চলমান কোন কোন প্রকল্প স্বল্প ব্যয়ে দ্রুত শেষ করা যাবে এবং কোনগুলো থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়া যাবে, তা চিহ্নিত করতে পরিকল্পনা কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘যেসব উন্নয়ন কর্মসূচি অল্প টাকায় শেষ হবে, সেগুলোকে আমাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। কারণ আমি মনে করি, এসব প্রকল্প যত দ্রুত শেষ করতে পারব তত দ্রুত দেশবাসী এর সুবিধা ভোগ করতে পারবে।’
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি মিলনায়তনে নতুন সরকার গঠনের পর কমিশনের প্রথম সভার সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ কমিশনের চেয়ারপারসনও তিনি। এ সময় প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি করা ও মেয়াদ বৃদ্ধি এড়াতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন তিনি।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আপনাদের অনুরোধ করব, এখন সবথেকে বেশি যেটা দরকার, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেটা আমাদের বেছে নিতে হবে। এগুলো চিহ্নিত করতে হবে, কোন প্রকল্পগুলো সামান্য কিছু টাকা দিলেই আমরা শেষ করে ফেলতে পারব। প্রকল্পগুলো যত দ্রুত শেষ করে ফেলা যায় ততই ভালো। কারণ, একটি প্রকল্প শেষ হলে তার ফলাফল আসে। আমরা লাভবান হই এবং নতুন প্রকল্প নিতে পারি।
‘কাজেই এখানে দীর্ঘসূত্রিতা যেন না হয়, বারবার যেন প্রকল্প সম্পন্ন করতে দেরি না হয়, সেদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লক্ষ্য রাখতে হবে।’
প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পিডি (প্রকল্প পরিচালক) নিয়োগের ক্ষেত্রে দেখা যায়, একজনকে অনেকগুলো প্রকল্পের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে, অথচ সেগুলো করার কোনো সুযোগ তার নেই। সেটা কিন্তু হতে দেয়া যাবে না। প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়কে সেভাবেই নির্দেশ দেয়া হবে।’
এ সময় প্রকল্প পরিচালকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। কারণ হিসেবে বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায় অনেককে প্রকল্পের দায়িত্ব দেয়া হয় যারা কাজটা ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারেন না বা মনযোগী হন না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যখন কোনো উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা হাতে নিই, সে সময় খেয়াল রাখতে হবে- কোনটা আমার দেশের জন্য প্রযোজ্য এবং প্রয়োজন। অনেক সময় প্রকল্প পরিচালনার জন্য আমরা এডিবি, বিশ্ব ব্যাংক বা অন্যান্য সংস্থা বা দেশ থেকে থেকে ঋণ নিয়ে কাজ করি। অনেক সময় দেখা যায় অনেক বড় অঙ্কের টাকার প্রকল্প নিয়ে আসা হয়।
‘নতুন প্রকল্প নেয়ার ক্ষেত্রে আমি আবারও বলব, অহেতুক বড় আকারের একটা প্রস্তাব আসলো, সেটা তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণ না করে প্রতিটি প্রস্তাবের ক্ষেত্রে এটাই মাথায় রাখতে হবে- সেখানে আমাদের কী পরিমাণ টাকা ব্যয় হবে, আমরা কী পরিমাণ ঋণ নিচ্ছি, সুদসহ কী পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করতে হবে এবং সেটা করার মতো আমাদের সক্ষমতা আছে কি না। এসব যাচাই বাছাই করা একান্তভাবে দরকার।’
তিনি বলেন, ‘আমি যখন তখন যেকোনো প্রকল্প গ্রহণ করি না। আগে চিন্তা করে দেখি, কোনটা দেশের কাজে লাগবে আর কোনটা লাগবে না। এর থেকে মানুষ কতটুকু পাবে।
‘অযথা টাকা ধার করা নয়। কারণ, তা সুদসহ আমাকেই পরিশোধ করতে হয়। তাই এই বোঝা যাতে আমাদের কাঁধে না পড়ে সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাশাপাশি যে প্রকল্প আমরা নেব, সেটা ওই এলাকার জন্য কার্যকর কি না এবং এর থেকে সাধারণ মানুষ কী পরিমাণ লাভবান হবে- এসব বিষয় মাথায় রাখতে হবে। এ ছাড়া অর্থনীতিতেও কেমন গতি সঞ্চার হবে, তাও ভেবে দেখতে হবে।’
বিশ্বে চলমান যুদ্ধপরিস্থির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি, যেহেতু অর্থনৈতিকভাবে একটা চাপ আছে, যার জন্য যথাসময়ে অর্থ হয়তো আমরা ছাড় করতে পারিনি। আর এই নির্বাচনের ডামাডোলে সবকিছু একটু ধীর গতিতে চলেছে। নির্বাচন তো সম্পন্ন হয়ে গেছে। কাজেই এটা আর ধীরগতিতে চললে হবে না। এখন আরও দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। এই নির্বাচনকালে যে সময় আমাদের নষ্ট হল সেটা আমাদের এখন পূরণ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটি দেশের জন্য যুদ্ধের ফলাফল খারাপ, কারণ এতে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যায়। অনেক কিছুই আমরা উৎপাদন করি, কিন্তু যেসব পণ্য আমাদের দেশে উৎপাদন কম হয় বা আমদানি করতে হয়, সেসব পণ্যের মূল্য এবং পরিবহণ ব্যয় অত্যাধিক বেড়ে গেছে। তারপর ঋণের সুদ বেড়ে যাওয়ায় এর একটা বিরাট চাপ আমাদের অর্থনীতির ওপর পড়েছে।
এ সময় পাঁচ বছর সময়কে ‘টু শর্ট’ উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার ঘোষণা দিয়েছি। সেটা মাথায় রেখেই আমাদের কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করতে হবে। সরকার গঠন করার পর দ্রুত আমরা বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছি কারণ, নষ্ট করার মত সময় আমাদের হাতে নেই।’