খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতাল থেকে অপহরণের শিকার তরুণীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাকে সোনাডাঙ্গা থানায় নিয়ে আসা হয়। এর আগে তাকে যশোরের কেশবপুর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
সোনাডাঙ্গা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘ওই তরুণীকে থানায় নিয়ে এসে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি। পরে বিস্তারিত জানানো হবে।’
ভুক্তভোগী তরুণী হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি ছিলেন। রোববার বিকেল ৫টার দিকে হাসপাতালের ওসিসি থেকে ছাড়পত্র দেয়ার পর তাকে অপহরণ করা হয়েছিল।
ওই তরুণী ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছিলেন।
ওই তরুণীকে উদ্ধারের আগে অপহরণ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে রুদাঘরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তৌহিদুজ্জামানকে পুলিশ আটক করে। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদের চাচাতো ভাই।
তরুণীকে অপহরণের সময় বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল।
সংস্থাটির খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ওসিসির সামনে আগে থেকে একটি মাইক্রোবাস নিয়ে ১০ থেকে ১২ ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। ওই তরুণী ছাড়পত্র নিয়ে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসটিতে তুলে নেয়া হয়।
‘ওই সময়ে আমাদের দলের সদস্যদের মারধর করা হয়। সাংবাদিকরা ছবি তুলতে গেলে রুদাঘরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তৌহিদুজ্জামান তাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। ওই তরুণী আইনি সহায়তার জন্য থানায় যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে জোরপূর্বক অপহরণ করা হয়।’
মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে যদি একজন ভিকটিম এসে নিরাপত্তা না পায়, তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? একজন প্রভাবশালী ধর্ষণ করবে, আর ভিকটিমকে থানা পর্যন্ত যাওয়ার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। এভাবে অপহরণ করে নেয়া হল, তাহলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ কী?’
ওই তরুণীকে শনিবার রাত সোয়া ১১টায় খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়েছিল। এর আগে শনিবার সন্ধ্যায় ডুমুরিয়ার শাহপুরে উপজেলা চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে তাকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ তোলেন তিনি।
ওই তরুণীর ভাই বলেন, ‘শনিবার রাত ৮টার দিকে নিজ কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে আমার বোনকে ধর্ষণ করেছে উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদ। তখন আমার বোন বিয়ের দাবি করলে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে আমার বোনকে সে তাড়িয়ে দেয়।’
তিনি বলেন, ‘মধুগ্রাম কলেজ ও উপজেলা চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত কার্যালয় পাশাপাশি অবস্থিত। আমার বোন কলেজের ছাত্রী হওয়ায় চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। উপজেলা চেয়ারম্যান বিয়ের আশ্বাস দিয়ে কয়েক বছর ধরে আমার বোনকে ধর্ষণ করে আসছে।
‘বোন ৬ মাস আগে আমাকে ঘটনা খুলে বলে। তবে আমরা সম্মানের ভয়ে কাউকে বলিনি। এখন চেয়ারম্যান বিয়ে করতে রাজি হচ্ছে না। আমার বোনও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমরা এখন আইনি ব্যবস্থা নিতে চাই।’