বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চকরিয়ায় অবৈধ বালু উত্তোলন: ঝুঁকিতে ফসলি জমি, মুজিববর্ষের ঘর

  • ইউসুফ বিন হোছাইন, (চকরিয়া-পেকুয়া) কক্সবাজার    
  • ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ১৩:০৬

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘কিছুদিন আগে ওই এলাকায় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। কিছু ড্রেজার মেশিন ও একজনকে জেল জরিমানাও করেছেন। এখন আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম তারা সক্রিয় হয়েছে। আমি ছুটিতে আছি। শেষ করে এসে আমি নিজেই ওই এলাকায় অভিযানে যাব।’

কক্সবাজারের চকরিয়ার পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নে মাতামুহুরী নদীর তীরে অবস্থিত সিকান্দার পাড়া গ্রাম। এই গ্রামে রয়েছে শত শত একর কৃষিজমি, যা প্রায়ই নদীর তীরবর্তী এলাকায়। এখানে গৃহহীন শতাধিক পরিবারের পুনর্বাসন হয়েছে নদীর তীরবর্তী অবস্থিত মুজিববর্ষের ঘরে, কিন্তু অবৈধ ও অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের কারণে শত শত একর কৃষিজমিসহ শতাধিক মুজিববর্ষের ঘর এখন বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

চিহ্নিত এই বালুদস্যুদের বালি উত্তোলনের এসব কার্যক্রম চলে আসছে গত পাঁচ বছর ধরে। মাতামুহুরী নদীর ওই পয়েন্টে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে একাধিক বার অভিযান চালিয়ে তাদের সরঞ্জাম জব্দ ও জেল জরিমানা করলেও কিছুদিন যেতে না যেতে আবারও বালুদস্যুরা বালু উত্তোলন শুরু করেন।

বালু উত্তোলনের এসব কাজে কারা জড়িত এ বিষয়ে এই প্রতিবেদক তদন্তে গেলে বেরিয়ে আসে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। জোরপূর্বক কৃষকের ফসলি জমি দখলে নিয়ে চারপাশে পলিথিন দিয়ে বালুর স্তুপ করে পাঁচ বছর ধরে চলছে এই ব্যবসা। আর বালু উত্তোলনের জন্য কৃষিজমি দখল করে পরিবেশবিরোধী এই কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন খায়রুল বশর নামে এক ব্যক্তি। বালু উত্তোলন ও পরিবেশবিরোধী কার্যকলাপের জন্য বেশ কয়েক বার জেলও হয়েছে তার।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মাতামুহুরী নদী থেকে অবৈধ এবং অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করেন এখানকার একটি স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র। যেখানে নেতৃত্ব দেন খায়রুল বশর। রাজনৈতিক তেমন কোনো পরিচয় না থাকলেও এলাকায় রয়েছে তার বেশ কয়েকটি গ্যাং। কেউ তার এই অপকর্মে বাধা প্রদান করলেই শুরু হয় নানা নির্যাতন।

তেমনই নির্যাতনের শিকার এক কৃষক জহির আহমদ। যার ওপর পড়েছে বালুদস্যুদের থাবা। অল্পদিনের জন্য ভাড়া নেয়ার কথা বলে বছরের পর বছর তার জমিতে নদী থেকে উত্তোলন করা বালু রেখে ব্যবসা করে আসছেন খায়রুল বশর ও তার নেতৃত্বাধীন বালুদস্যুরা। ফলে দীর্ঘদিন ধরে তিনি ফসল ফলাতে পারছেন না জমিতে, যার কারণে অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তিনি। আজ পাঁচ বছর ধরে তার ফসলি জমি দখলে নিয়ে বালুর ব্যবসা করছেন বালুদস্যুরা। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতেরও শরণাপন্ন হয়েছেন কৃষক জহির আহমদ। রায়ও পেয়েছেন কিন্তু প্রভাবশালী খায়রুল বশরের হাত থেকে উদ্ধার করতে পারেননি জমিটি।

সরেজমিনে এই প্রতিবেদক ওই এলাকায় গেলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কৃষক জহির আহমদ বলেন, ‘অনেক অভিযোগ দিয়েছি খায়রুল বশরের বিরুদ্ধে। কিন্তু সে কোনো অভিযোগের তোয়াক্কা করে না। গ্রাম আদালতে আমি রায় পেয়েছি কিন্তু সে তা মানে না। বিচারের দিন তারিখ ধার্য করে বিচারে বসে না। আমরা গরিব মানুষ চাষাবাদ করে খাই, আমাদের পেটে লাথি মারছে সে।’

বালি উত্তোলনের ফলে মাতামুহুরি নদীর তীরে ভাঙন দেখা দিয়েছে প্রায় বিশ ফুট। মুজিববর্ষের ঘর নদী তীরের ৩০ ফুটের ভেতরে অবস্থান করছে। বর্ষায় ওই এলাকার প্রায় অংশ বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। এ বারের বর্ষায় ভাঙনের মুখে পড়েছে নদীর ওই অংশ। পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে গতিপথও। এর ফলে মুজিববর্ষের শতাধিক ঘর পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মুজিববর্ষের ঘর পাওয়া সজরুন্নাজার বলেন, ‘নিজেদের ঘরবাড়ি নেই বলে শেখ হাসিনা একটা ঘর দিয়েছেন। নদীর তীরবর্তী এলাকায় নিয়মিত বালু উত্তোলন করে তীরের অনেক অংশ নদীতে ভেসে গেছে। আগামী বর্ষায় এই ঘর থাকবে কি না সন্দেহ। আমরা নদীর তীরে অন্যের চাষাবাদের জমিতে কাজকর্ম করে খাই। আমরা বালু উত্তোলনকারীদের কিছু বললেই আমাদের ওপর নানা নির্যাতন করে। প্রশাসনের লোকেরা অনেক অভিযান চালায় তারপরও তারা বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। আমরা এসবের স্থায়ী একটা সমাধান চাই।’

বালু উত্তোলনের ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে এই প্রতিনিধি ওই জায়গায় গেলে সাংবাদিক দেখে তেড়ে আসেন খায়রুল বশর। নানাভাবে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন তিনি।

তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ ও বালু উত্তোলনের কোনো অনুমতি আছে কি না জানতে চাইলে খায়রুল বশর বলেন, ‘আমার কোনো অনুমতি নেই। এসব আমার লাগে না।’

কৃষকের কৃষিজমি ও মুজিববর্ষের ঘর বালি উত্তোলনের কারণে নানাভাবে হুমকির মুখে থাকার পরও কেন এমন কাজ করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বসে সমাধান করবেন বলে সাংবাদিককে অনৈতিক সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব দেন।

এ বিষয়ে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘কিছুদিন আগে ওই এলাকায় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। কিছু ড্রেজার মেশিন ও একজনকে জেল জরিমানাও করেছেন। এখন আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম তারা সক্রিয় হয়েছে। আমি ছুটিতে আছি। শেষ করে এসে আমি নিজেই ওই এলাকায় অভিযানে যাব।’

এ বিভাগের আরো খবর