বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দিনাজপুরে প্রায়ই দুর্ঘটনায় বিআরটিসির বাস, এক বছরে ৭ প্রাণহানি

  •    
  • ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ১৩:১৪

বিআরটিসি দিনাজপুর ডিপোর ইউনিট প্রধান প্রশান্ত কুমার বসাক বলেন, ‘মঙ্গলবারের বিআরটিসির চালক হিসেবে ছিলেন আজিজার রহমান। তাকে দুর্ঘটনার পর তাৎক্ষণিক সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করবেন। আমরা বিআরটিসির চালকদের ভালোভাবে প্রশিক্ষণ প্রদান করার পর গাড়ি চালাতে দিই। এ ছাড়াও গাড়ি ছাড়ার পূর্বে তাদের সতর্কও করে দেয়া হয়।’

দিনাজপুরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) বেপরোয়া গতির বাস প্রায়ই ঘটাচ্ছে দুর্ঘটনা। গত এক বছরে জেলার দশমাইল থেকে সৈয়দপুর রাবেয়া পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটারের ৬ থেকে ৭টি দুর্ঘটনা ঘটায় বিআরটিসির বাস। এতে সাতজন নিহত হন, আহত হয়েছেন অনেকে।

সর্বশেষ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে চিরিরবন্দর উপজেলার রানীরবন্দর বাজারে দুটি ভ্যান, একটি মোটরসাইকেল ও কয়েকজন পথচারীর ওপর উঠে যায় বিআরটিসির একটি বাস। ওই সময় একটি খাবার হোটেল ভেঙে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই দুইজন ভ্যানচালকসহ মোট চারজন নিহত হন। দুর্ঘটনায় আটজন আহত হন। তাদের খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

প্রাণ হারানো ব্যক্তিরা হলেন খানসামা উপজেলার গোয়ালডিহি প্লানের বাজারের ইসমাইল হোসেনের ছেলে ৪৫ বছর বয়সী নজরুল ইসলাম নজু, গোয়ালডিহি বটতলী এলাকার আজিম উদ্দীনের ছেলে ৫০ বছর বয়সী আব্দুল মজিদ, টেকনাফের হরিখোলা গ্রামের প্রয়াত মংসু চাকমার ছেলে ৫২ বছর বয়সী নত্তা ইয়াং চাকমা ও একই এলাকার প্রয়াত ইশ এসং চাকমার ৪৫ বছর বয়সী ছেলে সাইঙ্গো চাকমা।

প্রত্যক্ষদর্শী আবুল হোসেন বলেন, ‘মঙ্গলবার সকাল ৭টা ২০ মিনিটে দিনাজপুর থেকে ছেড়ে আসা একটি গেইটলক বাস রানীরবন্দর বাজারে যাত্রী উঠানামা করছিল। বাসটির বাম পাশে কয়েকটি ভ্যান বাস থেকে নেমে আসা যাত্রীদের জন্য অপেক্ষা করছিল। ওই সময় দিনাজপুর থেকে ছেড়ে আসা রংপুরগামী বিআরটিসির বাসটি গেইটলক বাসের বাম পাশ দিয়ে দ্রুত গতিতে প্রবেশ করে। এতে দুটি ভ্যান, একটি মোটরসাইকেল ও বাস থেকে নামা কয়েকজন যাত্রীকে পিষ্ট করে ২০০ গজ দূর পর্যন্ত নিয়ে যায়। দুর্ঘটনায় সাত থেকে আট জন গুরুতর আহত হয়েছে। তাদের বিভিন্ন ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার পর চালক ও হেলপার পালিয়ে গেছে। বিআরটিসির বাস পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দশমাইল থেকে সৈয়দপুরের রাবেয়া পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটারে মধ্যে চম্পাতলী বাজারের পাশে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গত ৩১ জানুয়ারি বিআরটিসির একটি বাস রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায়। এতে বাসের চারজন যাত্রী আহত হন। এ ছাড়া গত ৩ জানুয়ারি এই সড়কের ব্যাংককালী নামক স্থানে বিআরটিসির বাস একটি ভ্যানকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে ভ্যানচালক কাশেম আলী আহত হন।

এরপর ১৯ মার্চ সন্ধ্যায় দশমাইল রংপুর মহাসড়কের দিনাজপুর সদর উপজেলার ২ নম্বর সুন্দরবন ইউনিয়নের দরবারপুরে একটি পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় বিআরটিসির একটি বাসের। দুর্ঘটনায় পিকআপের ওপরে ওঠে যায় বিআরটিসির বাসটি। এতে পিকআপ চালক চিরিরবন্দর উপজেলার রানীরবন্দর সাতনালা গ্রামের ৩০ বছর বয়সী ফয়জার রহমান, রানীরবন্দর গ্রামের ২৫ বছর বয়সী মো. সোহান ও একই গ্রামের ২৮ বছর বয়সী মোস্তাকিম নিহত হন।

এ ছাড়াও গত এক বছরে এই সড়কের ৩০ কিলোমিটারে বিআরটিসি বাসের কারণে ছোটখাটো বহু দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।

ব্যাংককালী এলাকার মুদি দোকানদার আসলাম হোসেন বলেন, ‘জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি আমি একটি ভ্যানে ভুষিরবন্দরে দোকানের মালামাল কিনতে যাচ্ছিলাম। রাস্তায় পেছন দিক থেকে আসা একটি বিআরটিসি বাস আমাদের ভ্যানকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। সে সময় আমার তেমন কিছু না হলেও ভ্যানটি ভেঙে যায়।’

সদর উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়নের দরবারপুর গ্রামের বাসিন্দা দবিরুল হোসেন বলেন, ‘দুই মাস আগে রাস্তার পাশে আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম। ওই সময় দশমাইল থেকে একটি ইজিবাইক ও বিআরটিসির একটি বাস আসছিল। কিন্তু আমার সামনে আসামাত্র বিআরটিসির বাসটি ইজিবাইককে ধাক্কা দেয়। এতে ইজিবাইকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আমাকে ধাক্কা দেয়। ধাক্কায় আমার ডান হাতে খুব ব্যথা পাইছিলাম।’

একই এলাকার বাসিন্দা দুলাল হোসেন বলেন, ‘বিআরটিসি বাসে উঠতে খুব ভয় লাগে। তারা খুব বাজেভাবে গাড়ি চালায়। তারা সবসময় অন্যান্য বাসের থেকে এগিয়ে থাকতে চায়। এ জন্য তারা অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালায়। আর অতিরিক্ত গতির কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে।’

সাতনালা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রউফ বলেন, ‘এক বছর আগে বিআরটিসি বাসের বেপরোয়া গতির কারণে আমার ভাতিজাসহ তিনজন নিহত হয়। দুর্ঘটনার পর থেকে তার পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। বিআরটিসিকে আমরা জানি সরকারি গাড়ি। কিন্তু তাদের গাড়ি চালকরা যে এভাবে গাড়ি চালায় এটা কি সরকার জানে না। এখনই এদের নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। না হলে সামনে আরও কত মায়ের বুক খালি হবে।’

রানীরবন্দর এলাকার বাসিন্দা মাজেদুর রহমান বলেন, ‘গত এক বছর পূর্বে এই সড়কে বিআরটিসি বাসের বেপরোয়া গতির কারণে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবারও বিআরটিসি বাসের বেপরোয়া গতির কারণে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। বিআরটিসি বাস অন্যান্য বাসের তুলনায় খুবই বেপরোয়াভাবে চলাচল করছে। প্রায় বিআরটিসি বাসের কারণে সড়ক দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়। তাই বিআরটিসি বাসের বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। পাশাপাশি রাস্তাগুলোর দুই পাশের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করার অনুরোধ করছি।’

হাইওয়ে পুলিশের রংপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হরেশ্বর রায় বলেন, ‘মঙ্গলবার সকালের দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে বিআরটিসির বাস বেপরোয়া ও ভুল দিক দিয়ে চলার কারণে হয়েছে। দুর্ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। কয়েকজন আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনার পর বাসটির চালক ও হেলপার পালিয়ে গেছে। মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’

এ বিষয়ে বিআরটিসি দিনাজপুর ডিপোর ইউনিট প্রধান প্রশান্ত কুমার বসাক বলেন, ‘মঙ্গলবারের বিআরটিসির চালক হিসেবে ছিলেন আজিজার রহমান। তাকে দুর্ঘটনার পর তাৎক্ষণিক সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করবেন। আমরা বিআরটিসির চালকদের ভালোভাবে প্রশিক্ষণ প্রদান করার পর গাড়ি চালাতে দিই। এ ছাড়াও গাড়ি ছাড়ার পূর্বে তাদের সতর্কও করে দেয়া হয়।’

এ বিভাগের আরো খবর