কক্সবাজারের মহেশখালীতে ভাসমান টার্মিনালে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে চট্টগ্রামে আকস্মিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ফের গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে।
শুক্রবার রাত ১০টার দিকে পুনরায় গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়।
তবে গ্যাস সরবরাহ শুরু হলেও শনিবার সকাল ১২টা পর্যন্ত স্বাভাবিক সরবরাহ পাননি বলে জানান বেশির ভাগ এলাকার গ্রাহকরা। অনেকেই চুলা জ্বালাতে পারেননি।
এখনও স্বাভাবিক সরবরাহ না পাওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
নগরীর চকবাজার এলাকার বাসিন্দা শাহাদাত হোসেন রাজিব বলেন, ‘আমাদের বাসায় গতকাল ছিল না গ্যাস, আজ আসছে। তবে চুলা একটা জ্বালাতে হচ্ছে, দুইটা একসঙ্গে জ্বালালে কম জ্বলে।’
নগরীর অক্সিজেন এলাকার বাসিন্দা উম্মে ফাহমিদা মীম বলেন, ‘এমনিতেই সারাদিন গ্যাস থাকে না। আগে রাতে থাকত, গতকাল রাতেও ছিল না। এখন একটু একটু জ্বলতেছে, কিন্তু এটাতে তো রান্না হচ্ছে না। আমার ছোট বাচ্চা আছে, আর কতদিন কষ্ট করব, না খেয়ে থাকব?’
শনিবারও নগরীর বিভিন্ন ফিলিং স্টেশনে গ্যাসের অপেক্ষায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে।
নগরীর মুরাদপুর এলাকায় একটি ফিলিং স্টেশনের বাইরে সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে লাইনে দাঁড়ানো আবু তৈয়ব বলেন, ‘আমি সাধারণত শুক্রবারে বের হই না। তাই আমার কিছুটা গ্যাস ছিল। এখন তাও শেষের দিকে। গ্যাস না পেলে আর গাড়ির চাকা ঘুরবে না।’
সেলিম উদ্দিন নামের আরেক সিএনজি অটোরিকশার চালক বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত থেকে গ্যাস পাচ্ছি না। আমি এই লাইনে দাঁড়িয়েছি গতকাল রাত ১০টায়। এখন গ্যাস পাইনি, দিব দিব বলে আশা দিচ্ছে।’
গ্যাস না পেয়ে অধিকাংশ যানবাহন বন্ধ থাকায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে গণপরিবহনগুলো। তেলচালিত যানবাহনের পাশাপাশি এখন চলাচলের জন্য ভরসা রিকশা। এসব যানবাহনে যাত্রীদের দিতে হচ্ছে দ্বিগুণ, তিনগুণ এমনকি চারগুণ ভাড়া।
চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা আব্দুন নূর তুষার বলেন, ‘আগে যে পথটা ৬০ টাকায় যেতাম, আজ ওই পথের জন্য আমার ২০০ টাকা খরচ হয়েছে। কারো কারো আরও বেশি খরচ করতে হচ্ছে।’
সকাল থেকে মানুষের বিভিন্ন খাবার হোটেল ও রেস্তোরাঁয়ও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মুরাদপুর এলাকায় আল মক্কা হোটেলে স্ত্রী সন্তান নিয়ে নাস্তা করতে আসেন সুরত আলম।
তিনি বলেন, ‘চুলায় হালকা আসছে গ্যাস, তাতে সকাল থেকে চেষ্টা করেও নাস্তা তৈরি করা যায়নি। এখন সবাইকে নিয়ে নাস্তা করতে আসছি, কিন্তু কোনো রেস্টুরেন্ট বা হোটেলে বসার মতো পর্যাপ্ত জায়গা খালি নেই, এত ভিড়! তাই খাবার বাসায় নিয়ে যেতে হবে।’
এদিকে স্বাভাবিক গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কলকারখানার মালিকরা। শনিবার চট্টগ্রামের পৃরায় সব কারখানা খোলা থাকলে প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহের অভাবে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহসভাপতি ও আর ডি এম গ্রুপের চেয়ারম্যান রকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘যে পরিমাণ গ্যাস এখন পাচ্ছি, তা প্রয়োজনের তুলনায় কিছুই না৷ আমাদের সম্পূর্ণ প্রোডাকশন বন্ধ এখন। এতে যথাযথ সময়ে শিপমেন্ট না হলে বিশাল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ব আমরা।’
গ্রাহকরা স্বাভাবিক গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ার বিষয়ে ভাসমান টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস লিমিটেড কোম্পানি (আরপিজিসিএল) বলছে, শুক্রবার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় সম্পূর্ণ পাইপলাইন খালি হয়ে গিয়েছিল। এতে চাহিদার প্রায় পুরোটাই সরবরাহ করা হলেও পর্যাপ্ত চাপের অভাবে গ্রাহকরা এখনও স্বাভাবিক সরবরাহ পাচ্ছেন না।
এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) প্রকৌশলী আমিনুর রহমান ওইদিন রাত ১২টার মধ্যেই সরবরাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক হওয়ার কথা বলেছিলেন। তবে শনিবার সকাল ১১টার দিকে সরবরাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়ার নিজের বাসাতেই চুলা জ্বলেনি বলে জানান তিনি।
প্রকৌশলী আমিনুর রহমান বলেন, ‘গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে। কিন্তু পরিমাণে কম হয়ত। আমার নিজের বাসায়ও চুলা জ্বলছে না৷ ওরা (আরপিজিসিএল) তো আমাদের জানিয়েছিল রাতেই ঠিক হবে, যান্ত্রিক ত্রুটিও সারানো হয়েছে। কিন্তু এখনও কেন ঠিকঠাক গ্যাস আসছে না তা তো জানি না।’
শনিবার বিকেলের মধ্যেই গ্রাহকরা স্বাভাবিক সরবরাহ পাবেন বলে জানান ভাসমান টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস লিমিটেড কোম্পানির (আরপিজিসিএল) মহাব্যবস্থাপক (এলএনজি) প্রকৌ. মো. শাহ আলম।
তিনি বলেন, ‘শুক্রবার রাতেই গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে। এখন ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে। বিকেলের মধ্যেই গ্রাহকরা স্বাভাবিক সরবরাহ পাবেন আশা করি।
‘এখন গ্রাহকরা স্বাভাবিক সরবরাহ পাচ্ছেন না। কারণ শুক্রবার দিনভর গ্যাস না থাকায় পুরো লাইন খালি ছিল। এখন সরবরাহ ঠিক আছে, তবে স্বাভাবিক চাপ তৈরি হতে একটু সময় লাগবে।’
কেজিডিসিএল সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠানটির মোট গ্রাহক সংযোগ রয়েছে ছয় লাখ এক হাজার ৯১৪টি। এর মধ্যে পাঁচ লাখ ৯৭ হাজার ৫৬১টি গৃহস্থালি সংযোগ ও বাকিগুলো বাণিজ্যিক। সব মিলিয়ে চট্টগ্রামে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা থেকে ৩২৫ মিলিয়ন ঘনফুট।