দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গা ও সিরাজগঞ্জ জেলায়। জেলা দুটিতে মঙ্গলবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ লোকজন।
চুয়াডাঙ্গা
চুয়াডাঙ্গায় হঠাৎ তাপমাত্রা কমে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। হাড় কাঁপানো কনকনে শীতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে মানুষদের। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সূর্যের দেখা মিলছে না এ জেলায়। মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে জেলার সব মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
মঙ্গলবার সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটাই এই মৌসুমে চুয়াডাঙ্গা জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
উত্তরের হিমেল হাওয়ায় শীতের তীব্রতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে আছেন খেটে খাওয়া ছিন্নমূল মানুষ। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা গেছে তাদের। শীতে সময়মতো কাজে যেতে পারছেন না তারা। নষ্ট হচ্ছে ধানের বীজতলা। তীব্র ঠান্ডায় দেখা দিচ্ছে শীতজনিত নানা রোগ। হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।
চুয়াডাঙ্গা শহরের শহীদ হাসান চত্বরের রিকশাচালক মিনারুল ইসলাম বলেন, ‘যে শীত পড়চি মনে হচ্চি যেনে ফিরিজের মদ্দি আচি। সকালে তো বাইরি বেরানু যাচ্চি না। হাত পা অবশের মতো হয়ি যাচ্চি। রাস্তায় লোকজন কম বের হচ্চি। তাই ভাড়া খুব একটা হচ্চি না।’
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এটি মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ।’
সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়িতে মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাড়াশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঘন কুয়াশার কারণে যান চলাচলে হেডলাইট ব্যবহার করছেন চালকরা। ছবি:নিউজবাংলা
তাপমাত্রা কমার কারণে সিরাজগঞ্জে মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বন্ধ করে দিয়েছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা। মাধ্যমিক ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও খোলা রয়েছে বেসরকারি প্রাথমিক স্তরের বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তারা পুরোদমে খোলা রেখে ক্লাস চালাচ্ছেন, তবে এসব স্কুলের অভিভাবকরা জানেন না এই নোটিশ। তাই শিক্ষার্থী নিয়ে এসেছেন স্কুলে।
দিনের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার নিচে নামলে স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
তাড়াশ আবহাওয়া অফিসের আঞ্চলিক কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মঙ্গলবার সকাল ৬টায় তাড়াশে তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর বাঘাবাড়ী পয়েন্টটি নিয়ন্ত্রণ করে পাবনা আবহাওয়া অফিস। তারা জানিয়েছে, আজ সকাল ৯টায় বাঘাবাড়ীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’
তিনি বলেন, ‘চলতি শীত মৌসুমে এ অঞ্চলে এটি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আবহাওয়ায় উচ্চচাপ বলয়ের কারণে কুয়াশার তীব্রতা বেড়েছে। জানুয়ারি মাস জুড়েই শীত ও কুয়াশা অব্যাহত থাকতে পারে।’
হাড় কাঁপানো কনকনে শীতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের লোকজন। তীব্র ঠান্ডার কারণে অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে উষ্ণতা নিতে দেখা গেছে। দুর্ঘটনা এড়াতে যানবাহনগুলো হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। এমন আবহাওয়া আরও দুদিন থাকবে এবং ২৫ তারিখে বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
গত তিন দিন ধরে কুয়াশাচ্ছন্ন রয়েছে জেলা জুড়ে। বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ সড়কসহ জেলার সব সড়ক মহাসড়কে কুয়াশার কারণে যান চলাচলে হেডলাইট ব্যবহার করতে দেখা গেছে চালকদের।
ব্যাটারিচালিত অটোভ্যান চালক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সারাদিন ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি, তবে এই তীব্র শীতেও যেন পরিবারের সঙ্গে ঘরে থাকার সুযোগ নেই। কয়েকদিন ধরে খুব শীত, তার ওপর আবার ঠান্ডা বাতাস। বাইরের মহাসড়কে চলাফেরা করলে ঠান্ডা আরও বেশি লাগে, ভীষণ কষ্ট হয়। কিন্তু পেট তো আর শীত-গরম মানে না। জীবিকার সন্ধানে বের হয়েছি। কাজ না করলে খাব কি।’
ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক রঞ্জু আহম্মেদ বলেন, ‘সকালে কুয়াশার কারণে কিছুই দেখা যায়নি। এখন রাস্তাঘাট দেখা যাচ্ছে। যখন কুয়াশা থাকে তখন রাস্তায় রিকশা চালাতে বেশি ভয় করে। দেখতে না পেয়ে এই বুঝি কোনো গাড়ি চাপা দিয়ে চলে যাবে। যেহেতু জীবিকা নির্বাহ করতে হবে, পরিবারকে খাওয়াতে হবে, তাই কষ্ট হলেও গাড়ি চালাতে হচ্ছে।’
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ওসি আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, রোববার রাত থেকে শুরু করে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত কুয়াশাচ্ছন্ন রয়েছে এ মহাসড়ক। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটেছে, তবে সূর্যের আলো কিছুটা বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই গাড়ি চলছে।’