বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সরকারের স্বীকৃতি চান দারুশিল্পী নরেশ

  •    
  • ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ১১:৪৫

নরেশ কুমার সূত্রধর বলেন, ‘কাজের নেশা ও শৌখিনের কারণে এ  কাজগুলো ধরে রাখতে চাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। সুশীল সমাজের মানুষসহ শিক্ষার্থীরা একটু দেখুক এই চিত্রকর্মগুলো। তাদের মধ্যে অনুভূতি জেগে উঠুক ইতিহাস সম্পর্কে জানার।’  

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কালীবাড়ি ঘোষপাড়া মহল্লার দারুশিল্পী নরেশ কুমার সূত্রধর। পারিবারিক পেশার কারণেই কাঠ আর কাঠের যন্ত্রপাতির সঙ্গে পরিচয় ছোটবেলায়।

শৈশব থেকেই কাঠের ওপর নানা রকম অসাধারণ নকশা ও কাঠ খোদাই করে ফুটিয়ে তুলেছেন মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় নেতাদের ছবি, গ্রাম বাংলার আবহমান চিত্র, মানব সভ্যতা, বিভিন্ন মনীষী, মহামানব ও পশুপাখিসহ পাঁচ শতাধিক ভাস্কর্য। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে তার কাজের দক্ষতা, তবে চার যুগেও মেলেনি শিল্পীর রাষ্ট্রীয় সম্মান।

পুরোনো ভাঙা বাড়িজুড়ে নরেশের শিল্পকর্মগুলো পড়ে আছে অযত্ন-অবহেলায়। সেগুলো সংরক্ষণের জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তিনি।

প্রায় ৫০ বছর ধরে কাঠ খোদাই করে বিভিন্ন ভার্স্কয সৃষ্টি করে যাচ্ছেন বলে দাবি করেন ৭০ বছর বয়সী নরেশ কুমার সূত্রধর।

কাঠ খোদাই করে বিভিন্ন ভার্স্কয সৃষ্টি করছেন নরেশ কুমার সূত্রধর। ছবি: নিউজবাংলা

নরেশ কুমার সূত্রধর বলেন, ‘আমি যখন ছাত্রজীবনে, ওই সময় থেকেই আমার এই শিল্পী জীবনের একটি অনুভূতি ভেতরে জাগে। ওই সময় কাগজ কলম নিয়ে খেলতে খেলতে আঁকাআঁকি করতে করতে মনে হলো এ রূপগুলো কাঠের ওপরে কীভাবে দেয়া যায়। তখন যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করে কাঠের ওপরে খোদাইয়ের কাজ শুরু করলাম, শিখতে থাকলাম। পরে চর্চা করতে করতে গ্রাম বাংলার প্রকৃতি, বিভিন্ন ধরনের ছবি রূপদান শিখে ফেললাম। পরে এ কাজে ধীরে ধীরে আরও দক্ষ হয়ে উঠি।

‘পরে এই কাঠ দিয়ে দেশি-বিদেশি কবি, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, মনীষী মহামানব যেকোনো মানুষের ছবি ফুটিয়ে তুলতে পারি খুব সহজেই। এভাবে কাঠ দিয়ে এতো পরিমাণ শিল্প তৈরি করা হয়েছে যে, এখন আর আমার বাড়িতে রাখার মতো জায়গা নেই। কাজের নেশা ও শৌখিনের কারণে এ কাজগুলো ধরে রাখতে চাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। সুশীল সমাজের মানুষসহ শিক্ষার্থীরা একটু দেখুক এই চিত্রকর্মগুলো। তাদের মধ্যে অনুভূতি জেগে উঠুক, ইতিহাস সম্পর্কে জানার।’

নরেশ কুমার সূত্রধর জানান, ৭৫০টি শিল্পকর্ম নিয়ে ২০০৯ সালে নলিনীকান্ত ভট্টশালী আর্ট গ্যালারিতে তিনি প্রদর্শনী করেন। ঢাকার রেজাউল করিম নামে এক ব্যক্তি তাকে পৃষ্ঠপোষকতা করেন, তবে সেখানে আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ায় পরবর্তী সময়ে আর এসব প্রদর্শনী নিয়ে ভাবেননি তিনি। তাই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত করতে চান এ কাজ। শেষ জীবনে তার আক্ষেপ চার যুগেও মেলেনি শিল্পীর সম্মান। সংরক্ষণের অভাবে তার শিল্পকর্মগুলো অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে।

নরেশের স্ত্রী কল্পনা রানী বলেন, ‘৩০ বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়েছে। অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে দুই ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে সরকারি জমিতে ছোট্ট একটি পুরোনো বাড়িতে থাকি। আমার স্বামী সংসারের দিকে তেমন একটা নজর দেন না, শিল্প নিয়েই থাকেন। এক সময়ে এসব কাজ দেখে সময়ের অপচয় বলে মনে হতো, কিন্তু এখন তাকে শিল্পী হিসেবে মনে করি। এখন আমার অনেক গর্ব হয়। তার এই শিল্পকর্ম দেখে ইতিহাস সম্পর্কে নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা অনেক কিছুই জানতে পারবে। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন ব্যাধিতে আক্রান্ত। শেষ জীবনে সরকার যদি তাকে স্বীকৃতি দিতো, একটু যদি সম্মান পেত ভালো হতো।’

নরেশ কুমার সূত্রধরের তৈরি করা কয়েকটি শিল্পকর্ম। ছবি: নিউজবাংলা

এ বিষয়ে নরেশের বড় ছেলে মিশন কুমার সূত্রধর বলেন, ‘বাবা ছোটবেলা থেকেই অসংখ্য চিত্রকর্ম বানিয়েছেন। তার জীবনের অধিকাংশ সময় চলে গেছে এ কাজে। বাড়িতে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় চিত্রকর্মগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা এগুলো সংরক্ষণের অনুরোধ জানাই।’

নরেশের অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া ছোট মেয়ে লীলা রানী সূত্রধর বলে, ‘আমার বাবা একজন চিত্রশিল্পী। বর্তমানে আমার বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বাবা অসুস্থ হওয়ার পরও কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বিভিন্ন মনীষীদের ছবি কাঠের ওপর অসাধারণভাবে তৈরি করেছেন। তাই আমি চাই বাবা যেন শিল্পীর স্বীকৃতি পায়। তাই প্রধানমন্ত্রী কাছে অনুরোধ জানাই বাবাকে যেন শিল্পীর স্বীকৃতি দেয়া হয়।’

কাঠের ওপরে চিত্রশিল্প দেখতে আসা হাসার আলী বলেন, ‘তার প্রতিটি চিত্রকর্ম অনন্য অসাধারণ নকশা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। মনে হয় কোনো জীবন্ত মানুষ বা প্রাণীর ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন। তাছাড়াও তিনি কাঠের ওপরে ইতিহাস, সংস্কৃতি, গ্রামবাংলা প্রতিচ্ছবি সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। এই শিল্পকর্মগুলো যদি মিউজিয়ামে সংরক্ষণ করে প্রদর্শনী করা হতো তাহলে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা অনেক কিছু জানতে পারতো।’

এদিকে ৭০ বছরের প্রতিভাবান দারুশিল্পী নরেশ সূত্রধরের শিল্পকর্মগুলো সংরক্ষণ করার জন্য সরকারের কাছে সুদৃষ্টি কামনা করেন এলাকাবাসী।

এ বিভাগের আরো খবর