ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত শ্রমিকরা ড. ইউনূসের নামে মামলা করেছে উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে না সরকার।
ড. ইউনূসের মামলার বিষয়ে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের নামে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের করা মামলার রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিল শুনানির জন্য গত ২৮ জানুয়ারি গ্রহণ করে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল। ওই চারজনের জামিনও বহাল রাখে আদালত।
পরের দিন ২৯ জানুয়ারি গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের প্রায় ২৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলায় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিটে অনুমোদন দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এমন বাস্তবতায় ড. ইউনূসের নামে দুই মামলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি লিখেন বিশ্বের নেতৃস্থানীয় ২৪২ জন ব্যক্তি। সোমবার প্রকাশিত ওই চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে শতাধিক নোবেলজয়ী রয়েছেন।
চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা ড. ইউনূসের নামে করা দুই মামলা পর্যালোচনার জন্য বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর প্রস্তাব দেন।
ওই চিঠি প্রকাশ হওয়ার তিন দিন পর ড. ইউনূসের মামলা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
এতে মামলার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আজকে কথা হচ্ছে, বলা হচ্ছে যে, সরকার তাকে (ড. ইউনূস) হ্যারাস (হয়রানি) করার জন্য এই মামলাটা করেছে এবং আরেকটা কথা সঙ্গে সঙ্গে বলা হচ্ছে। সেটা হচ্ছে যে, শ্রমিকরা মামলা করে নাই।
‘এই মামলার প্রেক্ষিত হচ্ছে...এটাও স্বীকৃত। ২০১৭ সালে শ্রমিকরা বলে আসছে যে, তাদের অধিকার ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে। তাদের ন্যায় প্রাপ্যতা দেয়া হচ্ছে না এবং এই ন্যায় প্রাপ্যতা এবং তাদের ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে, এই অভিযোগ তারা কিন্তু এক শর অধিক মামলা শ্রম আদালতে করে।’
তিনি বলেন, ‘এটাও স্বীকৃত যে, এই এক শর অধিক মামলা করার পরে শ্রম অধিদপ্তরের কাছে প্রতীয়মান হয় যে, এখানে শ্রমিকদের অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে এবং সে কারণেই কিন্তু ইন্সপেকশনটা (পরিদর্শন) করা হয়। এরপরেও আরেকটা কথা আছে। এই যে শ্রমিকরা মামলা করলেন, এই মামলা করার কিছুদিন পরে এই মামলা তারা প্রত্যাহার করে।’
ড. ইউনূসের মামলায় সরকারের হাত নেই জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘…এই যে শ্রমিকের অধিকার থেকে শ্রমিকরা বঞ্চিত হচ্ছিল এবং শ্রমিকের প্রাপ্যতা থেকে ন্যায্য প্রাপ্যতা তারা পাচ্ছিল না, এটা কিন্তু সকল পক্ষ স্বীকার করেছে। এখানে সরকারের কিন্তু কোনো হাত নাই।’
ড. ইউনূসের মামলার কিছু নথিপত্রের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমার কথা হচ্ছে এসব অকাট্য প্রমাণ থাকার পরও বিদেশে ছড়ানো হচ্ছে যে, তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ, সেগুলি মিথ্যা এবং বলা হচ্ছে যে, আমরা হয়রানির জন্য এটা করছি। দুটো কথাই। সরকার ড. ইউনূসকে হয়রানি করার জন্য কিছু করছে না। সরকার ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে কোনো মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করছে না।
‘যে মামলা হয়েছে, সেটা শ্রমিকরা করেছিল। তারপর শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত যেই অধিদপ্তর (কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর) আছে, সেই ডিপার্টমেন্ট তার বিরুদ্ধে একটা মামলা করেছে।’