‘গত সাত থেকে আট দিন ধরে বেশি শীত পড়েছে। কাদাপানিতে নেমে কাজ করতে গিয়ে হাত-পা হিম শীতল হয়ে যাচ্ছে। কাজে ব্যাঘাত ঘটছে।’
কথাগুলো বলছিলেন নওগাঁর আত্রাই উপজেলার সোনাতলা গ্রামের কৃষক আব্দুস ছালাম।
রাতভর বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। দিনব্যাপী কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকছে সড়ক ও মাঠঘাট। সেই সঙ্গে বইছে হিমেল হাওয়া। গত এক সপ্তাহ ধরে উত্তরের জেলা নওগাঁয় এমন অবস্থা।
তীব্র শীতে কাবু হয়ে পড়েছে জনজীবন। বেশি বিপাকে পড়েছেন জেলার কৃষকরা। শীতের তীব্রতায় ইরি-বোরো আবাদসহ মানুষের দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কৃষি বিভাগ থেকে দেয়া হচ্ছে নানান পরামর্শ।
রাণীনগর উপজেলার দেউলা গ্রামের কৃষক রঞ্জিত সাহা বলেন, ‘খুব ঠান্ডা লাগিচ্ছে। ঠান্ডার কারণে হামরা (আমরা) ঠিকমতো জমিত কাম করবার পারিচ্ছি না (পারছি না)। মাঝে মাঝে আগুন জ্বালায় ঠান্ডা নিবারণ করিচ্ছি। ইরি-বোরো আবাদের জন্য ধান লাগানো কঠিন হয়ে গেছে, তবুও অনেক কষ্ট হলেও কাম তো করা লাগবেই।’
নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁসাইগাড়ী মাঠে ধান রোপণের কাজ করছেন জাহিদুল ইসলাম, লিয়াকত আলী, রজজান হোসেনসহ কয়েকজন কৃষক।
এসময় কথা হলে তারা জানান, শীত ও কুয়াশার কারণে জমিতে কাজ করা যাচ্ছে না ঠিকমতো। কিছুক্ষণ পর পর কাজ বন্ধ করে জমির ধারে এসে আগুন পোহাতে হচ্ছে। এমন শীত হলে আমাদের কাজ করা কঠিন হয়ে যাবে। এর ফলে সঠিক সময়ে ধান রোপণ করাও মুশকিল হয়ে যাবে।’
দিন পেরিয়ে রাত এলেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির ফোঁটার মতো ঝরছে কুয়াশা, তবে শুধু জীবন-জীবিকার তাগিদে হাড় কাঁপানো শীতকে উপেক্ষা করে ঘর থেকে বের হচ্ছেন গুটি কয়েক মানুষজন। এর মধ্যেই শীতের কাপড় জড়িয়ে কাজের জন্য মাঠে ছুটছেন তারা।
নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের উচ্চ পর্যবেক্ষক হামিদুর রহমান বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরেই আবহাওয়া ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকছে। ফলে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। আরও বেশ কয়েকদিন শীত ও কুয়াশার তীব্রতা থাকবে।’
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এবার জেলায় এক লাখ ৯১ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা র্নিধারণ করা হয়েছে। যেহেতু এখন বোরো লাগানো শুরু হয়ে গেছে। বীজগুলোও রোপণ যোগ্য হয়ে উঠেছে ফলে এখন আর শৈত্যপ্রবাহের কারণে বীজতলা নষ্ট হবার সম্ভবনা নেই।
‘আর যাদের বীজ এখনও ছোট আছে আমরা তাদের পরামর্শ দিচ্ছি বিকেলে বীজতলা ঢেকে রেখে সকলে বেলা বাড়ার সাথে সাথে খুলে দিতে। মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের আমরা নানা ধরনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত পাঁচ থেকে ছয়দিন প্রচণ্ড কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহের কারণে আলুর পাতাগুলো কুঁকড়ে যাচ্ছে। এটাকে রেডব্লাইড বলা হয়। এটা প্রতিরোধে আমরা কৃষকদের ছত্রাক নাশক স্প্রে করার পরামর্শ দিয়ে আসছি।’