শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলা হাসপাতালের পরিত্যক্ত অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর রুমা নামের মধ্যবয়স্ক এক নারী ঘর সাজিয়েছেন। গত ৬ মাস ধরে ভাঙা অ্যাম্বুলেন্সকেই ঠিকানা করেছেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, রুমা নামের পরিচয়হীন ওই নারী মানসিক প্রতিবন্ধী। তাকে নাম জিজ্ঞেস করলে রুমা বলতে শুরু করেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট।’ ঠিকানার কথা জিজ্ঞেস করলে বলেন, ‘আদালত।’ এটুকু ছাড়া নিজের সম্পর্কে আর কিছুই বলতে পারেন না তিনি।
তীব্র শীতে কোনো ধরনের গরম কাপড় ছাড়াই অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে রাত্রিযাপন করেন তিনি। আবার কখনও বিভিন্ন ভবনের খোলা জায়গাতেও তাকে রাত্রিযাপন করতে দেখা যায়। কারও কাছে খাবার চান না তিনি, তবে কেউ ভালোভাবে ডেকে খাবার দিলে খান। স্থানীয় চা দোকানি হেদা মিয়া প্রতিদিন তাকে খাবার দিয়ে আসেন।
প্রথমদিকে কারও সঙ্গে কথা না বললেও, এখন নাম জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন ‘রুমা’।
দোকানদার হেদা বলেন, ‘আমি রুমা পাগলিকে দুইমাস খাওয়াইছি। পরে কোথায় যে গেল আর পাইলাম না। পরে আবার হটাৎ কইরা চার মাস থাইক্কা আইছে। এহন আমি আর অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার মিলে দিনে দুইবার খাওন দেই। আমরা চাই তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক।’
স্থানীয় করিম মিয়া বলেন, ‘আমরা অনেক পাগল দেখছি, তবে এর মতো না। এ পাগল সবার খাবার খায় না, সব জায়গায় থাকেও না। কিছুদিন বাজারে ঘোরাঘুরি করছে, পরে এই অ্যাম্বুলেন্সে থাকা শুরু করছে। কিছু শীতের কাপড় হলে তার জন্য ভালো হয়।’
সম্প্রতি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ভয়েস অফ ঝিনাইগাতী’র সদস্যরা শীতবস্ত্র ও কম্বল নিয়ে রুমার খোঁজ করেন। পরে তাকে পরিত্যক্ত অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর খুঁজে পান তারা। সংগঠনের নেতারা অজ্ঞাত এ নারীর ঠিকানা জানার চেষ্টা করছেন।
সম্প্রতি মানসিক প্রতিবন্ধী ওই নারীকে শীতবস্ত্র দিয়ে আসেন ভয়েস অফ ঝিনাইগাতীর সদস্যরা। ছবি: নিউজবাংলা
ভয়েস অফ ঝিনাইগাতী-র প্রতিষ্ঠাতা জাহিদুল হক মনির বলেন, ‘এই পাগল মহিলা অনেকদিন থেকে থাকতেছে। আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে জানতে পারছি। আমরা তাকে বিভিন্ন সময় খাবার ব্যবস্থা ও শীতের কাপড় দিয়েছি। তার পরিবারের খোঁজ করার জন্য সন্ধান চালিয়েছি।’
ঝিনাইগাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. আল আমীন বলেন, ‘আমাদের এই হাসপাতাল ক্যাম্পাসে ৩০-৩৫ বছরের এক মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে দীর্ঘদিন ধরে দেখছি। উনি দিনের বেলায় হাসপাতাল চত্বরে ঘোরাঘুরি করেন। রাতে পরিত্যক্ত অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর থাকেন। আমরা তার পরিবারের সন্ধান পেলে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করব। তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে।’