চলতি বছরের শুরু থেকে প্রচণ্ড ঠান্ডা ও কুয়াশায় উত্তরের কৃষিনির্ভর জেলা মেহেরপুরের বিভিন্ন এলাকার বোরো ধানের বীজতলা ও পেঁয়াজের চারা নষ্ট হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
কৃষকরা আশঙ্কা করছেন, পেঁয়াজের চারা ও বোরো ধানের বীজতলা নষ্ট হওয়ায় ব্যাহত হতে পারে চাষের লক্ষ্যমাত্রা।
এদিকে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের দেয়া হচ্ছে নানা ধরনের পরামর্শ।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মেহেরপুর জেলায় এ বছর ৩ হাজার ৫৩৬ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৭৩৫ টন। আর চলতি মৌসুমে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৯ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৮১ হাজার ৮৭৭ টন।
পেঁয়াজ চাষি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর এমনিতেই আমাদের এলাকায় পেঁয়াজের আবাদ অনেক বেশি হয়েছে। যার ফলে পেঁয়াজের চারার দাম ৩০ টাকা থেকে বেড়ে কেজি ৯৫ টাকা হয়ে গেছে। আর সেই পেঁয়াজের চারা কুয়াশায় পুড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’
আরেক পেঁয়াজ চাষি সোহেল বলেন, ‘আমি এক সপ্তাহ আগে এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চারা লাগিয়েছি। লাগানো পেঁয়াজের চারা তুলনামূলক আকারে বাড়েনি। বরং পেঁয়াজের চারার আগা পুড়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। এতে করে ফলন পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় মধ্যে পড়ে গেছি।’
ধানের বীজতলা তৈরি করা আওলাদ হোসেন বলেন, ‘আমার দশ কাঠা জমিতে ধানের বীজতলা আছে। আর সপ্তাহ খানেক পরে এসব চারা বিক্রি শুরু করা যাবে। অথচ ঘন কুয়াশায় সব চারার মাথা পুড়ে হলুদ হয়ে গেছে। এ চারার অধিকাংশ বিক্রির অনুপযোগী হয়ে যাবে।
আরেক চারা ব্যবসায়ী শফি বলেন, ‘আমার ধানের চারা দেয়া প্রায় এক মাস হবে। আর ১০ থেকে ১৫ দিন পরে চারা বিক্রি করা শুরু হবে। অথচ শেষ সময় ঘন কুয়াশায় বীজতলাতে থাকা চারা সব পুড়ে নষ্ট হচ্ছে। যার ফলে এবার চারার সংকট দেখা দেয়ার পাশাপাশি দাম বাড়তে পারে।’
মেহেরপুর অঞ্চলের আবহাওয়া তথ্য সরবরাহ করা চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘বুধবারের তুলনায় বৃহস্পতিবারের তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে। আজ চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৭। যা বুধবার ছিল ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১০০। এর পাশেই হচ্ছে মেহেরপুর জেলা।’
মেহেরপুর জেলার কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা সামসুল আলম বলেন, ‘বতর্মানে এ জেলায় ঘন কুয়াশা আর প্রচণ্ড ঠান্ডায় বোরো বীজতলা ও পেঁয়াজের চারার ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে, তবে এই আবহাওয়া দ্রুত ঠিক হয়ে গেলে এ পরিস্থিতির অবসান ঘটবে। কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের এ বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’