বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কর্ণফুলীতে পুলিশের সোর্স-ক্যাশিয়ার পরিচয়ে ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজি!

  • রতন কান্তি দেবাশীষ, চট্টগ্রাম   
  • ২৯ জানুয়ারি, ২০২৪ ০৯:০২

স্থানীয়রা বলছেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্যাশিয়ার ও সোর্স পরিচয়ধারী চাঁদাবাজরাই নিয়ন্ত্রণ করছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের মাদকের কারবার, জুয়ার আড্ডা, দখলবাজি, চাঁদাবাজিসহ অপরাধের নানা ক্ষেত্র। এর ফলে অপরাধ প্রবণতাসহ মাদক আর জুয়ার আসর বন্ধ হচ্ছে না।

কখনও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ক্যাশিয়ার, কখনও নৌপুলিশ, কখনও থানা পুলিশ, কখনও কোস্টগার্ডের ক্যাশিয়ার, কখনও আবার ফাঁড়ি পুলিশের ক্যাশিয়ার। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার এমন নানা পরিচয় দিয়ে বেড়ায় ওরা। আর এসব ভিন্ন ভিন্ন পরিচয়ে ওরা চট্টগ্রাম মহানগরীর কর্ণফুলী থানার বিভিন্ন স্পটে চাঁদাবাজি করছে।

সংশ্লিষ্ট এলাকার ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এমন নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এই চাঁদাবাজ চক্রের কেউ কেউ আবার নিজেদের ডিবি পুলিশ ও নৌ-পুলিশের সোর্স হিসেবেও পরিচয় দিয়ে থাকে।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ থাকার পরিচয় দিয়ে ওরা কর্ণফুলীর আনাচে-কানাচে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। পুলিশের ক্যাশিয়ার আর সোর্স নামধারী এসব চাঁদাবাজের অত্যাচারে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ। তারা না পারছেন স্থানীয় সংসদ সদস্যকে এসব কষ্টের কথা জানাতে, না পারছেন সহ্য করতে। কারণ কথায় কথায় এরা পুলিশের ভয় দেখায়।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ, নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড ও থানা পুলিশ অবশ্য বলছে ভিন্ন কথা। এসব বাহিনীর সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা বলছেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ক্যাশিয়ার বা সোর্স পরিচয়ে যারাই অপকর্ম করুক না কেন তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।

তবে বাস্তবে মাঠ পর্যায়ে তাদের সেই কথার প্রতিফলন নেই। মাদকের স্পট, জুয়ার আসরসহ নদী সংলগ্ন ঘাট থেকে প্রতি মাসে চাঁদা আদায় করছে এসব কথিত সোর্স-ক্যাশিয়ার।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কর্ণফুলী উপজেলার নৌ ঘাট ও ক্রাইম স্পটগুলোতে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে বছরের পর বছর প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করছেন কালাম মেম্বার নামে এক ব্যক্তি। সাদা রঙের প্রাইভেট কারে চড়ে ঘাটে ঘাটে তার চাঁদাবাজি চলছে। এভাবে মাসে লাখ লাখ টাকা আদায় করছেন এই চাঁদাবাজ।

কালাম মেম্বারের ডান হাত হয়ে কাজ করেন আরও তিনজন। তারা হলেন-বিলাই জাহাঙ্গীর, এরশাদ ও নুরুল আবছার মাঝি। এই তিনজন উপ-সোর্স বা উপ-ক্যাশিয়ার পরিচয়ে চাঁদা তোলেন।

অনেক সময় এরা এলিট ফোর্সের সোর্স বা ক্যাশিয়ার পরিচয় দিয়েও সুবিধা আদায় করেন বলে অভিযোগ। আর চাঁদা হিসেবে তোলা টাকার একটা অংশ কালাম মেম্বার প্রতি মাসে সঠিক সময়ে উপর মহলে পৌঁছে দেন বলেও প্রচার রয়েছে।

অপরদিকে কর্ণফুলী এলাকায় থানা পুলিশের সোর্স ও ক্যাশিয়ার পরিচয়ে মাসে মাসে চাঁদা তোলেন আব্দু সবুর নামে এক ব্যক্তি। আবার সবুরের হয়ে কাজ করেন তার ছেলে ও নাতি শাকিল। তারাও প্রভাব কাটিয়ে ঘাটে ঘাটে ও ক্রাইম স্পট থেকে চাঁদা আদায় করেন।

এমনকি এই সবুর নিজেকে একবার শিকলবাহা পুলিশ ফাঁড়ি ও আবার শাহমীরপুর পুলিশ ফাঁড়ির ক্যাশিয়ার হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন। শুধু থানা কিংবা ফাঁড়ি নয়, এই সবুর নৌ-পুলিশের ক্যাশিয়ার হিসেবেও নিজেকে ব্যবসায়ীদের কাছে জাহির করেন।

কর্ণফুলীর চরপাথরঘাটা, জুলধা ও শিকলবাহার একাধিক ব্যবসায়ী জানান, এক সবুরের যন্ত্রণায় তারা ব্যবসা করতে পারছেন না। কেননা সবুর নিজেকে একেক সময় একেক বাহিনীর সোর্স ও ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচয় দেন।

এ ছাড়াও কোস্টগার্ডের ক্যাশিয়ার পরিচয় দেন মো. জহির ও ফরিদ নামে দুই ব্যক্তি। বন্দর ফাঁড়ির ক্যাশিয়ার পরিচয় দেন আকবর ও সাত্তার নামে দুই চাঁদাবাজ। নতুন করে শিকলবাহার শুক্কুরের নামও শোনা যাচ্ছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সোর্স-ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচয় দেয়া এসব ব্যক্তি চার বছর ধরে কর্ণফুলী এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছেন। পুলিশের ভয় কিংবা নানামুখী হয়রানির শঙ্কায় তারা মুখ বুঁজে ওদেরকে চাঁদা দিয়ে যাচ্ছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, এসব ক্যাশিয়ারকে শর্ত অনুযায়ী পর পর দুই মাস টাকা দিতে না পারলেই নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। এমনকি অনেকে মিথ্যা অভিযোগে জেলও খেটেছেন। তাই ভয়ে মুখ খুলছেন না কেউ।

কর্ণফুলীতে পুলিশের কথিত এই কয়েকজন ক্যাশিয়ার-সোর্স পরিচয়ধারীর কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) সেবা কার্যক্রম।

স্থানীয়রা বলছেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্যাশিয়ার ও সোর্স পরিচয়ধারী চাঁদাবাজরাই নিয়ন্ত্রণ করছে কর্ণফুলী উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের মাদকের কারবার, জুয়ার আড্ডা, দখলবাজি, চাঁদাবাজিসহ অপরাধের নানা ক্ষেত্র। কর্ণফুলী থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় মাদক কারবারি ও জুয়াড়িদের কাছ থেকে মাসে মাসে চাঁদা আদায় করে চলেছে এসব থানা ক্যাশিয়ার ও সোর্স।

জানা যায়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নামে দীর্ঘদিন ধরেই কর্ণফুলীর মদ ও মাদক কারবারিদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে রয়েছে- প্রভাতী বাজারের (বাংলা) চোলাই মদ বিক্রেতা জুল ফরুক, জুলধা পাইপের গোড়ার চোলাই মদ কারবারি নেজাম ও তার ভাই কথিত নাম ডেনডিইয়া, ফকিরনীর হাটের বাংলা মদ কারবারি নাছির, দারোগার হাট নদীর পাড়ের নুরু মিয়ার তিনটি জুয়ার আস্তানা, জুলধা ডাঙ্গারচর ৯ নম্বর ঘাটের মো. কামালের জুয়ার আসর, ডাঙ্গারচর এলাকার ইয়াবা কারবারি এরশাদ, বিলাল ও জামাল; বড় উঠান এলাকার খুচরা মাদক কারবারি আইয়ুব, পিংকি, হোসেন ও আজাদ; বড়উঠান ইউনিয়নের অপর প্রান্তের মাদক কারবারি এনাম ও জামাল এবং ইছানগরের জুয়েল।

অপরদিকে চরলক্ষ্যা, চরপাথরঘাটা ও শিকলবাহা এলাকার বিভিন্ন অবৈধ পিলাই তেল ব্যবসায়ী, মাদক কারবারির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে যত অপরাধ।

সচেতন মহলের অভিযোগ, প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ফাঁড়ি ইনচার্জের নাম ভাঙিয়ে কথিত ক্যাশিয়ার, সোর্স ও মুন্সীরা টাকা তুলছে। এর ফলে অপরাধ প্রবণতাসহ মাদক আর জুয়ার আসর বন্ধ হচ্ছে না।

এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট থানা এলাকার সাধারণ মানুষ তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। অনেকে পুলিশের ভয়ে মুখ না খুললেও বাজারে ঘাটে এসব ক্যাশিয়ারের নাম ধরে সমালোচনা করতেও শোনা যায়।

কর্ণফুলীর যেসব ক্রাইম স্পট ঘুরে ঘুরে সোর্স ও ক্যাশিয়াররা চাঁদা তোলে সেসব এলাকা হলো-চরপাথরঘাটার পুরাতন ব্রিজঘাট, ইছানগরের বাংলা বাজার ঘাট, কর্ণফুলী ঘাট, বিএফডিসি গেট, তোতার বাপের হাট, নতুন ব্রিজের দক্ষিণ পাড়, শিকলবাহার তাতিয়া পুকুরপাড়, ব্লকের পাড়, ভেল্লাপাড়া ব্রিজের কর্ণফুলী পাড়, জুলধার পাইপের গোড়া, ১১ নম্বর মাতব্বর ঘাট, জুলধা প্রভাতী বাজার, ফকিরনিরহাট বাজার, দারোগার হাট, জুলধা ডাঙারচর ঘাট। এগুলোর বাইরেও অনেক স্পটে চাঁদাবাজি চলছে দীর্ঘদিন ধরে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলী জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) আরিফ হোসেন বলেন, ‘এরকম সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আমাদের কাছে কেউ করেনি। পুলিশের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করার কোনো প্রশ্নই আসে না। কেউ এ ধরনের অপরাধ করে থাকলে এবং সঠিক তথ্য পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। থানার ক্যাশিয়ার বলতে কিছু নেই। খোঁজ-খবর নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর