বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নদীভাঙন ঠেকাতে গিয়ে আরও বাড়িয়ে দিলেন ঠিকাদার

  • প্রতিনিধি, মাগুরা   
  • ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০

কান্নাজড়িত কণ্ঠে ভুক্তভোগীরা বলেন, ‘চৌদ্দ পুরুষের বসতভিটা চোখের সামনে নদীর পেটে চলে যাচ্ছে, কিছুই করতে পারছি না। আমরা বারবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসনের লোকজনকে জানিয়েছি। কিন্তু কেউ বিষয়টি নিয়ে তখন মাথা ঘামায়নি।’

বসতি এলাকায় নদীর ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ দিয়ে নদীর পাড় ভরাট করার দায়িত্ব নিয়েছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু জিও ব্যাগ ভরতে নদীর ওই স্থান থেকেই বালু উত্তোলন করে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে হিতে বিপরীত হয়ে এখন দুর্দশা আরও বেড়েছে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার দারিয়াপুর ইউনিয়নের গঙ্গারাম খালী গ্রামের গড়াই নদী তীরবর্তী মালো ও বিশ্বাস পাড়ার মানুষের।

ইতোমধ্যে ওই এলাকার অন্তত ১৫টি পরিবারের বাড়িঘর, গাছপালা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছে আরও অর্ধশতাধিক পরিবার। এ ঘটনায় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছে এলাকাবাসী।

ভুক্তভোগীরা জানান, নদীভাঙন রোধে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আলিয়ার রহমান ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নদী শাসন প্রকল্পের আওতায় জিও ব্যাগ দিয়ে ওই এলাকার গড়াই নদীর পাড় ভরাটের দায়িত্ব নেয়। এরপর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত বসতি এলাকার নিচ থেকেই কিছুদিন আগে বালু উত্তোলন করে। সে সময় নদীর অন্য স্থান থেকে বালু উত্তোলনের জন্য তাদের বারবার বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা অনুরোধের তোয়াক্কা না করে সেখান থেকেই বালু উত্তোলন করে।

গত কয়েক দিন ধরে এলাকার বিভিন্ন বাড়ির ঘর ও উঠানে ফাটল দেখা দেয়। শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) থেকে একেকটা করে ঘর, গাছপালা নদীর মধ্যে ভেঙে পড়তে শুরু করেছে, নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে কৃষি জমিও। এখন এভাবে ভাঙন চলতে থাকলে বর্ষা মৌসুমে পুরো গ্রাম ভেঙে নদীর অতলে হারিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা গ্রামবাসীর।

সরেজমিনে ওই এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মালো পাড়া ও বিশ্বাস পাড়ার বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, দিলীপ, সুকুমার, সুবোধ, মধুসূদন, নারায়ণ, সঞ্জিত, বৈকুণ্ঠ, নিখিল, সরজিৎ ও নীরোদের বসতবাড়ি ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়েছে। এ ছাড়া ফাটল ধরেছে অমরেশ, বিনয়, উজ্জ্বল, কালাচাঁদ, অমল, রবি, শ্যামল, সুবোল, তপন, গোপাল, কৃষ্ণ, অসিত, মনোজিৎ, বিশ্বজিৎ, শৈলেন, সাধন, অচিন্ত্য, সুভাষ, রমেশ, শ্রীকান্ত, আনন্দ, হারাণসহ অর্ধশতাধিক পরিবারের বাড়িঘর, গাছপালা ও চাষের জমিতে। চরম আতঙ্ক নিয়ে রাতে ঘুমাতে যাচ্ছে পরিবারগুলো।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিউজবাংলাকে তারা বলেন, ‘চৌদ্দ পুরুষের বসতভিটা চোখের সামনে নদীর পেটে চলে যাচ্ছে, কিছুই করতে পারছি না। আমরা বারবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসনের লোকজনকে জানিয়েছি। কিন্তু কেউ বিষয়টি নিয়ে তখন মাথা ঘামায়নি।’

সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান তারা। তবে ভাঙন রোধে এখনও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এরশাদ বলেন, ‘আমরা বাঁধের কাজে ব্যবহারের জন্য বালু উত্তোলন করেছি। কিন্তু আমাদের ধারণা ছিল না যে বিষয়টি এমন হবে, মাটি ধসে পড়বে। পরবর্তীতে বিষয়টি আমরা বিবেচনায় রেখেছি।’

শ্রীপুরের ইউএনও মমতাজ মহল বলেন, ‘ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ দিয়ে ওই নদীর তীর ভরাট করতে ওখান থেকেই বালু উত্তোলন করা হচ্ছিল। সে সময় বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে তারা ছাড়া পেয়ে আবার এসে সেখান থেকেই বালু উত্তোলন করেছে। ফলে স্থানটিতে ফাটল ধরেছে। বিষয়টি জানার পর আমরা এসে সেখানকার ড্রেজার মেশিন তুলে দিয়েছি। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের সার্বিক সহযোগিতার চেষ্টা চলছে।’

এ বিষয়ে মাগুরা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান সুজন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। সেখানে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন করার কারণে এই ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। নতুন করে জিও ব্যাগ দিয়ে এলাকাটি বাঁধা হবে। আর যারা ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন, তাদের ব্যাপারে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।’

এ বিভাগের আরো খবর