খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তোলা এক তরুণীকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রোববার বিকেল ৫টার দিকে হাসপাতালের ওয়ান ষ্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) থেকে ওই তরুণীকে ছাড়পত্র দেয়ার পর হাসপাতাল প্রাঙ্গণ থেকে তাকে অপহরণ করা হয়।
ঘটনার সময় ওই তরুণীকে আইনি সহায়তা দিতে হাসপাতালে গিয়েছিল বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার একটি প্রতিনিধি দল।
সংস্থাটির খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়ক মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ওসিসির সামনে আগে থেকে একটি মাইক্রোবাস নিয়ে ১০ থেকে ১২ ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। ওই তরুণী ছাড়পত্র নিয়ে বের হওয়ার সাথে সাথে তাকে জোর করে তুলে নেয়া হয়েছে। ওই সময় আমাদের দলের সদস্যদেরও মারধর করা হয়েছে।
‘সাংবাদিকরা ছবি তুলতে গেলে রুদাঘরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তৌহিদুজ্জামান তাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছেন। ওই তরুণী আইনি সহায়তার জন্য থানায় যেতে চেয়েছিলেন, তবে তাকে জোর করে অপহরণ করা হলো।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে যদি একজন নির্যাতিত এসে নিরাপত্তা না পায়, তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? একজন প্রভাবশালী ধর্ষণ করবে, আর তাকে থানা পর্যন্ত যাওয়ার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। এভাবে অপহরণ করে নেয়া হলো, তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ কী?’
এজাজ আহমেদ
খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালটি খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) আওতাধীন এলাকায় অবস্থিত। এ প্রসঙ্গে জানতে চেইলে কেএমপির উপ-কমিশনার তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ওই তরুণীকে অপহরণের সংবাদ পেয়েছি। পুলিশের একাধিক ইউনিটকে এলার্ট করা হয়েছে। ওই তরুণীকে অপহরণের সাথে যারা জড়িত সবাইকে তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
তবে ধর্ষণের ঘটনার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে স্থানে ধর্ষণের অভিযোগ করা হয়েছে, সেটা জেলা পুলিশের আওতাধীন এলাকা। তারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করবে।
খুলনা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আসিফ ইকবাল বলেন, ‘আমাদের কাছে এ পর্যন্ত ওই তরুণী বা তার পরিবারের কেউ আসেনি। কেউ একজন অভিযোগ দিলে আমরা তাকে আইনি সহায়তা দিতে বাধ্য।’
শনিবার রাত সোয়া ১১টার দিকে ওই নারীকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান ষ্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছিল। এর আগে শনিবার সন্ধ্যায় ডুমুরিয়ার শাহপুরে উপজেলা চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে এই কলেজছাত্রী নির্যাতনের শিকার হন বলে অভিযোগ।
নির্যাতনের শিকার কলেজছাত্রীর ভাই বলেন, শনিবার রাত ৮টার দিকে নিজ কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে আমার বোনকে ধর্ষণ করেছে উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদ। তখন আমার বোন বিয়ের দাবি করলে দুজনের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে আমার বোনকে সে তাড়িয়ে দেয়।
তিনি বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত কার্যালয়ের পাশেই একটি কলেজ। আমার বোন কলেজের ছাত্রী হওয়ায় চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে তাকে কয়েক বছর ধরে সে ধর্ষণ করে আসছে। ৬ মাস আগে আমাকে ঘটনা খুলে বলেছিল আমার বোন। তবে আমরা সম্মানের ভয়ে কাউকে বলিনি। এখন চেয়ারম্যান বিয়ে করতে রাজি হচ্ছে না, আমার বোনও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমরা আইনি ব্যবস্থা নিতে চাই।