‘আমার ৭ কিয়ার (৩০ শতাংশে ১ কিয়ার) জমি আছে। প্রতি বছর ধান চাষ শেষে জমি পতিত থাকতো। এখন আর আমার জমি পতিত থাকে না। একটার পর একটা ফসল চাষ করতে পারছি। একই জমিতে ধান ও অন্যান্য ফসল চাষ করা যাচ্ছে। বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা এখন প্রশিক্ষিত হচ্ছি। ধান কাটার পর এখন আমার জমিতে ভুট্টা, সরিষা, মাসকলাই রোপণ করেছি।’
কথাগুলো বলছিলেন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের কৃষাণী জাহেদা বেগম।
একই গ্রামের প্রবীণ কৃষক দারু মিয়াও জানালেন একই কথা। বললেন, ‘আগের তুলনায় এখন অনেক ফসল ফলাতে পারি। এখন কোন ফসল কীভাবে কোন সময় লাগাতে হয় সেটা জানি। কীভাবে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে পরিচর্যা করা লাগে সেটাও জানি। ট্রেনিং করে আমরা এসব জেনেছি। তাই ফসল উৎপাদনে খরচ কম ফলন বেশি পাই।’
সুনামগঞ্জের কৃষক-কৃষাণীদের আধুনিক কৃষিতে প্রশিক্ষিত করতে ও তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়াতে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বিনা সুনামগঞ্জ উপকেন্দ্র। এ প্রশিক্ষণেই বদলে যাচ্ছে সুনামগঞ্জের কৃষি।
সর্বশেষ বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ৭০ জন কৃষক-কৃষাণী নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘বিনা উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল ও স্বল্পজীবনকালীন সরিষার জাত পরিচিতি, আন্তপরিচর্চা ও সংরক্ষণ’ শীর্ষক প্রশিক্ষক কর্মশালা।
বিনা সুনামগঞ্জ উপকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান মানিকের পরিচালনায় প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি পরমাণু গবেষণা ইন্সটিটিউট এর মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিনা’র সিএসও (আরসি) ড. মো সিদ্দিকুর রহমান, তেল জাতীয় ফসল বৃদ্ধি উৎপাদন প্রকল্পের পরিচালক ড. মো রফিকুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুনামগঞ্জের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম, অতিরিক্ত উপ-পরিচালক শওকত ওসমান মজুমদার। অনুষ্ঠানে তেল জাতীয় ফসলের পরিচিতি ও পরিচর্যা নিয়ে প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলিফ হোসাইন।
বিনা উপকেন্দ্র সুনামগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. নুরুন নবী মজুমদার বলেন, সরকারের লক্ষ উন্নয়নে তেল জাতীয় ফসল উৎপাদনে আমরা কাজ করছি। দেশের ১৩টি সাবস্টেশন ১টি হেড সহ বিনার ১৪ টা কেন্দ্র কৃষকদের সাথে যোগাযোগ করে, মাঠ দিবস আয়োজন করে, প্রশিক্ষণ দিয়ে তেল উৎপাদন বাড়াচ্ছি। আমাদের উদ্দ্যেশ্য কোন জমি যেন পতিত না থাকে। ধান চাষের পরে তেল জাতীয় ফসল চাষ করা। সে জন্য কৃষকদের সহযোগিতা করে যাওয়া। স্থানীয় জাতের সরিষা গাছ ছোট হয় , ফসল কম হয়। বিনার সরিষা গাছ বড় হয়, রোগ বালাই কম হয় এবং ফসল বেশি হয়। তাই বিনা সরিষা চাষে লাভ বেশি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা বিমল চন্দ্র সোম বলেন, আমরা এখন কৃষক ও কৃষিকে আধুনিক করছি। আধুনিক পদ্ধতিতে কৃষি কাজ করলে ফসল বেশি ফলানো যায়। বিনাও এই কাজ করে যাচ্ছে। বিনার সরিষা অন্যান্য যেকোনো সরিষার তুলনায় অনেক ভালো।