অমর একুশে বইমেলা-২০২৪-এর দ্বিতীয় দিন শুক্রবার মেলা শুরু হয় সকাল ১১টায় এবং চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। ছুটির দিন হওয়ায় এদিন বইমেলায় ছিল শিশুপ্রহর। মেলায় নতুন বই এসেছে ৩১টি।
বিকেল চারটায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ: মহাকবি আলাওল’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাইমন জাকারিয়া। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মিল্টন বিশ্বাস এবং মোহাম্মদ শেখ সাদী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মো. আবুল কাসেম।
প্রাবন্ধিক বলেন, বাঙালি ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের অবাঙালি গবেষকদের বিচারে খ্রিষ্টীয় সপ্তদশ শতকের কবি আলাওল মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আখ্যান কবি হিসেবে স্বীকৃত। আলাওল রচিত পদ্মাবতী, সিকান্দরনামা, তোহ্ফা, রাগতালনামা ও পদাবলী এবং কাজী দৌলতের সতী-ময়না লোর-চন্দ্রাণী’র শেষাংশ হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপির সাহায্যে সম্পাদিত গ্রন্থাকারে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি বলেন, নতুন নতুন তথ্যের আলোকে মহাকবি আলাওলকে যে তত্ত্বীয় পরিসরে গবেষকগণ উপস্থাপন করছেন তাতে তার সাহিত্যের গভীরতা, দূরদৃষ্টি-সম্পন্নতা এবং মহাকাল স্পর্শের ক্ষমতা স্পষ্ট হয়।
আলোচকরা বলেন, মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টিকর্ম ‘ছয়ফুলমুলক-বদিয়ঃজ্জামান’। এই কাব্যের পরিচয় কেবল আখ্যানকাব্য বা প্রণয়োপাখ্যানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এই কাহিনি কিচ্ছা আকারে যাত্রাপালায়ও পরিবেশিত হয়েছে। কাজেই এই পুঁথির আবেদন অত্যন্ত ব্যাপক ও বিস্তৃত। মহাকবি আলাওল তার ভাষার সৌকর্য এবং পাণ্ডিত্যের কারণে মধ্যযুগের অন্যান্য কবিদের থেকে স্বকীয়। প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় সাহিত্যকর্মের পাঠোদ্ধার, সম্পাদনা বা আধুনিক বাংলা ভাষার অনুবাদ অত্যন্ত শ্রমসাধ্য কাজ। এ ধরনের সাহিত্য পাঠোদ্ধার করতে হলে হস্তলিখিত মূল পাণ্ডুলিপি বা পুথির ওপরই নির্ভর করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মো. আবুল কাসেম বলেন, মধ্যযুগে প্রচলিত বিশ্বাস ছিল যে বাংলা ভাষা মুসলমানের ভাষা নয়, হিন্দুর ভাষা। তথাপি মধ্যযুগের মুসলমান কবিগণ বাংলা ভাষায় প্রচুর সাহিতকর্ম রচনা করেছেন। মহাকবি আলাওলও এর ব্যতিক্রম নন। প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্মের একাধিক পাঠ থেকে লেখকের অভিপ্রেত পাঠটি পুনরুদ্ধার করাই পাণ্ডুলিপি বা পুথি সম্পাদনার মূল উদ্দেশ্য। এই কষ্ঠসাধ্য কাজে তরুণ গবেষকদের উৎসাহিত করতে হলে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রাচীন ও দুষ্প্রাপ্য পুথি এবং পাণ্ডুলিপি সহজলভ্য করতে হবে।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি রুবী রহমান, আসাদ মান্নান এবং মাহবুব সাদিক। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী লায়লা আফরোজ, মুস্তাফা ওয়ালিদ এবং মজুমদার বিপ্লব।
এ ছাড়া ছিল ড. আবুল কালাম আজাদ-এর পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ লোকসংগীত পরিষদ’ এবং ড. মো. শাহাদাৎ হোসেন-এর পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদ’-এর পরিবেশনা। এতে সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী তিমির নন্দী, মহিউজ্জামান চৌধুরী, প্রিয়াংকা গোপ, জুলি শারমিলি এবং মানিক রহমান।
শনিবারে সময়সূচি
শনিবার অমর একুশে বইমেলার ৩য় দিন। মেলা শুরু হবে সকাল এগারোটায়, চলবে রাত নয়টা পর্যন্ত। সকাল এগারোটা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত মেলায় থাকবে শিশুপ্রহর।