বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

উৎসবে মাতল পুরান ঢাকা

  •    
  • ১৪ জানুয়ারি, ২০২৪ ১৮:৫৫

পুরান ঢাকার শাঁখারী বাজার, রায়সাহেব বাজার, বংশাল, সূত্রাপুর, বাংলাবাজার, সদরঘাট ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার আকাশে শনিবার সকাল থেকেই নানা রঙের ঘুড়ি উড়তে দেখা যায়। প্রতিটি বাড়ির ছাদে উচ্চৈস্বরে বেজেছে গান। সন্ধ্যায় ছিল আতশবাজি, মুখে কেরোসিন নিয়ে আগুন খেলাও খেলেছেন অনেকে।

ঘুড়ি উড়ানোর উন্মাদনা আর গান-বাজনার তালে তালে সাকরাইন উদযাপন করেছেন পুরান ঢাকাবাসী। দিনভর ঘুড়ি উড়িয়ে সন্ধ্যায় বর্ণিল আতশবাজি, রঙ-বেরঙের ফানুস উড়ানো আর আলোর খেলার মধ্য দিয়ে আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপন করেছেন স্থানীয়রা। আর এই আনন্দ আয়োজনে শামিল হয়েছেন কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী এমনকি বয়োবৃদ্ধরাও।

পুরান ঢাকার শাঁখারী বাজার, রায়সাহেব বাজার, বংশাল, সূত্রাপুর, বাংলাবাজার, সদরঘাট ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার আকাশে শনিবার সকাল থেকেই নানা রঙের ঘুড়ি উড়তে দেখা যায়। প্রতিটি বাড়ির ছাদে উচ্চৈস্বরে বেজেছে গান। সঙ্গে নেচেছেন বিভিন্ন বয়সি নারী-পুরুষ।

উৎসবমুখর পরিবেশে বাড়ির ছাদ থেকে ঘুড়ি উড়ানো, আতশবাজি ফোটানো এবং মুখে কেরোসিন নিয়ে আগুন খেলাও খেলেছেন অনেকে। সব মিলিয়ে পুরান ঢাকা যেন সাকরাইনের আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছিলো।

রাজধানীর কুয়াশাঢাকা ভোরের আকাশে একে একে দেখা দিতে থাকে পানদার, চোখদার, বলদার, দাবাদার, পতঙ্গ, লেজওয়ালা ইত্যাদি নামের ঘুড়ি। শুরু হয় নিজের ঘুড়িকে সর্বোচ্চ উপরে উঠানোর প্রতিযোগিতা। চলে ঘুড়ি কাটাকাটির লড়াই।

দুপুরের পর থেকে আকাশে বুকে বাড়তে থাকে ঘুড়ির সংখ্যা। ঘরে ঘরে শুরু হয় পিঠাপুলির উৎসব। বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হতেই আকাশে উড়তে শুরু করে রঙ-বেরঙের ফানুশ। আতশবাজির আলোয় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে পুরান ঢাকার আকাশ।

সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু হয় সাউন্ড সিস্টেমে উচ্চৈস্বরে গান, সঙ্গে চলতে থাকে নাচ। সন্ধ্যা নামতেই গানের সঙ্গে নাচ, আতশবাজি আর লেজার লাইটের খেলা ছিল প্রায় প্রতিটি বাড়ির ছাদেই। বিশেষ করে আতশবাজিতে রাঙা হয়ে ওঠে পুরো পুরান ঢাকার আকাশ। সন্ধ্যার ঠিক পরই শুরু হয় কেরোসিন মুখে নিয়ে আগুনের খেলা।

সাকরাইন উৎসবটি প্রতিবারের মতো এবারও পুরান ঢাকাবাসী জাঁকজমকপূর্ণ উদযাপন করেছে। নানা রকমের খাবারের আয়োজন থাকে এ অনুষ্ঠানে। দিনে যে উৎসব ছিল ঘুড়ি উড়ানোর রাতে তা পরিণত হয়েছে আলোর খেলায়।

বেশির ভাগ বাড়ির ছাদেই করা হয় আলোকসজ্জা। কোনো বাড়ির ছাদ থেকে ফোটানো হয়েছে আতশবাজি, আবার কোনো বাড়ির ছাদ থেকে উড়ানো হয়েছে ফানুস। উৎসব উদযাপনের রাতে কিশোর-যুবকরা মুখে কেরোসিন নিয়ে আগুনের লেলিহান শিখার বিচ্ছুরণ তৈরি করে, যা সবার মাঝে উচ্ছ্বাসের আবহ নিয়ে আসে।

লক্ষ্মীবাজারের ঠাকুর দাস লেনের নবম তলাবিশিষ্ট একটি বাড়ির ছাদে গিয়ে দেখা মেলে বড় বড় সাউন্ড বক্সসহ গানবাজনার নানা আয়োজন। এ আয়োজনের উদ্যোক্তা চার তরুণ। তাদের একজন আরমান হোসেন বলেন, ‘বাড়ির সবার কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে এ আয়োজন করা হয়েছে। দিনভর ঘুড়ি উড়ানোর পর রাতেও রয়েছে আয়োজন। সন্ধ্যার পর ফানুস উড়ানো হবে। চলবে আতশবাজিও।’

স্থানীয় বাসিন্দা সুকুমার রায় বলেন, ‘সাকরাইনের দিন বিকেলে পুরান ঢাকার আকাশে ঘুড়ি দিয়ে কাটাকাটির খেলা উপভোগ করেন সবাই। নানা রং আর বাহারি আকৃতির ঘুড়ি নিয়ে এতে অংশ নেন তরুণ-তরুণীরা। সন্ধ্যা নেমে এলে উৎসবের আমেজে আসে ভিন্নতা। শুরু হয় মুখে আগুন নিয়ে খেলা, রঙ-বেরঙের আতশবাজি। ফানুসে ছেয়ে যায় পুরান ঢাকার আকাশ। এসব অনুষঙ্গের সঙ্গে রয়েছে গান-বাজনা এবং নাচানাচি। গভীর রাত পর্যন্ত চলে এ উৎসব।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী আফজাল হোসেন বললেন, ১০ বছর ধরে এই উৎসবটা করে আসছি আমরা।

বাংলাবাজারের এলাকার ব্যবসায়ী অজিত কুমার সেন বলেন, ‘সাকরাইন আমাদের পুরান ঢাকার প্রাচীন ঐতিহ্য। ছোটকাল থেকে দেখে আসছি, আমাদের পূর্বপুরুষরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই আয়োজন করে আসছে। আগে পিঠা বানানো হতো। এখন বাড়িতে পিঠা বানানোর আয়োজন কমে গেছে। তবে এখনো সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত না খেয়ে থাকেন।

‘আর ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা দিনটিতে সকালে পিঠা, মোয়াসহ নানা ধরনের খাবার বিলি করেন প্রতিবেশীদের মাঝে। সাকরাইন উৎসবকে পৌষ সংক্রান্তি বা ঘুড়ি উৎসবও বলা হয়।’

এদিকে সাকরাইন উৎসবে ফানুস বিক্রি ও উড়ানো বন্ধে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার নির্দেশনা দিলেও সেই নির্দেশনা বলতে গেলে কোথাওই মানা হয়নি। প্রায় প্রতিটি বাসার ছাদেই সাউন্ডবক্সে বিকট শব্দে বাজছে বাংলা-হিন্দি গান। বিকট শব্দে ফোটানো হয়েছে পটকাও। আর রাতে উড়ানো হয়েছে ফানুস।

এ বিভাগের আরো খবর