স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে নববধু সুফিয়াকে। আর প্রচার করে যে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে। অবশেষে দীর্ঘ পাঁচ মাসের মাথায় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বেরিয়ে এলো প্রকৃত ঘটনা।
নিহত সুফিয়ার স্বামী শামসুল আলমকে মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তারের পর বুধবার আটোয়ারী থানা পুলিশ আদালতে হাজির করে। আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠায়
পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার সুখ্যাতি-সৌলপাড়া গ্রামে স্বামীর বাড়িতে বিয়ের ৩৪ দিনের মাথায় সুফিয়া আক্তারের মৃত্যু হয়। বমি ও পাতলা পায়খানায় তার মৃত্যু হয় বলে সে সময় প্রচার করেন স্বামী শামসুল আলমসহ শ্বশুরবাড়ির অন্যান্য লোকজন।
নিহত সুফিয়া আক্তার পঞ্চগড় সদর উপজেলার মীরগড় মোমিনপাড়া এলাকার দিনমজুর মো. জাফরুল্লাহর মেয়ে। আর গ্রেপ্তার শামসুল আলম আটোয়ারী উপজেলার তোড়িয়া ইউনিয়নের সুখ্যাতি-সৌলপাড়া গ্রামের ছুটু মোহাম্মেদের ছেলে।
এজাহার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৩ জুলাই শামসুল আলমের সঙ্গে সুফিয়া আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই নানা কারণে নির্যাতন শুরু হয় তার ওপর। এক পর্যায়ে সুফিয়া বাবার বাড়িতে চলে যান। পরে পারিবারিক সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে ৩০ জুলাই স্বামীর বাড়ির লোকজন সুফিয়াকে বাবার বাড়ি থেকে নিয়ে যান।
৬ আগস্ট গভীর রাতে সুফিয়া অসুস্থ বলে স্বামীর বাড়ির লোকজন তার বাবার বাড়িতে খবর পাঠায়। পরদিন সকালে বাবার বাড়ির লোকজন তাকে দেখতে যাওয়ার পথে খবর পান সুফিয়া বমি-পাতলা পায়খানায় অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন।
বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হলে সুফিয়ার বাবার বাড়ির লোকজন আটোয়ারী থানা পুলিশকে জানান। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে স্বামীর বাড়ি থেকে মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ।
এরপর ১৪ আগস্ট সুফিয়ার বাবা পঞ্চগড় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে জামাতা শামসুল আলমসহ ১১ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। পরে আদালত ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেয়।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সুফিয়া আক্তারকে হত্যা করা হয়েছে। এরপর ১৫ জানুয়ারি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনসহ প্রতিবেদন দাখিল করেন আটোয়ারী থানার উপ-পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আদালত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে করা মামলাটি এজাহার হিসেবে নেয়ার জন্য আটোয়ারী থানার ওসিকে নির্দেশ দেয়।
বুধবার বিকেলে আটোয়ারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা জানান, সোমবার রাতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করতে আদালতের আদেশ পাওয়া যায়। এরপর অভিযান চালিয়ে প্রধান অভিযুক্ত শামসুল আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।