মিয়ানমারে জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহী আরাকান আর্মির মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে। এতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকা।
সীমান্তের এপারে এখন মানুষের ঘুম ভাঙছে গোলাবারুদের বিকট শব্দে। এতে সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত মানুষের মাঝে বিরাজ করছে আতঙ্ক।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সীমান্ত ঘেঁষা বান্দরবানের আটটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। তার মধ্যে পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দুটি মাদ্রাসা।
তবে কক্সবাজার জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় আপাতত কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়নি।
সোমবার দুপুর ১২টায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম-তুমব্রু পশ্চিম কূল এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দা বাহাদুল্লাহর বাড়ির উঠোনে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টারশেলের বিস্ফোরিত একটি অংশ এসে পড়ে।
বাহাদুল্লাহর স্ত্রী খালেদা বেগম জানান, বাড়ির আঙ্গিনায় ছোট চম্পা ফুলের গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে একটা বিকট শব্দ হয়ে মর্টারশেলের বিস্ফোরিত অংশ এসে পড়ে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।
ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে সোমবার সকাল থেকেই গোলাগুলির শব্দ শোনা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আজিজ।
তিনি বলেন, ‘মাঝখানে কিছুদিন গোলাগুলি বন্ধ ছিল। শনিবার থেকে আবারও মিয়ানমারের অভ্যন্তরে থেমে থেমে গোলাগুলি ও বোমার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। এতে এপারে কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও গোলা ও বোমার আওয়াজে এলাকার মানুষ সারাক্ষণ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।’
ঘুমধুম ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘শনিবার থেকেই মিয়ানমারের ভেতরে থেমে থেমে গোলাগুলি ও বোমার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। আজ (সোমবার) সকাল থেকে আবারও ৩৩ নম্বর পিলার সীমানার ঘুমধুম ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড তুমব্রু পশ্চিম কূলের ওপারে মিয়ানমারে থেমে থেমে গোলাগুলির বিকট আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।’
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ত্রিরতন চাকমা জানান, সোমবার সকাল থেকে মিয়ানমারের ভেতরে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা করে ধুমধুম সীমান্ত এলাকায় বাইশ ফাঁড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাজা বনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম কূল তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় একদিন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বান্দরবান জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ ফরিদুল আলম হোসাইনী বলেন, ‘সীমান্ত পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়, উত্তর ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয় ও মিশকাতুন্নবী মাদ্রাসাসহ আরও পাঁ৭টিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো একেবারেই সীমান্ত ঘেঁষা।’
তবে মিয়ানমারের সঙ্গে কক্সবাজার সীমান্তের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়নি বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) তাপ্তি চাকমা। তিনি বললেন, ‘জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনও বন্ধ ঘোষণা করা হয়নি।’
ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু হেডম্যান পাড়া চাকমাপল্লীর প্রধান কানন চাকমা বলেন, ‘মিয়ানমারের ভেতরে চলমান সংঘাত-সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় আমরা খুবই ভয়ে আছি। এখানে ২৭টি পরিবারের বসবাস। সবাই আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।’
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, ‘ওপারে অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের কারণে এপারে গুলির আওয়াজে স্থানীয়দের কিছু সমস্যা হচ্ছে। এগুলো আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। সীমান্তে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ গোয়েন্দা সংস্থা এবং সংশ্লিষ্টরা তৎপর রয়েছে, যাতে আমাদের এপাশে কোনো সমস্যা না হয়।’
ইউএনও বলেন, ‘সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে কোনো খারাপ রিপোর্ট আসেনি। আমরা প্রতিনিয়ত খোঁজখবর নিচ্ছি। কোনো সমস্যা হলে চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে মানুষকে সরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে। এরকম প্রস্তুতি আমাদের আছে।’