বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চিতাটিকে বিষটোপ নাকি পিটিয়ে হত্যা?

  • হোসেন রায়হান, পঞ্চগড়   
  • ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ১৮:৪৭

ঢাকা বন ভবনের বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক অসীম মল্লিক বলেন, ‘বাঘটিকে হত্যা করা হয়েছে এবং এর সঙ্গে অনেক মানুষ জড়িত। এখন বিষ টোপের কারণে নাকি মানুষের আঘাতে বাঘটির মৃত্যু হয়েছে এটা পরে নিশ্চিত করে বলা যাবে।’

পঞ্চগড়ের আটোয়ারী সীমান্তে নাগর নদীর তীরে চিতা বাঘের মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে- বাঘটি বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে, নাকি পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে?

চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় অধিকতর তদন্তে ঢাকা থেকে বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন ইউনিটের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। দলের প্রধান ও বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক অসীম মল্লিক প্রত্যক্ষদর্শীসহ স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা প্রয়োজনীয় নমুনাও সংগ্রহ করেছেন। দলের অন্য দুই সদস্য হলেন- একই ইউনিটের বন্যপ্রাণি স্কাউটস সঞ্জয় বন্ধ ও জসিম শেখ।

শনিবার বিকেলে আটোয়ারী উপজেলার তড়িয়া ইউনিয়নের দাড়খোর সীমান্তে নাগর নদী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাঘের মৃত্যু নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে নানা রকম গুঞ্জন চলছে। কেউই সঠিক কোনো তথ্য দিচ্ছেন না।

বাঘের মরদেহ উদ্ধারের পর স্থানীয়দের একেক জন একেক রকম কথা বলছেন। কেউ বলছেন, বাঘটি আগে থেকেই দুর্বল ও রোগাক্রান্ত ছিল। সীমান্তের নাগর নদীতে বাঘটি দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা লাঠিসোটা ও জাল দিয়ে সেটিকে পাকড়াও করে। নদী থেকে উদ্ধারের পর বাঘটিকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।

আবার কেউ বলছেন, রোববার স্থানীয় আলম ইসলামের একটি গরু হিংস্র কোনো প্রাণীর আক্রমণে মারা যায়। এই ক্ষোভে আলম ইসলামের ছোট ছেলে মৃত গরুর মধ্যে বিষ (ফুরাডন) মিশিয়ে রাখে। আর সেই বিষ মেশানো গরুর মাংস খেয়ে বৃহস্পতিবার বাঘটি অসুস্থ হয়ে নদীর ধারে অবস্থান করছিল। পরে স্থানীয়রা জাল দিয়ে বাঘটি ধরে ফেলে।

আলম ইসলামের স্ত্রী ময়না বেগম বলেন, ‘রোববার আমার একটি গরু মারা যায়। গরুটিকে বাঘ নাকি শেয়াল আক্রমণ করেছিল জানি না। তবে আমার ছোট ছেলে বলেছিল- মা, আমাদের এত বড় ক্ষতি হলো, আমি তাকেও মেরে ফেলব।

‘এরপর সে গরুর মধ্যে অল্প করে ফুরাডন বিষ ঢুকিয়ে দিয়েছে বলে শুনেছি। এখন বাঘটি বিষ মেশানো সেই গরুর মাংস খেয়ে মারা গেছে, নাকি ঠাণ্ডায় অসুস্থ বা অন্য কোনো কারণে মারা গেছে আমি জানি না।’

স্থানীয় কৃষক আব্দুল জব্বার বলেন, ‘বাঘটি দেখতে পেয়ে লোকজন চেঁচামেচি শুরু করে। তাদের চিৎকার শুনে আমি কাছে যাই। দেখি যে বাঘটি বসে আছে। আমরা কাছে গেলেও সেটি ঠিকমতো নড়াচড়া করতে পারছিল না।

‘আমরা একটি জাল দিয়ে বাঘটিকে ঢেকে দেই। তখন সেটি নড়াচড়া শুরু করলে একটি লাঠি দিয়ে ভালো করে জালে পেঁচিয়ে ধরি। তখন বাঘটি মনে হয় মারা গিয়ে নদীতে ডুবে যাচ্ছিল। পরে নদী থেকে ডাঙায় নিয়ে একটি বাঁশ দিয়ে বাঘটির চার পা বেঁধে সামনে নিয়ে আসি।’

ঢাকা বন ভবনের বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক অসীম মল্লিক বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে বাঘটির মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে আমরা ঘটনাস্থলে আসি। প্রত্যক্ষদর্শী ময়ন উদ্দিনসহ স্থানীয় অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। এদের কেউ কেউ বলেছেন যে মারা যাওয়া গরুর মধ্যে বিষটোপ দেয়ায় সেই গরুর মাংস খেয়ে বাঘটি অসুস্থ হয়েছে।

‘আবার কেউ বলছেন, বাঘটিকে উদ্ধারের সময় লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। হয়তো মাথায় আঘাত লেগে পানিতে তলিয়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে। এরপর বাঘটিকে জাল দিয়ে পেঁচিয়ে উপরে তুলে আনা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে এখানে একটি চিতা বাঘকে হত্যা করা হয়েছে এবং এর সঙ্গে অনেক মানুষ জড়িত। আমরা বিশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বাঘের শরীর এবং উদ্ধার কাজে ব্যবহৃত জাল থেকে কিছু নমুনা সংগ্রহ করেছি।

‘এখন বিষ টোপের কারণে নাকি মানুষের আঘাতে বাঘটির মৃত্যু হয়েছে এটা আরও পরে নিশ্চিত করে বলা যাবে।’

শুক্রবার সকালে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার দাড়খোর সীমান্ত এলাকায় নাগর নদীর পাড় থেকে চিতা বাঘটির মরদেহ উদ্ধার করে বন বিভাগের লোকজন। আটোয়ারী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে প্রাথমিক ময়নাতদন্ত শেষে বাঘটির মরদেহ টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু সেতু আঞ্চলিক জাদুঘরে পাঠানো হয়।

এ বিভাগের আরো খবর