প্রায় এক মণ ওজনের পিতলের তৈরি বলের মতো দেখতে একটি বস্তুর নাম ‘গুটি’। এটি দিয়েই হয় হুমগুটি খেলা।
এ খেলায় নেই কোনো নিয়মকানুন। খেলা পরিচালনার জন্য থাকেন না কোনো রেফারি কিংবা বিচারক। খেলোয়াড়েরও কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই।
গুটি টানাটানিই হলো খেলা। টেনেহিঁচড়ে কাড়াকাড়ি করে যে বা যারা গুটি লুকিয়ে ফেলতে পারবেন, তারাই বিজয়ী। গুটি লুকিয়ে ফেলতে এক দিন কিংবা কয়েক দিনও সময় লাগতে পারে।
অনেকের কাছে খেলাটি অপরিচিত হলেও ময়মনসিংহবাসীর কাছে সুপরিচিত। ঐতিহ্যবাহী ‘হুমগুটি’ খেলায় ঢাকঢোল ও বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে রোববার সকাল থেকে দলবেঁধে হাজারো খেলোয়াড় আর দর্শক খেলার কেন্দ্রস্থল জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার তেলিগ্রাম বড়ইআটা গ্রামে আসেন।
দুপুরে ২৬৫তম এ আয়োজনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ফুলবাড়িয়ার নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য (এমপি) আবদুল মালেক সরকার। বিকেল তিনটায় তেলিগ্রাম বড়ইআটা গ্রামে ধানের পতিত জমিতে খেলোয়াড়দের মাঝে ছেড়ে দিলে ‘হুমগুটি’ নিয়ে শুরু হয় কাড়াকাড়ি।
যখন থেকে শুরু
নথিপত্র ঘেঁটে জানা যায়, এ খেলার গোড়াপত্তন হয় আজ থেকে ২৬৪ বছর আগে। তৎকালীন মুক্তাগাছার জমিদার শশীকান্তের সঙ্গে ত্রিশালের জমিদার হেমচন্দ্র রায়ের জমির পরিমাপ নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। বিরোধ মীমাংসা করতে তেলিগ্রাম বড়ইআটা গ্রামের তালুক-পরগনার সীমানায় এ গুটি খেলার আয়োজন করা হয়। খেলায় বিজয়ী হন মুক্তাগাছা জমিদারের প্রজারা।
জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের পর এটি সম্পূর্ণরূপে সাধারণ মানুষের খেলায় পরিণত হয়, যা আজও চালু রেখেছে এই গ্রামের মোড়লরা। হুমগুটি সারা বছর গ্রামের মোড়লদের তত্ত্বাবধানে থাকে।
কয়েকটি এলাকা মিলে ‘হুমগুটি খেলা উদযাপন কমিটি’ গঠন করা হয়। খেলা পরিচালনার দায়িত্ব থাকে সেই কমিটির ওপর। পৌষ সংক্রান্তির দিনে আয়োজন করা হয় হুমগুটি খেলা।
স্থানীয় ও এমপির ভাষ্য
লক্ষ্মীপুর গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ্ব আবদুল শেখ বলেন, ‘আমার বাপ-দাদারা এই খেলা খেলেছে। আমিও ছোটবেলা থেকেই খেলেছি।
‘এটি ঐতিহ্যবাহী খেলা। এ খেলাকে কেন্দ্র করে লক্ষ্মীপুর, দেওখোলাসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে চলে উৎসবের আমেজ।’
মনোয়ার হোসেন নামে আরেকজন বলেন, ‘হুমগুটি খেলাকে ঘিরে বসা গ্রামীণ মেলায় শিশুদের খেলনা ও খাবারের দোকানে উপচে পড়া ভিড় জমেছে। এটিও আনন্দের অংশ।
‘এখানে খেলা হবে জানতে পেরে এক দিন আগেই কয়েকজন আত্মীয়স্বজন আমার বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। তাদের জন্য নানা রকমের খাবারের আয়োজন করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে ফুলবাড়িয়ার নবনির্বাচিত এমপি আবদুল মালেক সরকার বলেন, ‘জমিদারি আমল থেকে হুমগুটি খেলা হয়ে আসছে। হুমগুটি একটি ঐতিহ্যবাহী খেলা। খেলাকে ঘিরে এলাকায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।’