বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সওজের জমিতে মেম্বারের ‘সমাজসেবা’

  •    
  • ২৪ জানুয়ারি, ২০২৪ ২৩:২৪

সাবেক মেম্বার মিজানুর রহমান বলেন, ‘সড়ক ও জনপথের জমি দখল করে অনেকেই বিল্ডিং নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছে, কিন্তু আমরা সমাজসেবা করছি। মানুষ যাতে সেখানে ভালো করে ব্যবসা করতে পারে, তার জন্যই এ ব্যবস্থা।’

সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের জমিতে প্লাস্টিকের ঘের দিয়ে কাপড়ের দোকান, ছাউনি দিয়ে জুতা পলিশ, টেবিল বসিয়ে চা বিস্কুটের দোকান করে বছরের পর বছর ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন গরিব ব্যবসায়ীরা। এতে কখনও ভাড়া গুনতে হয়নি তাদের, কিন্তু হঠাৎ এ জায়গা দখলে নিয়ে টিনশেডের সারি সারি ছয়টি দোকানঘর নির্মাণ করেছে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল।

আরও ছয়টি ঘর নির্মাণ হবে বলে জানিয়েছেন এসব ব্যবসায়ী। দোকানঘরগুলো বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালন্দর চৌধুরী হাট বাজার সংলগ্ন ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় মহাসড়কের পাশে রোববার দুপুরে দেখা যায় এমন দৃশ্য। সড়ক ও জনপথের জমিতে সারি করে নতুন টিন ও কাঠ দিয়ে এসব স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে।

জানতে চাইলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দেবেন বর্মন বলেন, ‘আমি যে ঘরটিতে ছিলাম, সেটি ইয়াসিন নামের এক ব্যক্তি বরাদ্দ নিয়েছেন। তিনি আমাকে এসে আমার ছাউনি নামাতে বলেন। আমি সেটা নামিয়ে নিয়েছি৷ এখন এ ঘরে ঠাঁই নিয়ে আছি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ক্ষুদ্র কাপড় ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে এখানে প্লাস্টিকের ছাউনি দিয়ে কাপড় বিক্রি করি। হঠাৎ যারা ঘর নির্মাণ করছে, তারা এসে বলল, আমি যেন আমার ব্যবস্থা নেই। তাদের থেকে ঘর না নিলে হয়তো এখানে থাকতে দেবে না।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সহযোগীদের নিয়ে স্থানীয় সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য মিজানুর রহমান সড়কের এসব জায়গা দখল করে স্থাপনা তৈরি করেছেন।

মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সড়ক ও জনপথের জমি দখল করে অনেকেই বিল্ডিং নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছে, কিন্তু আমরা সমাজসেবা করছি। মানুষ যাতে সেখানে ভালো করে ব্যবসা করতে পারে, তার জন্যই এ ব্যবস্থা।’

এ সময় তিনি ছয়টি ঘর নির্মাণের কথা স্বীকার করেন, তবে এসব ঘর থেকে ভাড়া আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ফজলে রাব্বী চৌধুরী নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

ফজলে রাব্বী চৌধুরীকে খুঁজে বের করে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ‘অফিসের কাজে ব্যস্ত আছেন’ জানিয়ে রবিউল ইসলাম নামের আরেকজনের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

রবিউল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘হাট ইজারাদার সাবেক মেম্বার মিজানুর রহমান এসব ঘর তুলেছেন।’

এটি সমাজসেবামূলক কাজ, নাকি দখল জানতে চাইলে তিনি দখলের কথা অকপটে স্বীকার করেন।

পরবর্তী সময়ে আবারও মিজানুর মেম্বারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘সবাই যেভাবে সড়কের জমি দখল করে দোকান ঘর করেছেন, আমরাও তাই করেছি।’

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কোনো অনুমতি আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোনো অনুমতি নেয়া হয়নি।’

ওই সময় তিনি সড়কের দুই পাশে এসব স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘সরকার যদি সব উচ্ছেদ করে দেয় তাহলে দিতে পারে।’

স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, সড়কের পাশে সরকারি জায়গায় যেসব গরিব মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন, তাদের ওপর যেন জুলুম কেউ না চালান। কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি যেন সরকারি জায়গায় অবৈধ স্থাপনা না করতে পারেন এবং সেগুলো যেন উচ্ছেদ করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, ‘সমাজসেবার আড়ালে কারও অসৎ উদ্দেশ্য আছে কি না, তারও তদন্ত চাই আমরা।’

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘স্থানীয়রা আমাকে এ বিষয়ে অবগত করেছেন। আমরা মাপজোক করে শিগগিরই বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

এ বিভাগের আরো খবর