শীত আসার পর চাকরিজীবী সজীব ইসলামের পরিবারে রান্নার গ্যাসের চাহিদা একটু বেড়েছে। রান্নার পাশাপাশি সকালে গোসলের জন্য গরম পানিরও প্রয়োজন হয় তার। তবে এই চাহিদাটুকুও যেন এখন বিলাসিতা।
রাজধানীর শান্তিনগরের বাসিন্দা সজীব যখন সকালে গোসলের জন্য পানি গরম করতে যান, প্রায়ই দেখেন গ্যাস নেই। কখনও কখনও থাকলেও তা জ্বলে টিম টিম করে। গত দু মাস ধরে শুধু এ এলাকা নয় রাজধানীর অনেক এলাকার অবস্থা একই।
ভোক্তারা বলছেন, রাতে একটু গ্যাস থাকে কখনও কখনও, তবে দিনে আর তা পাওয়া যায় না। সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এবং সন্ধ্যা থেকে রাত ১০/১১টা পর্যন্ত গ্যাস মিলছে না।
গ্যাসের অভাবে কোথাও চুলা জ্বলে টিমটিম করে, কোথাও বা জ্বলেই না। ব্যবহার কম থাকায় গ্যাসের চাপ কিছুটা বেশি থাকছে গভীর রাতে। এ পরিস্থিতিতে পরের দিনের খাবার আগের রাতেই রান্না করে রাখার চেষ্টা করছেন গৃহিণীরা। অনেকে আবার ভরসা করছেন হোটেল-রেস্টুরেন্টের ওপর।
কেউ কেউ লাইনের গ্যাস সংযোগ থাকার পরও সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করছেন। কেউ বা ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন লাকড়ির চুলা।
ঢাকা ও আশপাশের জেলায় গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থা তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে ফোন করে অনেকে অভিযোগ দিচ্ছেন। ফেসবুকেও কেউ কেউ লিখেছেন গ্যাস নিয়ে ক্ষোভের কথা।
রাজধানীর শাহজাহানপুর, হাতিরপুল, যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর, কাঁঠালবাগান, কাজীপাড়া, রায়েরবাজার, মোহাম্মদপুর, মধুবাগ, রামপুরাসহ বেশ কিছু এলাকায় খবর নিয়ে গ্যাস সংকটের কথা জানা গেছে।
মধুবাগের বাসিন্দা তাশফিয়া তাসনিম নিউজবাংলাকে বলেন, গত দু মাস ধরে গ্যাস সংকট। শীত বাড়ার সাথে সাথে এই সংকট আরও বেড়েছে। গ্যাস দিনে পাওয়া যায় না বললেই চলে। রাতে পেলেও চাপ খুব কম।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঠান্ডায় লাইনে গ্যাস জমে সংকট দেখা দিয়েছে। এলএনজিতে রূপান্তরের দুটি টার্মিনালের একটি মেরামত কাজের জন্য বন্ধ। এতেও সরবরাহ কমেছে। সারা দেশে এখন প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা ৪২০ কোটি ঘনফুট। পেট্রোবাংলা সরবরাহ করছে ২৫৫ কোটি ঘনফুট। আর এলএনজি থেকে পাওয়া যাচ্ছে ৫০ কোটি ঘনফুট।
তবে মঙ্গলবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে চলমান গ্যাস সংকটকে সাময়িক বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।
তিনি বলেন, ‘চলমান গ্যাস সংকট সাময়িক। এটা কমিয়ে আনার জন্য কাজ চলছে। আগামী মার্চ থেকে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের দুটি এলএনজি টার্মিনালের মধ্যে একটি সংস্কারের জন্য দেশের বাইরে রয়েছে। এ কারণে শীতে চলমান গ্যাস সংকট আরও বেড়েছে।
তিনি বলেন, প্রতি বছর শীতে পাইপ লাইনে পানি জমার কারণে গ্যাসের সংকট সৃষ্টি হয়। একইভাবে তাপমাত্রা কমে যাওয়াতে গ্যাসের চাহিদা বৃদ্ধি পায়।
২০২৬ সালের মধ্যে দেশে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।