বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ব্যাটারির ব্যবসার কথা বলে হিমেলকে অপহরণ করা হয়

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ২৫ জানুয়ারি, ২০২৪ ২৩:৪৮

হিমেলকে অপহরণের হোতা মালেকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। বুধবার রাতে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকা থেকে হিমেলকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ ও ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়।

গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর থেকে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর অপহরণের শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমান হিমেল। তার ব্যক্তিগত গাড়ির চালক সামিদুল ব্যাটারি বিক্রির কথা বলে শেরপুরে নিয়ে যাওয়ার পথে তাকে অপহরণ করা হয়।

হিমেলকে অপহরণের হোতা মালেকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। বুধবার রাতে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকা থেকে হিমেলকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ ও ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, ‘২৬ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় রাজধানীর উত্তরায় বসবাসকারী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী কাজী হাসিবুর রহমান ওরফে হিমেল ব্যক্তিগত প্রয়োজনে শেরপুর যাওয়ার সময় পথিমধ্যে অপহরণের শিকার হন। পরে পরিবার একাধিকবার হিমেলের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নম্বরে কল করে বন্ধ পায়। দীর্ঘ সময় পরও যোগাযোগ করতে না পেরে তার মা তহুরা বিনতে হক উত্তরা পশ্চিম থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

তদন্তে নেমে ২৮ ডিসেম্বর গাজীপুরের বাসন এলাকায় পরিত্যক্ত অবস্থায় হিমেলের গাড়িটি উদ্ধার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। পরবর্তীতে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি অপহৃত হিমেলের মায়ের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ফোন করে অপহরণের বিষয়টি জানায় এবং দুই কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণ আদায়ের জন্য তারা হিমেলকে পাশবিক কায়দায় নির্যাতনের ভিডিও পাঠায়।

এ ঘটনায় ৬ জানুয়ারি হিমেলের মামা বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি অপহরণের মামলা করেন। মা তহুরা ছেলেকে উদ্ধারে র‌্যাবের কাছেও অভিযোগ করেন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় ২৩ জানুয়ারি র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব-১, র‌্যাব-৯ ও র‌্যাব-১৪ এর সমন্বয়ে একটি দল সুনামগঞ্জের তাহিরপুর এলাকায় অভিযান চালায়। সেখান থেকে অপহরণকারী চক্রের হোতা ও পরিকল্পনাকারী আব্দুল মালেক ও তার অন্যতম সহযোগী হিমেলের গাড়ির চালক সামিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার রাতে অপহৃত হিমেলকে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর থেকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় গ্রেপ্তার করা হয় রনি নাবাল নামে একজনকে। তাদের দেয়া তথ্যে গত রাতে রাজধানীর উত্তরা থেকে রাসেল মিয়া ও বিল্লাল হোসেন নামে চক্রের অপর দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানে উদ্ধার করা হয় একটি বিদেশি পিস্তল, ২ রাউন্ড গুলি ও ২টি ওয়াকি-টকি সেট।

স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, হিমেলের বাবা ব্যাটারি বিক্রির ব্যবসা করতেন। ভিকটিম হাসিবুর রহমান হিমেল রাজধানীর উত্তরার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির (আইইউবিএটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। চার মাস আগে মারা যান হিমেলের বাবা। এরপর লেখাপড়ার পাশাপাশি ব্যবসায় নামেন হিমেল।

র‌্যাব মুখপাত্র বলেন, গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, অপহরণ চক্রের হোতা মালেক ও অন্যতম পরিকল্পনাকারী হিমেলের গাড়িচালক সামিদুল। সামিদুল ভিকটিম হিমেলের বাসায় ৪ বছর ধরে গাড়িচালক হিসেবে চাকরি করতেন। তার (হিমেল) পারিবারিক আর্থিক ও অন্যান্য সম্পত্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য জানতেন সামিদুল।

গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর পেশাদার অপহরণকারী মালেকের নেতৃত্বে ছামিদুলসহ অন্যরা উত্তরায় একত্রিত হয়ে হিমেলকে অপহরণের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ছামিদুল ভিকটিম হিমেলকে শেরপুরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ব্যাটারি বিক্রির সম্ভাবনার কথা জানিয়ে তাকে শেরপুরে যেতে আগ্রহী করেন।

গাড়িচালকের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে ২৬ ডিসেম্বর হিমেল শেরপুর রওনা হন। ওদিকে পরিকল্পনা অনুযায়ী মালেক ও তার অন্য সহযোগীরা ৩/৪টি মোটরসাইকেলে ভিকটিমের গাড়ি অনুসরণ করতে থাকে। গাজীপুরের সালনা এলাকায় হিমেলের গাড়ি পৌঁছার পর মোটরসাইকেল দিয়ে ভিকটিমের গাড়ির গতিরোধ করে তাকে অপহরণ করে। পরে তাকে ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী ধোবাউড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনদিন অবস্থানের পর বিল্লাল ছাড়া মালেক, সামিদুল ও অপহরণ চক্রের অন্যরা ভিকটিম হিমেলকে নিয়ে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকায় চলে যায়।

গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মালেক হিমেলের মাকে একটি বিদেশি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে ফোন করে ভিকটিমকে অপহরণের বিষয়টি জানিয়ে প্রথমে ২ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। একইসঙ্গে হিমেলকে পাশবিক কায়দায় নির্যাতনের ভিডিও পাঠায়। পর্যায়ক্রমে তারা এক কোটি তারপর ৫০ লাখ এবং সবেশষে ৩০ ল্্রক টাকা মুক্তিপণ হিসেবে দাবি করে।

গ্রেপ্তারকৃতরা পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণের টাকা না পেলে হিমেলকে হাত-পা কেটে ফেলা ও হত্যার হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে হিমেলের মা অপহরণকারীদের মুক্তিপণের টাকা দিতে সম্মত হন।

এই পর্যায়ে অপহরণকারীরা হিমেলের মাকে টাকা নিয়ে ২৩ জানুয়ারি সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে আসতে বলে।

এদিকে অপহরণকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং কথোপকথনের পুরো বিষয় র‌্যাবকেও অবহিত করেন হিমেলের মা। ২৩ জানুয়ারি হিমেলের মা নেত্রকোণায় পৌঁছলে মালেক ও সামিদুল তাকে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে আসতে বলেন। তখন র‌্যাবের একটি দল সুনামগঞ্জে গেলে তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে অপহরণকারীরা র‌্যাবের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তাদের ছুরিকাঘাতে র‌্যাবের এক কর্মকর্তাসহ দুজন আহত হন। পরে মালেক ও ছামিদুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর তাদের দেয়া তথ্যে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের পাহইড় টিলা এলাকা থেকে হিমেলকে উদ্ধার করা হয়।

এ বিভাগের আরো খবর