বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ট্রাকে ‘পিষ্ট’ নৌকার ইনু, নিজের দেখানো ‘ফাঁদে’ স্বপন

  •    
  • ৯ জানুয়ারি, ২০২৪ ১২:১৬

হাসানুল হক ইনুর পরাজয়ের দায় আওয়ামী লীগের কাঁধে চাপাচ্ছেন স্থানীয় জাসদ নেতারা। কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলীম বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের বেশকিছু নেতা কামারুলের পক্ষে সমর্থন জানান। যার ফলে আমাদের নেতার পরাজয় হয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ৩৬টি সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ২৩৬ জন প্রার্থী। চূড়ান্ত বেসরকারি ফলালফলে ২৯টিতে আওয়ামী লীগ, ৬টিতে স্বতন্ত্র ও একটিতে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। তবে এ বিভাগে আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠ জয়ের থেকে বেশি আলোচনায় রয়েছে দাপুটে পাঁচ নেতার পরাজয়।

নির্বাচনে হেরে যাওয়া এসব নেতার হলেন যশোর-৫ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, কুষ্টিয়া-২ আসনে ১৪ দলীয় জোটের মনোনীত জাসদ সভাপতি নৌকা প্রতীকের হাসানুল হক ইনু, মেহেরপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ট্রাক প্রতীকের আব্দুল মান্নান, যশোর-৬ আসনে নৌকা প্রতীকের শাহিন চাকলাদার ও কুষ্টিয়া-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য নৌকার প্রার্থী আ. কা. ম সরওয়ার জাহান বাদশাহ।

নিজের দেখানো ফাঁদে প্রতিমন্ত্রী স্বপন

যশোর-৫ মণিরামপুর আসনে জয়ী হয়েছেন ঈগল প্রতীকের ইয়াকুব আলী। তিনি পেয়েছেন ৭৬ হাজার ২০৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা মার্কার স্বপন ভট্টাচার্য্য পেয়েছেন ৭১ হাজার ৩৯৬ ভোট।

২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে নৌকার টিপু সুলতানকে পরাজিত করেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী স্বপন ভট্টাচার্য্য। সবশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পান।

নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পরে এমপি ও তার পরিবারের স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি-অনিয়ম এবং দলের নিবেদিত প্রাণদের ওপর নিপীড়নের কারণে উপজেলা আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ স্বপন ভট্টাচার্যের সঙ্গে নেই। তার ভাগনে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চু ত্রাণের চাল চুরির অভিযোগে কারাগারেও গেছেন। ভবদহ অঞ্চলের নদী খননে তার ছেলের কাজ পাওয়া এবং সেই কাজে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য মনিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। ওই সময় যশোর জেলার সহ-সভাপতি খান টিপু সুলতান বিরোধী একটি শক্তিশালী গ্রুপ তৈরি করেন। ২০০১ সালে খান টিপু সুলতানকে বর্গি উপাধি দিয়ে দলে ভেতরে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করা হয়।

২০১৪ সালের নির্বাচনে নিজ দলের নেতা খান টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগকে এককাট্টা করেছিলেন স্বপন ভট্টাচার্য্য। তবে মাত্র ১০ বছরের ব্যবধানে খান টিপু সুলতানের অনুসারীরা এবং দলে তার বিরুদ্ধে অবস্থানকারীরা এক হয়ে এবার দলীয় প্রার্থী স্বপন ভট্টাচার্য্যেকে পরাজিত করতে মাঠে নামেন। যার ফলে অতীতে স্বপন ভট্টাচার্য্যরে দেখানো পথেই তারা সফল হলেন। আর প্রতিমন্ত্রী নিজেই নিজের পুরানো ফাঁদে আটকে গেলেন।

ট্রাকে পিষ্ট নৌকার ইনু, দুষছেন আ.লীগকে

কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে বিজয়ী হয়েছেন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিন। তিনি পেয়েছেন ৯৮ হাজার ৮৯৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান সাংসদ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৭৯ হাজার ৭৯ হাজার ৭৩৫ ভোট।

তবে এ পরাজয়ের দায় আওয়ামী লীগের কাঁধে চাপাচ্ছেন স্থানীয় জাসদ নেতারা। কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলীম বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের বেশকিছু নেতা কামারুলের পক্ষে সমর্থন জানান। যার ফলে আমাদের নেতার পরাজয় হয়েছে।

যদিও কুষ্টিয়ায় এক ভার্চুয়াল সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতা-কর্মীদের হাসানুল হক ইনুর পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত হেরে গেলেন জাসদ সভাপতি।

মান্নানের ট্রাক খাদে

‘আমি শেখ হাসিনার প্রার্থী, আমি ভারতের প্রার্থী। আমি এখানে হারার জন্য আসিনি।’ বলা মেহেরপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন।

জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অলোক কুমার দাসের সঙ্গে তার এক ফোনালাপের অডিও ক্লিপিংস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। যদিও গণমাধ্যমে খবরের পর নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল মেহেরপুর-১ আসনের নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

ওই আসনে টানা তৃত্বীয় বারের মত জয় লাভ করেছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী নৌকা প্রতীকের জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

রির্টানিং কর্মকর্তার ঘোষিত ফলাফলে, ফরহাদ হোসেনের পেয়েছেন ৯৪৩০৩ ভোট। আবদুল মান্নান ট্রাক প্রতীক নিয়ে ৫৭৬৯২ ভোট পেয়ে পরাজিত হন।

নতুন মুখের কাছে হার শাহীন চাকলাদারের

খুলনা বিভাগের অন্যতম সমালোচিত আওয়ামী লীগ নেতা শাহীন চাকলাদার। যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে আওয়ামী লীগের নিয়ে তিনি নেমেছিলেন ভোটযুদ্ধে। তবে শাহীন চাকলাদারকে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা খন্দকার আজিজুল ইসলাম, যিনি নির্বাচনের মাঠে একেবারেই নতুন। ঈগল প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ৪৮ হাজার ৯৪৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহীন চাকলাদার নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৩৯ হাজার ২৬৯ ভোট।

নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বজনপ্রীতি, বিভিন্ন স্থানে নিয়োগের নামে বিএনপি নেতা-কর্মীদের পুনর্বাসন, অনিয়ম ও দলীয় কোন্দলের কারণে উপজেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তার বর্তমানে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। ফলে এক সময়ের ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ এখন গ্রুপ; উপ গ্রুপে বিভক্ত। আজিজুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অবতীর্ণ হন। শাহীনের বিরোধী শক্তিরা তাকে হটাতে নির্বাচনী মাঠে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আজিজুল ইসলামের পক্ষে।

‘সোজা করে দেয়া’ হুমকি দেয়া বাদশাহর হার

‘ভোট নৌকায় দিতে হবে, উল্টাপাল্টা করলে সোজা করে দেব’- কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী সংসদ সদস্য আ কা ম সরওয়ার জাহান ওরফে বাদশাহ নির্বাচনি প্রচারণায় এই হুমকি দিয়ে ব্যাপক আলোচনায় এসেছিলনে।

দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের ভুরকাপাড়া এলাকায় এক নির্বাচনি সভায় তিনি ভোটারদের উদ্দেশে এই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছিলনে। যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম হয়, তার প্রভাব পড়েছে নির্বাচনি ফলালফলে।

কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য রেজাউল হক চৌধুরী ৮৯ হাজার ২৭৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী নাজমুল হুদা ঈগল প্রতীকে ৫৩ হাজার ১০৫ ভোট পেয়েছেন। নৌকার প্রার্থী, বর্তমান সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ. কা. ম সরওয়ার জাহান বাদশাহ পেয়েছেন ৪৮ হাজার ৯৬১ ভোট।

এ বিভাগের আরো খবর