বোরো মৌসুমে শীতকালীন বিভিন্ন সবজি আবাদসহ ধানের জন্য চারা প্রস্তুত করছেন বিভিন্ন জেলার কৃষকরা, কিন্তু দেশজুড়ে কিছুদিন ধরে শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে ঘন কুয়াশা এবং প্রচণ্ড ঠান্ডায় বোরো আবাদে ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে এসব জেলায়। তাপমাত্রা কমে যাওয়া ও কুয়াশার কারণে নষ্ট হচ্ছে বীজতলা, ফসল আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন রোগে। চাষিরা পলিথিনের আস্তরণ দিয়ে ঢেকে রাখছেন বোরো ধানের বীজতলা।
পঞ্চগড়
পৌষজুড়ে খুব একটা সূর্যের দেখা মেলেনি পঞ্চগড়ে। তাপমাত্রা ওঠা-নামা করছে আট থেকে ১০ ডিগ্রির ঘরে। হিমালয় থেকে বয়ে আসা হিম বাতাস আর কুয়াশার চাদরে মোড়ানো থাকছে পুরো জেলা।
এমন আবহাওয়ায় বেড়েছে ঠান্ডার তীব্রতা। শুক্রবার তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
অন্যদিকে ঘন কুয়াশা এবং তীব্র শীতের কারণে বোরো আবাদে ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দেয়ায় চাষিরা পলিথিনের আস্তরণ দিয়ে ঢেকে রাখছেন বোরো ধানের বীজতলা। বর্তমানে চাষিরা বোরো ধানের চারা রোপণ করছেন, কিন্তু ঘন কুয়াশায় চারা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
চাষিরা জানান, হলুদ এবং সাদা রং ধারণ করায় বীজতলায় চারা বেড়ে উঠছে না। শিশির ভেজা চারাগুলোকে তাই ঢেকে রাখতে হচ্ছে পলিথিনের আস্তরণ দিয়ে। এতে চাষিদের বাড়তি কর্মব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি খরচও বেড়ে যাচ্ছে।
তারা বলছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে বোরো আবাদে বেশ ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
সদর উপজেলার বোরো চাষি আব্দুর রাজ্জাক, আমিনুর রহমান ও বরকত আলি জানান, চলতি মৌসুমে বোরো আবাদের জন্যে জমি প্রস্তুত করেছেন তারা, কিন্তু বীজতলার অভাবে চারা রোপণ করতে পারছেন না। তীব্র শীত এবং ঘন কুয়াশার কারণে বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, গাছ হলুদ হয়ে মরে যাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত উপপরিচালক বাসুদেব রায় জানান, এক্ষেত্রে পলিথিনের আস্তরণ দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, এ বছর ৩৩ হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এক হাজার ৫৯৩ হেক্টর জমিতে বোরোর বীজতলা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও লক্ষ্যমাত্রা পেরিয়ে এবারে এক হাজার ৬০৯ হেক্টর জমিতে বোরোর বীজতলা প্রস্তুত করা হয়েছে।
মৌলভীবাজার
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জেও তীব্র শীত ও কুয়াশায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বোরো ধানের বীজতলা ও শীতকালীন সবজি।
উপজেলার কৃষকরা জানান, গত কয়েকদিনের তীব্র শীতে বোরো ধানের বীজতলা কিছুটা লাল হয়ে গেছে। এগুলো নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া শীতকালীন সবজি আলু, টমেটোসহ বিভিন্ন সবজি গাছ নষ্ট হচ্ছে।
ছবি: নিউজবাংলা
সরেজমিনে উপজেলার পৌরসভা, পতনঊষার, শমশেরনগর ও রহিমপুর ইউনিয়নে দেখা যায়, বোরো ধানের বীজতলা লাল হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া আলু ও বিভিন্ন সবজি গাছ মরে যাচ্ছে।
কমলগঞ্জের পতনঊষার ইউনিয়নের কৃষক সেলিম মিয়া বলেন, ‘আমি প্রায় ছয় একর জমিতে বোরো ধান চাষ করার জন্য বীজতলা তৈরি করেছি। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বীজতলা কিছুটা লাল হয়ে যাচ্ছে। শ্রমিকের অভাবে চারা রোপণ করতে পারছি না।’
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার রায় বলেন, ‘তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে বোরোধানের বীজতলা কিছুটা লাল হতে পারে, তবে পানি দিলে ঠিক হয়ে যাবে। এ ছাড়া আলু কিছুটা নষ্ট হতে পারে, তবে এখানে আলু চাষ কম করা হয়।’
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে বোরো ধানে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে চার হাজার ৮০০ হেক্টর। এ ছাড়াব এক হাজার ৫৯৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি, ৫৫৫ হেক্টর জমিতে আলু, ২৭৯ হেক্টর জমিতে টমেটো ও ৪৬৬ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে।