মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে স্বাধীনতাকামী আরাকান আর্মির সঙ্গে চলমান সংঘাতে প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া দেশটির সেনাবাহিনী, সীমান্তরক্ষী বাহিনীসহ (বিজিপি) বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। এসব সেনাকে সমুদ্রপথে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের চলমান সংঘাতের কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া সেনা সদস্যদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তাদের গভীর সমুদ্র দিয়ে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে বক্তব্য দেন মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন। ছবি: নিউজবাংলা
কাউকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া হবে না বললেও এখন কেন বিজিপি ও অন্যরা ঢুকছে- এমন প্রশ্নে মুখপাত্র বলেন, ‘মিয়ানমার সরকারের নিয়মিত বাহিনী বিজিপি সদস্য ও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়াকে এক করে দেখা ঠিক হবে না। আশ্রিত বিজিপি সদস্যদের নিরাপদ দ্রুত প্রত্যাবাসন প্রধান বিবেচ্য বিষয়। বিমান বা নৌরুটের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ নয় কিংবা পূর্বশর্তও নয়। যত দ্রুত সময়ে তাদের প্রত্যাবাসন করা সম্ভব, সেটা বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ এমন প্রস্তাব দিয়েছিল।’
মুখপাত্র বলেন, ‘কিছুদিন আগে মিয়ানমার ভারত থেকে বিমানযোগে সেনা নিয়ে এসেছিল। সে কারণেই বাংলাদেশ বিমানযোগে সেনাদের ফেরত নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ দ্রুততম সময়ে তাদের প্রত্যাবাসন চায়। এখানে সময়ক্ষেপণের সুযোগ নেই। আশা করা যায়, তাদের দ্রুত ফেরত পাঠানো হবে, সেটা আকাশ কিংবা বিমানযোগে। সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে, তাদের নিরাপদে ফেরত পাঠানো।’
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীদের আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কিংবা রাজনৈতিক কোনো কারণ থাকার প্রশ্ন অবান্তর। সম্প্রতি ভারতেও মিয়ানমারের বিজিপি সদস্যরা আশ্রয় নিয়েছিল। ভারত থেকে তারা নিজ দেশে ফিরে গেছে।’
সেহেলী সাবরীন বলেন, একটি নিয়মিত বাহিনীর বিপদগ্রস্ত সদস্য হিসেবে তারা বাংলাদেশে সাময়িক আশ্রয় নিয়েছেন এবং প্রথম দিন থেকেই মিয়ানমার সরকার তাদের ফিরিয়ে নেয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছে।’
পালিয়ে আসা মিয়ানমারের সেনাদের ফিরিয়ে নিতে নেপিদোর সঙ্গে আলোচনার অগ্রগতি সম্পর্ক জানতে চাইলে মুখপাত্র বলেন, ‘মিয়ানমারের সরকার তাদের সেনা ও বিজিপি সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে ইতোমধ্যে আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে মিয়ানমারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বুধবার বিকেলে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আশা করা যাচ্ছে, যত দ্রুত সম্ভব তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে।’
মিয়ানমারের চলমান যুদ্ধে বাংলাদেশ যে কঠিন ভূরাজনৈতিক সমীকরণে পড়েছে, তা থেকে উত্তরণে কী ধরনের কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হচ্ছে- এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘এটা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত। তবে এতে বাংলাদেশের জনগণ, সম্পদ কিংবা সার্বভৌমত্ব যাতে কোনোভাবে হুমকিতে না পড়ে, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি করে মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে।
‘পাশাপাশি সুবিধাজনক সময়ে স্বেচ্ছায় টেকসই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সতর্ক। এছাড়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে নিউ ইয়র্কের স্থায়ী মিশন সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে।
প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশ মিয়ানমারে স্থিতিশীলতা দেখতে চায় জানিয়ে মুখপাত্র বলেন, ‘মিয়ানমার সংকট উত্তরণে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক যে কোনো উদ্যোগে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন অনিবার্যভাবে থাকা প্রয়োজন বলে মনে করে বাংলাদেশ।’