রাজনীতি না করেও সংসদ সদস্য হতে চান চিত্রনায়িকারা। পর্দায় অভিনয় করেন তারা। কেউ বড় পর্দার, কেউ ছোট পর্দার। সাংস্কৃতিক অঙ্গনের এই রঙিন অংশে তাদের সাড়ম্বর উপস্থিতি থাকলেও রাজপথে বা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে উপস্থিতি নেই বললেই চলে। তবু এই জগতের এক ঝাঁক অভিনেত্রী সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য হতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত ৫০টি আসনের ভোটগ্রহণ হবে ১৪ মার্চ। মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে ২৭তম কমিশন সভা শেষে বিকেলে তফসিল ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম।
একই দিন সকালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংরক্ষিত মহিলা আসনের জন্য ফরম বিক্রি শুরু করে। বলা যায়, ফরম বিক্রির কিছুক্ষণ পর তা সংগ্রহ করতে হামলে পড়েন অভিনেত্রীরা। ফরম কেনার হিড়িক পড়ে যায়। একে একে ফরম কেনেন সোহানা সাবা, মেহের আফরোজ শাওন, অপু বিশ্বাস, নিপুণ আক্তার, শাহনূর, ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর, তানভীন সুইটি, জাকিয়া মুন প্রমুখ।
সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ৫০টি। ইতোমধ্যে ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য তাদের পক্ষ থেকে সংরক্ষিত আসনে সদস্য নির্বাচনের ক্ষমতা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়েছেন। ফলে আওয়ামী লীগ তাদের দলের এবং স্বতন্ত্রদের মিলে ৪৮ জন সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য দিতে পারবে। বাকি দুটি আসনে নারী সংসদ সদস্য দিতে পারবে জাতীয় পার্টি (জাপা)।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, ফরম সংগ্রহকারী অভিনেত্রীদের মধ্যে কেউই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় নন। সাংস্কৃতিক জগতের মধ্যে অভিনেত্রী তারানা হালিম, রোকেয়া প্রাচী, চিত্রনায়িকা জ্যোতিকা জ্যোতি, কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম প্রমুখ দলটির সক্রিয় রাজনীতি করেন।
তাদের মধ্যে তারানা হালিম দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য। জ্যোতিকা জ্যোতি ও মমতাজ বেগম দলটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য। রোকেয়া প্রাচী মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
কিন্তু প্রথম দিনে এদের কাউকে মনোনয়ন ফরম কিনতে দেখা যায়নি। যারা কিনেছেন তাদের কেউ কেউ বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কর্মসূচিতে যান মাঝেমধ্যে। এদের মতোই আরেকজনের নাম উল্লেখযোগ্য। তিনি অভিনেত্রী তারিন। তার নামও সংরক্ষিত মহিলা আসনের জন্য আলোচনায় আছে। কিন্তু বিএনপির সঙ্গে তার পরিবারের সখ্য এবং খালেদা-তারেকের সঙ্গে জাসাসের অনুষ্ঠানে তার ছবি অন্তর্জালে ভাসছে। তবে পদ-পদবি না থাকলেও সুইটি ও অপু বিশ্বাসকে নিকট অতীতে আওয়ামী লীগের কিছু কর্মসূচিতে দেখা গেছে।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কেনার বিষয়ে জানতে চাইলে সোহানা সাবা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হঠাৎ করেই ফরম কিনিনি। এটা পরিকল্পনার ফসল। আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা। মায়ের বাড়িতে এক সময় আওয়ামী লীগের অফিস ছিলো। সে বিবেচনায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
‘আর ফরম কেনার জন্য যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা এবং আলোচনার প্রয়োজন মনে করেছি, সেসব করেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মনোনীত হলে অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবো।’
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার প্রথম দিনে সংরক্ষিত মহিলা আসনের জন্য আওয়ামী লীগের ফরম বিক্রি হয়েছে ৮১০টি। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগ থেকে ২৭৫টি, ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে ৬২টি, চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে ১৪৯টি, সিলেট বিভাগ থেকে ২৬টি, বরিশাল বিভাগ থেকে ৫৬টি, খুলনা বিভাগ থেকে ৭৭টি, রংপুর বিভাগ থেকে ৭৫টি এবং রাজশাহী বিভাগ থেকে ৯০টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়ন আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা দেয়া যাবে বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছে। এছাড়া মাঝে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ফরম সংগ্রহ ও জমা দেয়া যাবে।
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের শো-বিজ অঙ্গন থেকে অংশগ্রহণ করেছিলেন আসাদুজ্জামান নূর, ফেরদৌস আহমেদ, মমতাজ বেগম, মাহিয়া মাহি, ডলি সায়ন্তনী, নকুল কুমার বিশ্বাস।
অধিকাংশকেই পরাজয়ের মুখ দেখতে হয়েছে। জয়ের দেখা পেয়েছেন আসাদুজ্জামান নূর ও ফেরদৌস আহমেদ। আর গত সংসদে এ অঙ্গন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য হয়েছিলেন অভিনেত্রী সুবর্ণা মোস্তফা।
রাজনীতি না করেও অভিনেত্রীদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য হওয়ার বাসনার তীব্র সমালোচনা করেছেন নির্বাচন নিয়ে কাজ করা গবেষণা প্রতিষ্ঠান সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক অধ্যাপক বদিউল আলম মজুমদার।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা দেউলিয়াত্ব। যারা কোনোদিন জনগণের কাছে যাননি, মানুষের সুখ-দুঃখের সঙ্গে পরিচয় নেই, তারা সংসদ সদস্য হতে চান। আসলে রাজনীতি আর রাজনীতির জায়গায় নেই। সংসদ ভরে গেছে ব্যবসায়ীতে। এখন অভিনেত্রীরাও জনপ্রতিনিধি হতে চান। এটা কোনোভাবেই রাজনীতি ও জনগণের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না।’