আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অগ্রগতি, সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন। সূত্র: ইউএনবি
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের একটা টাইমলাইন ঠিক করে ফেলেছি। ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সাপ্লাই থাকবে। আমরা যেভাবে বিদ্যুতে করেছি- এত তারিখের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুতায়ন হবে, গ্যাসের ক্ষেত্রেও সেরকম পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি।’
তিনি বলেন, ‘এখন আমরা মাত্র ২০ শতাংশ গ্যাস বিদেশ থেকে আমদানি করি। বাকি ৮০ শতাংশ নিজস্ব গ্যাস ব্যবহার করছি। আমাদের আমদানির গ্যাস থাকবে। তবে আমদানির গ্যাসের পরিমাণটা খুব বেশি বড় করতে চাই না। মাঝখানে যে গ্যাপটা থাকবে তা আমদানির গ্যাস দিয়ে আমরা পূরণ করতে চাই।’
নসরুল হামিদ বলেন, ‘ভোলায় এবং নতুন এরিয়ায় যে পরিমাণ গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে, ভবিষ্যতে যদি গভীর সমুদ্রে গ্যাস পাওয়া যায় তাহলে জ্বালানি বিভাগ একটা ভালো অবস্থায় থাকবে বলে আমরা মনে করি। মনে হচ্ছে আমরা সুখবর পাচ্ছি, এটা হচ্ছে বড় বিষয়।’
গ্যাসের সমস্যা কাটতে পারে মার্চে
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। গ্যাস একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বেশ কিছুদিন ধরে গ্যাসের স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। কারণ একটি এফএসআরইউ (ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট) নিয়ে আমরা কাজ করছি। এই অসুবিধা খুবই সাময়িক বলে আমি মনে করি। প্রচণ্ড শীতের কারণেও গ্যাসের চাপ কিছুটা কমে যায়।
‘এফএসআরইউ (সংস্কারে নেয়া) চলে আসছে। আমরা আশাবাদী আগামী এক/দুদিনের মধ্যে এফএসআরইউ চালু হয়ে যাবে। আর তাহলে সিস্টেমে আরও ৪০০ এমএমসিএফ গ্যাস যুক্ত হবে।’
আগামী ১৭ থেকে ১৮ জানুয়ারি আরেকটি এফএসআরইউ সংস্কারে পাঠানো হবে জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, ‘আমাদের একটি বড় পরিকল্পনা (প্ল্যান) হলো আগামী মার্চ থেকে যেন (গ্যাস) নিরবচ্ছিন্ন রাখতে পারি। সামনে রোজার মাস। সেটাকে সামনে রেখে আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আরও দুটি এফএসআরইউ আনার পরিকল্পনা নিয়েছি। কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ২০২৬ ও ২০২৭ সালের দিকে দুটি এফএসআরইউ যুক্ত হবে। আমরা মনে করছি ২০২৭ সালে আমাদের গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৬ হাজার এমএমসিএফ-এ গিয়ে দাঁড়াবে।’
গ্যাস অনুসন্ধানে মিলতে পারে সুখবর
নসরুল হামিদ বলেন, ‘আমাদের অগ্রাধিকার হলো, নিজস্ব গ্যাস আবিষ্কার করা। খনন করা কূপগুলোর অধিকাংশে গ্যাস আবিষ্কার করেছি। ছোট হলেও অবস্থা ভালো। ভোলা থেকে বরিশালের পাইপলাইনটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় প্রায়োরিটি। এটার কার্যক্রম আমরা এ বছরই শুরু করব। ভোলা থেকে সিএনজি আনা শুরু হয়েছে। এটা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকবে। মার্চের মধ্যে এটা পুরোদমে চালু হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিবিয়ানা এরিয়ার বিষয়ে আমরা খুবই আশাবাদী। সেখানে বিপুল গ্যাসের সন্ধান পেতে যাচ্ছি। এ বছরের সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার হচ্ছে নিজেদের গ্যাস আহরণ করা। প্রায় ৪৬টি কূপ এবং পরবর্তী ধাপে আরও ১০০টি কূপ খননের পরিকল্পনা নিয়েছি।
‘আমরা চাচ্ছি ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৬টি কূপ খনন শেষ করব। পরবর্তী সময়ে এটার সমান্তরালে আরও ১০০ কূপ খনন করার পরিকল্পনা আছে। আমরা আশাবাদী ২০২৫ সালের মধ্যে আরও ৫০০ এমএমসিএফ গ্যাস নিজস্ব উৎস থেকে যোগান দিতে পারব।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আরেকটি সুখবর আমরা পেতে যাচ্ছি, তবে এখনও সেটা সম্ভাবনার মধ্যে। নতুন করে ১ দশমিক ৬ টিসিএফ গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা গেছে বিবিয়ানার ফ্ল্যাঙ্ক এরিয়ায়। সেখানে শেভরন কাজ করছে। সেখানে আমরা যদি শুরু করি, তাহলে এ বছরের শেষের দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারব।
‘আর কী পরিমাণ তেল আমরা পাব সে বিষয়ে আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে তা জানতে পারব।’
গ্যাস নিয়ে হবে মাস্টারপ্ল্যান
নসরুল হামিদ বলেন, ‘আগামী ৫০ বছরের জন্য গ্যাস ব্যবস্থাপনা ও বিতরণের মাস্টারপ্ল্যান আমরা পরিকল্পনার মধ্যে আনব। এই মাস্টারপ্ল্যান পাঁচ বছর পর পর রিভিউ হবে। আমরা পরামর্শক হায়ার করার চেষ্টা করছি।
‘বিপিসির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার হলো চট্টগ্রাম থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে থার্ড টার্মিনালে নিয়ে আসা। এটা দ্রুততার সঙ্গে শেষ করতে হবে।’
গরমে বিদ্যুতের চাহিদা হতে পারে ১৭ হাজার মোগাওয়াট
গরমের তীব্রতা এবার বাড়তে পারে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘এবার গরমে বিদ্যুতের চাহিদা সাড়ে ১৭ হাজার মেগাওয়াটের উপরে হতে পারে। সেটার প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি। সময়মতো কয়লা, গ্যাস ও তেল যোগান দেয়ার বিষয়টি যদি আমাদের হাতে থাকে, তবে অবশ্যই আমরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে পারব। কারণ আমাদের সেই পরিমাণ বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রস্তুত আছে।’
মধ্যপ্রাচ্যে গোলযোগ সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে। সেটি আগামী দিনগুলোতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হতে পারে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, গ্যাস ও তেলের দাম বাড়ার কারণে বিদ্যুৎ-জ্বালানির ক্ষেত্রে বছরে ১৩ বিলিয়নের বেশি ব্যয় করতে হয়েছে।
কৃষি জমি নষ্ট না করে, পরিবেশের ক্ষতি না করে যতটুকু পারা যায় কয়লা উত্তোলনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে নির্দেশনা চাওয়া হবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।
আগামী মাসের মধ্যে প্রায় ৪০ মেগাওয়াট হাইড্রো বিদ্যুৎ আমদানির জন্য নেপালের সঙ্গে চুক্তি হবে জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, ‘৫০০ মেগাওয়াট নিয়ে কাজ করছি। সেটাও প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। আমাদের অঙ্গীকার অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ ক্লিন এনার্জি নিশ্চিত করব।’
মূল্য সমন্বয়ের নতুন পদ্ধতি কবে নাগাদ কার্যকর হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মার্চের পরবর্তী সময়ে এপ্রিল, মে ও জুনের দিকে প্রথমে শুরু হবে তেলেরটা। তারপর আস্তে আস্তে...। পার্শ্ববর্তী দেশ যেটা করে, তারা প্রতিদিন করে। আমরা প্রতি মাসে করব।’
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যত দ্রুত আমরা প্রযুক্তি নিয়ে আসতে পারি। বিদ্যুতের আবেদন, বিল অনলাইন করতে পারলে সেটি দুর্নীতি বা কারচুপি প্রতিরোধের বিষয়ে বড় জায়গা তৈরি করবে।