ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলায় সরকারি জমি বাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ভূমি অফিসের এক অফিস সহায়কের বিরুদ্ধে।
বাবা-মাকে ভূমিহীন দেখিয়ে ১৬ শতাংশ সরকারি জমি ভোগ দখল করে আসছেন মো. ইলিয়াস মিয়া। তিনি ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলার পাটিখালঘাটা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (পিওন) পদে কর্মরত।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনা তৈরি হলে কচুয়া গ্রামের বাসিন্দা একেএম মোস্তফা কামাল জনস্বার্থে ঝালকাঠি সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা করেন।
ওই মামলায় ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এবং কাঠালিয়ার সহকারী কমিশনারসহ (ভূমি) সাতজনকে বিবাদী করা হয়েছে।
মামলার বিবরণে বাদী লিখেছেন, ‘কাঠালিয়া উপজেলার পাটিখালঘাটা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক (পিওন) মো. ইলিয়াস তথ্য জালিয়াতি করে তার মা-বাবাকে ভূমিহীন দেখিয়ে শৌলজালিয়া ইউনিয়নের কচুয়া বাজারের কাছে ১৬ শতাংশ জমি নিয়ম বহির্ভূতভাবে বন্দোবস্ত নিয়েছে।’
বাদী জানান, বিষয়টি দীর্ঘদিন গোপন রেখে ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর জমি দখলে নেন ইলিয়াস। তখনই বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়। স্থানীয়রা কাঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ঝালকাঠি জেলা প্রশাসককে এ অনিয়মের কথা জানিয়ে ইলিয়াসের জমি বন্দোবস্ত বাতিল করার জন্য লিখিতভাবে অনুরোধ জানান।
জেলা প্রশাসক তার অধিনস্থ কর্মচারী ইলিয়াসের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় চলতি বছরের ২ জানুয়ারি কচুয়া বাজার কমিটির সভাপতি একেএম মোস্তফা কামাল, সাধারণ সম্পাদক এস এম মনিরুল ইসলাম এবং ইউপি সদস্য এইচ এম নাসির উদ্দিন আকাশসহ ৯ জন স্থানীয় বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন।
মামলার বিষয়টি সম্প্রতি জানাজানি হলে বিষয়টি সংবাদমাধ্যমের নজরে আসে।
মামলার বাদীরা জানান, ইলিয়াস মিয়া ভূমি অফিসে চাকরি করার সুবাদে তার বাবা-মা ভূমিহীন না হওয়া সত্ত্বেও তাদেরকে ভূমিহীন দেখিয়ে তৎকালীন কাঠালিয়ার ইউএনও এবং সহকারী কমিশনারকে ম্যানেজ করে সরকারি সম্পত্তি বন্দোবস্ত নিয়েছেন।
তাদের দাবি, জনস্বার্থে অতিদ্রুত এমন বেআইনি বন্দোবস্ত বাতিল করে ওই জমি বাজারের অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়নে অবমুক্ত করতে হবে।
কচুয়া বাজারের ব্যবসায়ী ফিরোজ আলম বলেন, ‘কচুয়া বাজারটি অনেক পুরোনো। সরকারি জমি না থাকার কারণে বাজারের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, অথচ ইলিয়াস সরকারি চাকরি করে জমির ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে জমি দখল করেছে।’
ব্যবসায়ী মো. মোস্তফা হেলাল কিরণ বলেন, ‘কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই কোটি টাকা মূল্যের সরকারি জমি কীভাবে একজন ধনী লোকের নামে বন্দোবস্ত দেয়া হলো তা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে।’
এ বিষয়ে পাটিখালঘাটা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মচারী মো. ইলিয়াস মিয়া বলেন, ‘আমার বাবা মায়ের নামে কোনো জমি নেই তারা ভূমিহীন।’
কাঠালিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা ববি মিতু বলেন, ‘মামলার বিষয়টি আমি অবগত নই। এখন পর্যন্ত আদালতের কোনো কাগজপত্র পাইনি, পাওয়ার পরে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক ফারাহ্ গুল নিঝুম জানান, তিনি ঘটনার বিষয়ে শুনেছেন। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।