সোনার বাংলাদেশ গড়তে সর্বত্র নীতি ও নৈতিকতা ছড়িয়ে দিতে হবে। এমন একটি প্রজন্ম দরকার যারা নৈতিকতা বোধ সম্পন্ন মানুষ, যারা যুক্তি দিয়ে চিন্তা করে। দেশের জন্য ভালো কিছু করতে দেশকে ভালোবাসতে হবে, দেশকে ভালো রাখতে হবে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এথিকস ক্লাব বাংলাদেশ সোসাইটির পক্ষ থেকে ১৩তম নৈতিকতা দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এ সব কথা বলেন। এতে জাতীয়ভাবে নৈতিকতা দিবস ঘোষণার দাবি জানিয়েছে এথিকস ক্লাব বাংলাদেশ।
এছাড়া জাতীয় নৈতিকতা দিবসের দাবি উত্থাপন এবং আন্তবিশ্ববিদ্যালয় বিজয় বিতর্ক উৎসবের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে রাজধানীর প্রায় ৫০ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ১ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়। অনলাইনে যুক্ত হয়ে শপথ পাঠ করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অর্থনীতিবিদ, উন্নয়ন চিন্তাবিদ ও পরিবেশকর্মী কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়তে শিশুদের প্রতি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক পরিচালক জামালউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ এবং ঢাকা মেডিকেলের উপাধ্যক্ষ শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আব্দুল হানিফ। এথিকস ক্লাব বাংলাদেশের সভাপতি এম ই চৌধুরী শামীমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন এথিকস ক্লাব বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী দিলারা আফরোজ খান রূপা। কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতা আবৃত্তি করেন শিল্পী টিটু মুনশি।
অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে প্যালেস্টাইনের নিহত মানুষদের স্মরণ করা হয় ও এ নিয়ে খালি গলায় গান পরিবেশন করেন দিলারা আফরোজ খান। গানের সঙ্গে সঙ্গে বেলুন উড়িয়ে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করে শিশুরা। অনুষ্ঠানের শেষে চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি দল গম্ভীরা গান পরিবেশন করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ বলেন, এমন একটি প্রজন্ম দরকার যারা নৈতিকতা বোধ সম্পন্ন মানুষ, যারা যুক্তি দিয়ে চিন্তা করে। সমাজকে বদলাতে হলে নিজেকে বদলাতে হবে। নিয়ে অন্যায় করা যাবে না আবার অন্যায় সহ্য করাও যাবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক পরিচালক জামালউদ্দিন আহমেদ বলেন, ভালো মানুষ হওয়া জরুরি। শিশুকাল থেকে ভালো কাজের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
ঢাকা মেডিকেলের উপাধ্যক্ষ শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আব্দুল হানিফ বলেন, দেশকে ভালোবাসতে হবে, দেশকে ভালো রাখতে হবে। একজন মানুষ যা চায় তা করতে পারে সে জন্য আত্মবিশ্বাসী হতে হবে।
এথিকস ক্লাব বাংলাদেশের সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা এম ই চৌধুরী শামীম বলেন, আমরা ১৩ বছর ধরে নিজেদের উদ্যোগে নৈতিকতা দিবস পালন করে আসছি। সারা দেশে ২০০টিরও বেশি এথিকস ক্লাব রয়েছে। আমরা ২৫ জানুয়ারি দিনটিকে জাতীয় নৈতিকতা দিবসের দাবি জানিয়ে আসছি দীর্ঘ দিন ধরে। আজ আবারও সেই দাবি জানাচ্ছি। জাতীয় নৈতিকতা দিবস পালন করতে সরকারের কোনো অতিরিক্ত বাজেট লাগবে না, শুধু একটি প্রজ্ঞাপন দরকার। সারা দেশে জাতীয়ভাবে নৈতিকতা দিবস পালিত হলে শিশুরা প্রথম শ্রেণি থেকে নৈতিকতা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের সুযোগ পাবে। এর মাধ্যমে তারা নৈতিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবেন।
২০০৮ সালে এথিকস ক্লাব বাংলাদেশ সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এথিকস ক্লাব বাংলাদেশ সোসাইটি বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিগণের অংশগ্রহণে সমাজে নৈতিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নানামুখী কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি ‘নৈতিকতা দিবস' পালন করে আসছে। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে নৈতিকতা দিবসের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য হয়ে পড়ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে গত এক যুগ আমরা বাংলাদেশে নৈতিকতা দিবস পালন, আদর্শ শিক্ষক সম্মাননা এবং প্রয়াত উপদেষ্টাদের স্মরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করে আসছি।