বাংলাদেশের ওপারে মিয়ানমার সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলি ও বোমা বর্ষণ চলছে। শনিবার রাত ৩টা থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তে থেমে থেমে গুলি ও বোমাবর্ষণ হচ্ছে। বেশ কয়েকটি গুলি মর্টার শেল এসে পড়েছে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে। এতে কোনাপাড়ার কয়েকটি ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জান্তা বাহিনী ও আরাকান আর্মির চলমান সংঘাত-সংঘর্ষে এপারে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তবাসী আতঙ্ক-উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ অবস্থানে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সীমান্তের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অঘোষিত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ত্রিরতন চাকমা বলেন, ‘সীমান্তে গোলাগুলি ও অস্থিরতা অব্যাহত থাকায় পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অঘোষিত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সীমান্ত পরিস্থিতি এরকম থমথমে থাকলে সোমবারও স্কুলগুলো বন্ধ থাকতে পারে।’
বান্দরবান জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ ফরিদুল আলম হোসাইনী বলেন, ‘সীমান্তে গোলাগুলি চলছে। এ কারণে মিশকাতুন্নবী মাদ্রাসায় রোববার কোনো শিক্ষার্থী না আসায় সেটি বন্ধ রয়েছে। অন্য স্কুলগুলোতে স্বাভাবিক কার্যক্রম চলমান। তবে শিক্ষার্থী খুবই কম। সীমান্তে তিনটি স্কুল রয়েছে। সেখানে রাস্তা বন্ধ থাকায় তুমব্রু থেকে শিক্ষার্থীরা আসতে পারেনি।’
স্থানীয় বাসিন্দাদের দেয়া তথ্যমতে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলিতে দুই বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। তারা হলেন প্রবীর চন্দ্র ধর ও একজন নারী (নাম-পরিচয় জানা যায়নি)। তারা দুজনই হিন্দুপাড়ার বাসিন্দা।
গোলাগুলি ও সংঘর্ষে প্রাণহানির শঙ্কায় মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ-বিজিপির কয়েক সদস্য বাংলাদেশের ভূখণ্ডে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের বাংলাদেশ সীমান্তের বান্দরবানের তুমব্রু বিজিবি ক্যাম্পে রাখা হয়েছে।
ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে সামরিক জান্তা বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির তুমুল লড়াই চলছে। রোববার সকাল থেকে লাগাতার চলছে গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপ।
গুলির শিসা ও রকেট লাঞ্চার উড়ে এসে পড়ে আহত হয়েছেন দুই বাংলাদেশি। লাগাতার গোলাগুলি, মর্টারশেল নিক্ষেপ ও রকেট লাঞ্চার বিষ্ফোরণের বিকট শব্দে কেঁপে কেঁপে উঠছে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তবর্তী এলাকা।
এতে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী তুমব্রু, বাইশফাড়ি, ভাজাবনিয়া সীমান্ত পয়েন্টে চরম আতঙ্কে দিন কাটছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। এর মধ্যে হিন্দুপাড়া ও কোনারপাড়া থেকে লোকজন পালিয়ে গেছে।
এদিকে আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘর্ষে টিকতে না পেরে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ বিজিপির ১৪ জনের বেশি সদস্য বাংলাদেশের ভূখণ্ডে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের ধুমধুম বিজিবি ক্যাম্পে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। সীমান্ত পথে আরও ৩০ জনেরও বেশি বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে ঢোকার জন্য অবস্থান নিয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
ঘুমধুম ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, মিয়ানমারের বিজিপি সদস্যরা তুমব্রু সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশ আশ্রয় নিয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সীমান্তে লাগুয়া স্কুলগুলো আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে প্রশাসন।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, ঝুকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরকে বলা হয়েছে। ঘুমধুম-তুমব্রুর বেশ কয়েকটি সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিজিবির পাশাপাশি প্রশাসন তৎপর রয়েছে।
এদিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি নিরাপত্তা বাড়িয়েছে সীমান্তে। নিরাপত্তা চৌকিগুলোতে সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি।
বিজিবির লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মাসরুকি বলেন, ‘মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ক্যাম্প দখল নিয়ে আরাকান আর্মি ও সামরিক জান্তা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষ চলে আসছিল। আজ (রোববার) সকাল থেকে এ সংঘর্ষ ব্যাপক আকার ধারণ করে।
‘এক পর্যায়ে সামরিক জান্তা বাহিনীর কিছু সদস্য ক্যাম্প ছেড়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু বিজিবি ক্যাম্পে আশ্রয় নেন। বিজিবি তাদের নিরাপদে আশ্রয় দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের স্বাধীনতাকামী সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে সে দেশের জান্তা সরকারের সেনাবাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ চলছে। এ সংঘর্ষের জের ধরে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তে উত্তেজনা চলছে।