ভারতে প্রথম সরকারি সফর এবং কোনো দেশে তার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর।