‘৫ টাহা দিয়া এডা কম্বল পাইয়া খুব উপকার হইল। শেরেপুরে মেলা শীত পড়ছে কয়দিন থাইক্কা। এহন আরামে থাকতে পারমু।’
কথাগুলো বলছিলেন শেরপুর জেলা শহরের বাগরাকশার মোছা. রহিমা। অর্থাভাবে শীতের কষ্ট করছিলেন তিনি। তবে জেলার আজকের তারুণ্য নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগে শীত নিবারণের সুযোগ হয়েছে তার।
শুধু রহিমা নন, সদর উপজেলার দেড় শতাধিক মানুষ এ সুবিধা নিয়েছেন। আজকের তারুণ্য ‘পাঁচ টাকার শীতবস্ত্রের বাজার’ চালু করার কারণে উপকৃত হয়েছেন তারা। হতদরিদ্ররা যাতে নামমাত্র মূল্যে শীতবস্ত্র কিনতে পারেন, সে লক্ষ্যে এ বাজার চালুর উদ্যোগ নেন সংগঠনটির কর্মীরা।
শুক্রবার বিকেলে শেরপুর সরকারি কলেজ মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বাজার চালু হয়।
বাজারের আয়োজক আজকের তারুণ্যের সভাপতি রবিউল ইসলাম রতনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিশেষ এই বাজারের উদ্বোধন করেন শেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেজাবে রহমত।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেরপুর সদর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোবারক আলী, শেরপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. মেরাজ উদ্দিন, উত্তরা হাসপাতালের পরিচালক জাকির হোসেন, সাংবাদিক শহিদুল ইসলাম হীরাসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী দিনে ৫ টাকা করে জমা দিয়ে দেড় শতাধিক পঙ্গু, ভিক্ষুক ও হতদরিদ্র মানুষ একটি করে কম্বল সংগ্রহ করেন। ৫ টাকার বিনিময়ে অন্তত দুই শ’ টাকার কম্বল পেয়ে সবাই খুশি।
গৌরীপুরের হাফিজ মিয়া বলেন, ‘সারাদিন হাত পেতে যা পাই, তা-ই খাই। মানুষের কাছে হুনলাম ৫ টাহা দিয়া কম্বল দিতাছে; পরে নিবার আইলাম। ৫ টাহা দিয়া ২ শ’ টাহার কম্বল পাইলাম। খুব বালাভাবে রাইত কাটবো এহন।’
খাইরন বলেন, ‘আমি খুব খুশি অইছি। এ বাজার গরীব মাইনসের জন্যে আশীর্বাদ। শীতে কয়দিন মেলা কষ্ট করলাম।’
আজকের তারুণ্যের সভাপতি রবিউল ইসলাম রতন বলেন, ‘হতদরিদ্ররা যেন আমাদের কাছ থেকে কিছু নিয়ে লজ্জিত না হন, এজন্য আমরা ৫টি করে টাকা নিয়েছি। শীতের সময় জেলার বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমান এ বাজার চালু থাকবে। শীতবস্ত্রের বাজারের পরে আমরা আসন্ন রমজান মাসে দুই টাকার পণ্যের বাজার চালু করব। এ ধরনের উদ্যোগ বিভিন্ন সময়ে অব্যহত রাখব।’
ইউএনও মেজাবে রহমত বলেন, ‘আজকের তারুণ্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের এ মহতি উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। আমাদের পক্ষ থেকে এ ধরনের উদ্যোগে সব ধরনের সহায়তা থাকবে। আমি শুনলাম, তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। যুবকদের পাশাপাশি যাদের অর্থ সম্পদ আছে তারাও যেন এসব উদ্যোগ হাতে নেন।’