কদিন ধরেই সারা দেশে জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। রাতভর ঘন কুয়াশা, কোথাও কোথাও কুয়াশা থাকছে দিন-রাত সব সময়ই। কোথাও হয়ত একটু সূর্যের দেখা মিলছে। তবে অনেক এলাকায়ই সারা দিনে সূর্যের দেখা মিলছে না। কমছে না শীতের তীব্রতা।
সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। এ ছাড়া শীতজনিত রোগও বেড়েছে। হাসপাতালে ভিড় হচ্ছে রোগীদের। অসহায় মানুষেরা কাজের জন্য ছুটতে পারছেন না। সহায়তার জন্য আবেদন করেছেন তারা। ঘন কুয়াশায় শীতের তীব্রতায় কাবু হয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন জেলার জনজীবন।
কয়েকটি জেলার প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
মৌলভীবাজার
কনকনে ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে গোটা জনপদ। ব্যাহত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। তীব্র ঠান্ডায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষ।
দুইদিন ধরে সূর্যের দেখা নেই চায়ের রাজ্য মৌলভীবাজারে। সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেও একপলকেও দেখা মেলেনি সূর্যের। হিমেল বাতাসের সঙ্গে ঠান্ডায় জনজীবন বিপর্যস্থ।
আকাশ ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকায় সকাল থেকে দেখা মেলেনি সূর্যের। সোমবার শ্রীমঙ্গলস্থ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, তবে জেলার কোথাও আকাশে রোদের দেখা না মেলায় ঠান্ডা বিরাজমান রয়েছে। রোববার থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা ছিল মৌলভীবাজারের আকাশ।
বেলা বাড়ার সঙ্গে কিছুটা কুয়াশা কাটলেও কমেনি শীত, মেলেনি সূর্যের দেখা। সন্ধ্যায় মৃদু শীতল বাতাসে শীতের তীব্রতা বাড়তে পরে বলে ধারণা করছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। আগামী দুই একদিনের মধ্যে তাপমাত্রা আরও নিচে নামতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।সরেজমিনে দেখা যায়, ঠান্ডায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে জেলার কয়েক হাজার চা শ্রমিক। রাত থেকে কনকনে ঠান্ডায় শীত নিবারণের জন্য তারা খড়কুটো জ্বালিয়ে উষ্ণতা নিচ্ছেন। বোরো মৌসুমকে সামনে রেখে ঠান্ডা উপেক্ষা করে মাঠে কাজ করছেন অনেক কৃষক। কনকনে ঠান্ডায় সময়মতো কাজে বের হতেও পারছেন না তারা। চারিদিকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির ফোটার মতো পড়ছে কুয়াশা।
এমন অবস্থায় চা শ্রমিক ও নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছেন বিপাকে। যার ফলে সর্বসাধারণের পাশাপাশি চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে শ্রমজীবী মানুষ, বাগানের চা শ্রমিকসহ খেটে খাওয়া মানুষজন। তীব্র শীত নিবারণে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার দিকে তাকিয়ে আছে চা শ্রমিকসহ ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষরা। হাড়কাঁপানো শীতে শীতজনিত রোগ সর্দি-কাশি, ঠান্ডা, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, হাঁপানিসহ শীতজনিত নানা রোগ নিয়ে শিশু এবং বয়স্করা ভর্তি হয়েছেন জেলা-উপজেলার বিভিন্ন সরকারি ও প্রাইভেট হাসপাতালে।
কমলগঞ্জ পৌর এলাকার রিকশা চালক চনু মিয়া বলেন, ‘বাক্কা কয়েক দিন থাকি (থেকে) খুব ঠান্ডা। মানুষ বাড়ি ঘর থাকি (থেকে) বার হর (হচ্ছে) না। বাজারো (বাজারে) মানুষ একবারে কম, রিকশার মাঝে মানুষ উঠেনা ঠান্ডা মনে করিয়া (করে)। এমন শীতের কারণে আমরাও বিপদে পড়েছি।’
শ্রীমঙ্গলের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার পর্যবেক্ষক আনিস আহমেদ জানান, সোমবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ধরা হয়েছে। এমন আবহাওয়া আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
এদিকে শীতের তীব্রতার সঙ্গে বাড়ছে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, ঠান্ডাজনিত ডায়রিয়া। কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার এম মাহবুবুল আলম এ সময়ে ঠান্ডাজনিত রোগ বাড়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত অনেক শিশু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে।’
সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত ডাক্তার অধ্যাপক যোগিন্দ্র কুমার সিং জানান, প্রতিদিনই নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। তবে বয়স্করা হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট বেশি সমস্যায় ভুগছেন।
রাজশাহী
রাজশাহীতে হাড় কাঁপানো শীত পড়েছে। গত কয়েকদিন ধরেই শীতের তীব্রতা বেড়েছে। সোমবার সারা দিনই কনকনে শীত ছিল। হিমেল বাতাসে বেড়ে গেছে শীতের তীব্রতা। এদিন, সূর্যের মুখ দেখতে পায়নি রাজশাহীর মানুষ। গত দুদিনের তুলনায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বাড়লেও বেশি ঠান্ডা অনুভূত হয়েছে সোমবার। সকালে ঘন কুয়াশায় ঢেকে ছিল মাঠ ঘাট। বেলা বাড়ার পর কুয়াশা কাটলেও সূর্যের দেখা না পাওয়ায় রাস্তায় লোকজনের চলাচল কমেছে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শীতে কাহিল নিম্ন আয়ের মানুষ। বয়স্ক ও শিশুদের শীতে অসুস্থতা বাড়ছে। ফুটপাতের দোকানগুলোতে গরম কাপড়ের জন্য ভিড় করছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। এদিকে, ঘন কুয়াশা ও শীতে বোরো বীজতলা রক্ষা করতে কৃষকরা বাড়তি যত্ন নিচ্ছেন।
ঠাকুরগাঁও
শীতে কাঁপছে উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও। পুরো জেলা ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকছে রাত, দিনে দেখা মিলছে না সূর্যের। ফলে শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের মানুষ।
জেলায় কোনো আবহাওয়া অফিস না থাকায় তাপমাত্রার খবর পুরোপুরি অনুমান নির্ভর। পার্শ্ববর্তী জেলা পঞ্চগড় ও দিনাজপুর থেকে তাপমাত্রা জেনেই ধারণা করতে হয় ঠাকুরগাঁওয়ের আবহাওয়া। ফলে সব সময় বিপাকে পড়ে এ অঞ্চলের কৃষিসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষ।
কৃষক করিমুল ইসলাম বলেন, ‘এবারের কুয়াশা আর হিম শৈত্যপ্রবাহ খুব প্রকট। তবে আমাদের আবহাওয়ার সঠিক খবর আমরা জানতে পারি না। খাদ্য উদ্বৃত্ত এ জেলায় আবহাওয়া অফিস না থাকার কারণে আমরা আগাম খবর পাই না। তাই আগাম কোনো প্রস্তুতিও নিতে পারি না।’
এদিকে শীতের প্রকোপে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সব বয়সী মানুষ। আগুন পোহানো ছাড়া যেন শীত যাচ্ছে না তরুণ যুবক বৃদ্ধাদের। দিনে রাতে সব সময় আগুনের পাশে বসে গা গরম করতে দেখা যাচ্ছে প্রায় সবখানেই।
মামুন আহম্মেদ নামের একজন বলেন, ‘হারকাঁপানো এ শীতের হাত থেকে বাঁচতে অনেক মানুষই ঘরবন্দি আর আগুন নির্ভর হয়ে পড়েছি। আর কতদিন আবহাওয়া এমন থাকবে আমাদের জেলাতে জানা নেই। তাই আগাম কোনো প্রস্তুতিও নেই কর্মক্ষেত্রে। আমাদের আবহাওয়া অফিস প্রয়োজন।’
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওপর নির্ভর করে আমরা কৃষকদের সঙ্গে সমন্বয় করার চেষ্টা করি। তবে আমাদের একটি অটোমেটিক আবহাওয়া অফিস স্থাপনার প্রস্তাবনা আছে।’
বিলকিস বেগম নামে এক নারী বলেন, ‘শিশুদের নিয়ে আমরা অনেক বেশি বিপাকে পড়েছি। বিশেষ করে কাপড় সংকটে রয়েছি। একদিকে যেমন রোদের অভাবে কাপড় শুকাচ্ছে না অন্যদিকে অনেক গরিব মায়েদের কাপড়ের অভাবে ভোগান্তি চরমে। কম্বলের পাশাপাশি এ অঞ্চলে শিশুদের জন্য কাপড় সরবরাহ করা জরুরি। পানি নিয়ে যেসব শ্রমিকরা কাজ করেন তাদের জন্য এ শীত অনেক বেশি ভোগান্তির হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
হাসপাতালে দিন দিন বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। এদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যায় বেশি বলে জানিয়েছেন ঠাকুরগাঁও আধুনিক জেনারেল হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার রাকিবল আলম।
তিনি বলেন, ‘এবারের শীতের আচরণ অনেকটা ভিন্ন। ডিসেম্বরে শীত তেমন না পড়ার কারণে মানুষ কিছুটা অসাবধানতায় ছিল। জানুয়ারির শুরু থেকে হঠাৎ করে শীত জেঁকে বসেছে। বিশেষ আগাম কোনো বার্তা পায়নি এ অঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষ। ফলে অনেকেই হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে।’
ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের সিভিল সার্জন ডা. নুর নেওয়াজ আহমেদ জানান, এ জেলায় শীতের তীব্রতা অনেক বেশি। তাই শিশু ও বিভিন্ন বয়সের মানুষ তাড়াতাড়ি শীত জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষার জন্য গরম কাপড় পরিধান করতে হবে। শিশুদেরকে ঠান্ডা না লাগানোর জন্য মায়েদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এ শীতে শুধু মানুষ নয় গবাদি পশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন মানুষ। চট দিয়ে গবাদি পশুকে মুড়িয়ে শীত নিবারণ করা হচ্ছে। কুয়াশা আর শিশিরে ভেজা ঘাস তাই অনেকে ঘর থেকে মাঠে নিয়ে যাচ্ছেনা গবাদি পশু। ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার সরবরাহ করা যাচ্ছে না এসব পশুদের।
ঠাকুরগাঁওয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক সোলেমান আলী জানান, জেলার পাঁচ উপজেলাতে ৩৩ হাজার ৪৫০টি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও শুকনো খাবার ১৮৩৭ প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে।
গাইবান্ধা
শীতের কুয়াশায় মোড়ানো উত্তরের জেলা গাইবান্ধা। সোমবার বেলা ১১টা। তখনও সূর্যের দেখা মেলেনি। এমন দৃশ্য এক দিনের নয়, টানা এক সপ্তাহের। উত্তরের হিমেল হাওয়া আর সঙ্গে কুয়াশা। এতে ক্রমেই শীত বাড়ছে এ জেলায়।
পৌষের শেষ সময়ে এসে ঘন কুয়াশার সঙ্গে সকাল-সন্ধ্যা উত্তরের হিমেল হাওয়ার শীতের প্রভাব পড়ছে জেলার নিম্ন আয়ের, দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষগুলোর জীবনে। সব থেকে বেশি বিপাকে পড়ছেন চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী মানুষেরা।
সোমবার সকালে দেখা যায়, ঘন কুয়াশার কারণে গাইবান্ধা পলাশবাড়ি সড়কসহ সব রাস্তাগুলোতে দিনের বেলাতেই লাইট জ্বালিয়ে যান চলাচল করছে। হালকা পোশাকে দেখা মেলে রিকশা, ভ্যানচালকসহ নিম্ন আয়ের গরিব মানুষদের। গাইবান্ধার বাজারগুলোতে সকাল সকাল তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুললেও ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল কম।
বিকেল থেকেই শহর ও হাট-বাজারগুলোতে কমতে থাকে মানুষের আনাগোনা। এতে ব্যবসায় শীতের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বলে জানান একাধিক নিত্যপণ্য বিক্রেতা। সেক্ষেত্রে সব থেকে বিপাকে পড়ছেন ভ্রাম্যমাণ ও ক্ষুদ্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ফুটপাতের দোকানদাররা। শীতের আগমেন শহরে ক্রেতা শূন্য হওয়ার আশঙ্কায় চিন্তার যেন শেষ নেই তাদের।
শহরের ভ্রাম্যমাণ ঝালমুড়ি বিক্রেতা আব্দুর রহিম, ডিম বিক্রেতা রেজাউলসহ একাধিক ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানান, শীত বাড়তে শুরু করেছে। এজন্য বিকেল থেকেই শহরে লোকজন কমতে থাকে। বিক্রি কম হয়।
তবে লেপ-তোশক ও শীতের পোশাক বিক্রির জিপি মার্কেটের দোকানগুলোতে মানুষের বেশ ভিড় দেখা গেছে। তারা স্বল্প দামে তাদের পছন্দের শীতের পোশাকটি বেছে নিচ্ছেন।
এদিকে জেলা হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বাড়ছে সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া ও আমশয়সহ শীতজনিত নানা রোগীর সংখ্যা। এদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যায় বেশি।
গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে আনালেরতাড়ি গ্রামের মালেকা বেগম বলেন, ‘আমার চার বছরের শিশু বাচ্চাটির হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে যায়। রোববার থেকে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছি। বাচ্চা এখন কিছুটা সুস্থ আছে।’
গাইবান্ধা জেলারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাহাবুব হোসেন বলেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এক সপ্তাহের ব্যবধানে গাইবান্ধায় তীব্র ঠান্ডা পড়তে শুরু করেছে। তুলনামূলকভাবে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই শিশু।’
এ ছাড়া শীতে শিশু ও বয়স্কদের বিশেষ যত্ন নেয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘শীতের সময় ঠান্ডা ও বাসি খাবার পরিহার করতে হবে। গরমপানিতে গোসল করাসহ গরম কাপড় পরিধান করতে হবে। সব পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলার হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সগুলোতে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।’
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহামুদ আল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই শীতে নিম্ন আয়ের মানুষদের খুঁজে খুঁজে তাদের কাছে শীতবস্ত্র (কম্বল) পৌঁছে দিতে প্রত্যেকটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মাধ্যমে কম্বল সরবরাহ করা হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলা প্রশাসন সরাসরি এতিমখানা, মাদ্রাসা ও বস্তি এলাকায় বিতরণ করেছে।’
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (এনডিসি) জুয়েল মিয়া বলেন, ‘জেলায় এ পর্যন্ত বিভিন্ন মাধ্যমে ৪৫ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলার শীতার্ত মানুষের জন্য আরও কম্বলের বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হয়েছে।’
নোয়াখালী
কয়েকদিন ধরে ঘন কুয়াশার সঙ্গে হিমেল হাওয়া আর তীব্র শীতের কারণে নোয়াখালীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। কেউ কেউ শীতের কারণে কাজও পাচ্ছেন না। বেশি বিপাকে বয়স্ক ও শিশুরা। তারা আক্রান্ত হচ্ছেন ঠান্ডাজনিত নানান রোগে। শীত থেকে বাঁচতে নিজেকে গৃহবন্দি করে রাখছেন অনেকেই।
সোমবার নোয়াখালীতে বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে বলে জেলা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়। আগেরদিন যা ছিল ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
নোয়াখালী আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত তিনদিন ধরেই শীতের তীব্রতা বেড়ে চলেছে । এ অবস্থা আরও কয়েকদিন যাবত বিরাজমান থাকতে পারে এবং বৃষ্টির প্রভাবে শীতের তীব্রতা আরো বাড়তে পারে। চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।’
অটোরিকশার চালক আবদুর রহিম ও ছানাউল্ল্যাহ বলেন, ‘ঠান্ডার কারণে মানুষজন ঘর থেকে বের না হওয়ায় যাত্রীর সংখ্যা কমে গেছে। ফলে আয় কমে যাওয়ায় সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। পরিবার নিয়ে খুবই বিপাকে আছি।’টাউন হল মোড়ের চা বিক্রেতা আবুল হোসেন ও রফিক জানান, ‘শীতের কারণে সন্ধ্যায় আগের মতো ক্রেতা না আসায় বিক্রি কমে গেছে।’
দিনমজুর কারিমুল হক ও শফিক বলেন, ‘গত কয়েক দিন যে শীত পড়ছে তাতে কাজে যোগদান করতে পারছি না। ঠান্ডায় ফসলের জমিতে কাজ করতে হয়। এখন কাজকর্ম তেমন পাওয়া যায় না।’
এদিকে শীতের কারণে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে অনেকে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন মহিউদ্দিন ও বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘দীর্ঘদিন যাবৎ অ্যাজমা রোগে ভুগছিলাম। শীতের কারণে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেছে।’
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম বলেন, ‘গত একমাস ধরে শিশু এবং বয়স্ক রোগী যাদের আগে থেকে অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়া আছে এমন রোগীর সংখ্যা আগের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেড়েছে।’
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডা. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘শীতজনিত রোগ সর্দিকাশি, জ্বর ও অ্যাজমা রোগী আগের চেয়ে বেশি আসছেন। যার অধিকাংশই শিশু ও বয়স্ক। শিশুদের উষ্ণ স্থানে রাখা ও বয়স্কদের শীতজনিত রোগ থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’