সাগর বৈদ্য, বছর কয়েক আগেও সেলুনে কাজ করতেন। আর এখন একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক বনে গেছেন; গড়ে তুলেছেন বণিক সমিতি। এলাকায় প্রভাশালী হয়ে উঠেছেন। বসবাস করেন বিলাসবহুল বাড়িতে।
সাগরের এই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাওয়ার নেপথ্যে কাজ করেছে তার অনলাইন জুয়ার নেটওয়ার্ক। এর কারণে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছেন, তবুও থামেনি তার জুয়ার প্ল্যাটফর্ম। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সংকর সেন গ্রামের নারায়ণ বৈদ্যর ছেলে সাগর বৈদ্য এখন যাপন করেন বিলাসবহুল জীবন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, দুই বছর আগে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের হবিগঞ্জ রোডের জেন্টস পার্লারে কাজ করতেন সাগর। সেখান থেকেই শুরু করেন অনলাইনে জুয়া খেলা। কয়েক দিন যেতে না যেতেই তার জীবনের চাকা ঘুরে যায়; হয়ে ওঠেন কোটিপতি। কয়েক বছরের মধ্যে অর্থ-সম্পত্তি বেড়ে যাওয়ায় বাড়তে থাকে সাগরের ব্যবসাও। শ্রীমঙ্গলের নতুন বাজারে ফার্ম ফ্রেশ মিট জোন নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন তিনি। সাঘরদিঘি রোডে সুমনা পোল্ট্রি হাউজ নামে আরেকটি খাদ্য বিক্রির প্রতিষ্ঠান শুরু করেন। এ ছাড়া তিনি গড়ে তুলেছেন আশার আলো শ্রমজীবী সমবায় সমিতি নামে একটি সমিতি, যার মাধ্যমে শুরু হয় তার দাদন ব্যবসা। সেটি এখন একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্কে পরিণত হয়েছে। আর এ সবকিছু ঘটে গেছে একপ্রকার চোখের নিমেষে। অনলাইনে জুয়া খেলে রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছেন তিনি।
২০২১ সালের ১৪ এপ্রিল জুয়া খেলার দায়ে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারও হন সাগর। পরে ছাড়া পেয়ে নতুন উদ্যমে জুয়ার নেটওয়ার্ক বাড়াতে থাকেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রীমঙ্গলের এক ব্যবসায়ী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাগর কাতার প্রবাসীদের দিয়ে জুয়ার প্ল্যাটফর্ম নিয়ন্ত্রণ করে। শ্রীমঙ্গলের শতাধিক অনলাইন স্ক্যামার ও জুয়াড়িকে জুয়া খেলা শেখায়, এমনকি তাদের ডলার দিয়েও সহায়তা করে সে।’
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় শতাধিক কিশোর ও তরুণ নিষিদ্ধ অনলাইন জুয়া ও স্ক্যামিংয়ে জড়িত। সাইবার অপরাধের মাধ্যমে ডলার কামানোর মোহে পড়েছেন গৃহবধূ থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজগামী ছাত্রীরাও। আর এর পরিসর দিন দিন বাড়ছে। প্রশাসনের তৎপরতার পরও কৌশলে পিঠ বাঁচিয়ে চলছেন এসব অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িতরা।
স্ক্যামিং একপ্রকার অনলাইনকেন্দ্রিক প্রতারণার ফাঁদ। স্ক্যামাররা অনলাইনে যৌন-সংক্রান্ত ফাঁদ পেতে দেশি-বিদেশি ব্যবহারকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করে থাকেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সম্পত্তি কেনা-বেচার মধ্যাস্থতাও করেন তারা। দ্রুত ধনী হওয়ার প্রতিযোগিতায় এই অন্ধকার গলিতে কোনোকিছু না ভেবেই পা বাড়াচ্ছে উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীরা।
অনলাইন স্ক্যামিংয়ে অভিযুক্ত স্থানীয় মো. লকন নামের এক যুবক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওয়ানএক্সবেট, মিলবেটসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে গেম খেলে ও বাজি ধরে এসব জায়গা থেকে ডলার আসে। আবার অভিজ্ঞ স্ক্যামাররা গ্রাহকদের সঙ্গে চ্যাট করেন। গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য, পাসপোর্ট ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের মতো সংবেদনশীল তথ্য সংগ্রহের পর বিশেষ কায়দায় তাদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়।’
এ বিষয়ে জানতে সাগর বৈদ্যর সঙ্গে যোগাযোগ করে নিউজবাংলা। মোবাইল ফোনে অনলাইন জুয়া ও স্ক্যামিংয়ের অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতেই ক্ষেপে যান তিনি। বলেন, ‘আমি কীভাবে কী করেছি তা আপনাকে জানাব কেন? অনলাইনে কী করি না করি তা আপনাকে জানানোর কিছু নেই। এসব জেনে আপনার কী দরকার?’ বলে ফোন কেটে দেন তিনি।
এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান বলেন, ‘দেশে অনলাইনে জুয়া সম্পূর্ণ অবৈধ। কেউ এই ধরনের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করলে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে।’