জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনারের বিবৃতিকে ত্রুটিযুক্ত ও একপেশে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ‘বিবৃতিটি তখনই গ্রহণযোগ্য হতো, যদি তাতে নির্বাচন প্রতিহত করার লক্ষ্যে সন্ত্রাস ও অগ্নি-সন্ত্রাস, মানুষ পুড়িয়ে হত্যার মতো বিষয়গুলো থাকতো। সেগুলোর নিন্দা জানানো বা কনডেম করা হতো।’
সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
নির্বাচন নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের বিবৃতি প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিবৃতিটি আমি পড়েছি। তাতে আগুন-সন্ত্রাস করে, পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে মানুষ পোড়ানোর ব্যাপারে কোনো কথা নেই। সেখানে মানবাধিকারের কথা বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারের কথা বলা হয়েছে। অথচ গ্রেপ্তার তো তাদেরই করা হচ্ছে যারা আগুন-সন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত।’
তিনি বলেন, ‘মানবাধিকার হাইকমিশনারকে বলবো গাজায় যেভাবে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে তা নিয়ে কিছু বলার জন্য। মানবাধিকার কমিশনের এই বিবৃতি তখনই ঠিক ও গ্রহণযোগ্য হতো, যদি সেখানে নির্বাচনকে প্রতিহত করার লক্ষ্যে যেভাবে সন্ত্রাস ও অগ্নি-সন্ত্রাস চালানো হয়েছে, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে, সে বিষয় নিয়ে বক্তব্য থাকতো এবং সেগুলোর নিন্দা জানানো বা কনডেম করা হতো। কিন্তু তা নেই বলে এই বিবৃতি পক্ষপাতদৃষ্ট, অসম্পূর্ণ এবং একপেশে বলে প্রতীয়মান। তাদের আসলে মানবাধিকার নিয়ে এবং গাজায় যেভাবে মানবাধিকার লুণ্ঠিত হচ্ছে, যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, তা নিয়ে সোচ্চার হওয়া দরকার।’
‘ভারত, চীন, রাশিয়ার প্রশংসাতেই হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতি একটু অন্যরকম’
‘নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতি খানিকটা নেতিবাচক’- এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন বিষয়ে যারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন সেখানে নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে আসা যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউজের সাবেক চিফ অফ স্টাফ, সাবেক কংগ্রেসম্যান, সিবিএস নিউজের চিফ নিউজ এডিটর এবং অন্যান্য দেশ তথা জার্মানি, ইইউ পার্লামেন্টের সাবেক মেম্বার সবাই ছিলেন। তারা সবাই সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন যে নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু, সুন্দর, অবাধ, নিরপেক্ষ এবং উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষকরাও নির্বাচনের প্রশংসা করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘ভারত, চীন, রাশিয়ার প্রতিনিধিবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং নির্বাচন সুন্দর হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। বিশ্ব প্রেক্ষাপটে আমরা সবসময় দেখে এসেছি যে চীন ও রাশিয়া যা বলে যুক্তরাষ্ট্র তার উল্টোটা বলে।
‘নির্বাচন সুন্দর ও সুষ্ঠু হয়েছে উল্লেখ করে ভারত, চীন, রাশিয়া ইতোমধ্যে একযোগে অভিমত ব্যক্ত না করলে যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিটা অন্যরকম হতো বলে আমার ধারণা।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশ, ভারতসহ সার্কভুক্ত দেশগুলো এবং ওআইসিভুক্ত দেশগুলোসহ জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকরা সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন যে সুন্দর, সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
একইসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের বহুমাত্রিক সম্পর্ক। নিরাপত্তাসহ নানা বিষয়ে এবং বিশ্ব অঙ্গনেও আমরা একসঙ্গে কাজ করছি। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বড় উন্নয়ন সহযোগী। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও উন্নয়নের লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। তারা আমাদের সঙ্গে কাজ করবে তা এই বিবৃতিতেও বলেছে।’
‘বিএনপির ভোট বর্জনের ডাক জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘সারাদেশের মানুষ উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে উৎসবের মধ্য দিয়ে ভোট দিয়েছে। বিএনপিসহ যারা ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়েছিলো তাদেরকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ভোটের বিরুদ্ধে বিএনপির প্রচারণা, ভোট বর্জনের ডাকের পাশাপাশি ৫ জানুয়ারি ট্রেনে বর্বরোচিত হামলা এবং ৪, ৫, ৬ জানুয়ারি বিভিন্ন জায়গায় ভোট কেন্দ্রে বিচ্ছিন্নভাবে হামলা পরিচালনা করা হয়েছে। তাদের সন্ত্রাস ও অগ্নিসন্ত্রাসের রাজনীতি মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশে কার্যত একটি ভোট উৎসব হয়েছে।’
চট্টগ্রাম-৭ আসন থেকে টানা চতুর্থবার নির্বাচিত এমপি হাছান মাহমুদ বলেন, ‘কেন নির্বাচন করলো না- বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো এখন হতাশায় নিমজ্জিত। তারা অনুধাবন করতে পেরেছে, এই নির্বাচন বর্জন করে নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি এবং গণতন্ত্রের অভিযাত্রা অব্যাহত আছে।’
‘জনগণ ও নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ’
দেশের মানুষকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অত্যন্ত সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, উৎসবমুখর পরিবেশে এবং জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কোনো কোনো জায়গায় ভোট প্রদানের হার ৭০ শতাংশ বা তার চেয়েও বেশি। গড়ে তা ৪১ দশমিক ৮ অর্থাৎ প্রায় ৪২ শতাংশ। আমার এলাকায় ৬৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনি এলাকায় এর চেয়েও বেশি, সম্ভবত ৮০ শতাংশ।
‘শহরাঞ্চলে হারটা কিছুটা কম ছিলো। কারণ শহরের মানুষ জায়গা পরিবর্তন করে। আবার তিনদিন টানা ছুটি পাওয়ার কারণে যেহেতু অন্যরা গ্রামে ভোট দিতে যাচ্ছে, তাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করার জন্য অনেকেই গ্রামে চলে গেছে।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন শক্ত হাতে অত্যন্ত কার্যকরভাবে এবং দক্ষতার সঙ্গে নির্বাচন সম্পন্ন করেছে। এ জন্য নিঃসন্দেহে তারা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। ইতোপূর্বে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোর সঙ্গে এমনকি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গেও এবারের নির্বাচন মিলিয়ে দেখা যায় যে, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া কিন্তু অন্যান্য বারের তুলনায় অনেক কম সহিংস ঘটনা ঘটেছে।’