দীর্ঘ সেশন জট থেকে মুক্তির দাবিতে কাফনের কাপড় পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন চবির শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান (ফিজিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড স্পোর্টস সায়েন্স) বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন ফটকে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলনের নামেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাদের অনেকে কাফনের কাপড়, মাথায় সাদা কাপড় বেঁধে সেশন জট থেকে মুক্তির দাবি জানান।
শাটল ট্রেনও অবরোধ করেন আন্দোলনরতরা। ফলে দুপুর আড়াইটা থেকে শাটল চলাচল বন্ধ রয়েছে। বেলা সাড়ে তিনটায় এ রিপোর্ট লেখাকালে এখনও আন্দোলন চলমান।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফিজিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের কোনো ব্যাচ এখনও শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারেনি। একটি ব্যাচ স্নাতক শেষ করলেও স্নাতোকোত্তর এখনও শেষ হয়নি। প্রতিটি সেশনে রয়েছে কয়েক বছরের সেশন জট।
তাদের দাবি, ‘বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ করে তাদের জট নিরসনের স্থায়ী সমাধান করতে হবে। পাশাপাশি অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রণয়ন করে নিয়মিত পরীক্ষা নিতে হবে। ক্লাসরুম সঙ্কট নিরসন করতে হবে।’
এ বিষয়ে স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী মুহাম্মদ সফিউল্লাহ বলেন, ‘২০১৫-১৬ সেশন থেকে আমাদের ডিপার্টমেন্ট চালু হয়েছে। কিন্তু, এ পর্যন্ত আমাদের কোনো শিক্ষক নেই, নির্দিষ্ট অ্যাকাডেমিক ভবন নেই। শিক্ষক সঙ্কটের জন্য আমরা দীর্ঘ সেশন জটে আটকে আছি। আট বছরেও এখনও কোনো ব্যাচ বের হতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিটি সেশনে ২-৩ বছর করে জট৷ বাংলাদেশে এমন কোনো বিভাগ আছে কি যেখানে এত বছরেও শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারে নাই? আমরা প্রশাসনের কাছে যতবারই গিয়েছি, তারা শুধু আশ্বাসই দিয়েছে। আমরা ৮ বছর ধরে শুধু আশ্বাসই পাচ্ছি, কোনো স্থায়ী সমাধান পাচ্ছি না।’
নেহাল ফাহিম নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের একটা সেমিস্টার শেষ করতে ছয়মাস লাগার কথা। সেখানে দেখা যাচ্ছে একটা সেমিনার শেষ করতে ১ বছরও লেগে যাচ্ছে। আমাদের ক্লাসরুম আছে তিনটা, ব্যাচ আছে আটটা।’
স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল মনসুর বলেন, ‘আমরা বিজ্ঞপ্তি দিয়েও শিক্ষক পাইনি। গেস্ট টিচার তো আর স্থায়ী টিচারের মতো কাজ করেন না। স্থায়ী শিক্ষক থাকলে বিভাগের সঙ্কটগুলো কাটানো যেত।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিভাগ চালু হলেও স্থায়ী কোনো বিল্ডিং ছিল না। স্থায়ী ক্লাস রুমের বিষয়টা হুট করে বললেই আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব না। বিষয়টা প্রক্রিয়াধীন। আশা করি, অতি শীগগিরই সব সমস্যার সমাধান হবে।’
ষোলশহর রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘শাটল ট্রেনের ইঞ্জিনের চাবি নিয়ে আটকে রেখেছে তারা (আন্দোলনকারীরা), তাই শাটল চলাচল বন্ধ রয়েছে। একটি শাটল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে, আরেকটি চট্টগ্রাম স্টেশনে অপেক্ষা করছে। ছাত্রদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সমঝোতা হলে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নুরুল আজিম সিকদার বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি সমাধানের জন্য। ভিসি মহোদয় তাদের বসার জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন, তারা এখনও আসেনি। শাটল আপাতত বন্ধ আছে; চালু হবে।’