দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়ীয়া) আসনে পরাজিত হয়েছেন পাঁচবারের সংসদ সদস্য (এমপি) ও একবারের প্রদেশিক পরিষদের সদস্য মোসলেম উদ্দিন।
মোসলেম ও তার মেয়ে সেলিমা বেগম সালমাকে হারিয়ে রোববার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে এমপি পদে নির্বাচিত হন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মালেক সরকার।
জয়ী প্রার্থী পেয়েছেন ৫২ হাজার ২৮৫ ভোট। আবদুল মালেকের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকের মোসলেম উদ্দিন পান ৪২ হাজার ২০০ ভোট।
নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সাবেক উপদেষ্টা ডা. রফিকুল ইসলাম কেটলি প্রতীক নিয়ে পান ৩ হাজার ২৬৭ ভোট। মোসলেম উদ্দিনের মেয়ে সেলিমা বেগম সালমা (ঈগল) ২ হাজার ৫৪১ ভোট, জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাহফিজুর রহমান বাবুল (লাঙ্গল) ৫২৫ ভোট এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের এম আবদুর রশিদ (গামছা) পান ২২৯ ভোট।
এ আসনে এবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন পাঁচবারের এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বর্ষীয়ান রাজনীতিক মোসলেম উদ্দিন, তার ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমদাদুল হক সেলিম ও মেয়ে আওয়ামী লীগ নেত্রী সেলিমা বেগম সালমা।
নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পান মোসলেম উদ্দিন। এরপর মোসলেমের ছেলে বাবার পক্ষে অবস্থান নিলেও মেয়ে সেলিমা বেগম সালমা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে প্রতিযোগিতায় নামেন।
সালমার এ অবস্থানের পর থেকেই জেলার মধ্যে সবচেয়ে আলোচনায় আসেন বাবা-মেয়ে। একই আসনে বাবা ও মেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় ভোটারদের মধ্যে চলে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। দলীয় নেতা-কর্মীরাও পড়েন বিপাকে।
স্থানীয় ও আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা-কর্মী জানান, অন্তর্কোন্দলের জেরে মোসলেমের প্রতিদ্বন্দ্বী হন তার বড় মেয়ে সেলিমা বেগম সালমা। উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মালেক সরকার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন।
তারা জানান, মোসলেম উদ্দিন দলীয় ও পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে অনেকটা বেকায়দায় পড়ে যান, যার প্রভাব পড়ে ভোটে। ফলে শেষ পর্যন্ত বিজয়ের হাসি হাসে আবদুল মালেক সরকার।
রবিউল ইসলাম নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘বাবা-মেয়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতা উপজেলাজুড়ে হাস্যরসে পরিণত হয়েছিল। তাই অনেক ভোটার কাকে ভোট দেবে, এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায়। এক পরিবারে বাবা-মেয়ে প্রার্থী হওয়ায় অনেকে ইচ্ছে করেই আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মালেক সরকারকে ভোট দিয়েছে।’
ইসমত আরা বেগম নামের আরেকজন বলেন, ‘অন্যান্য প্রার্থীর মধ্যে মোসলেম উদ্দিন ও আবদুল মালেক সবচেয়ে জনপ্রিয়। তাদের সবাই চেনেন। এর মধ্যে বাবার সঙ্গে মেয়ে সেলিমা বেগম সালমা প্রার্থী হওয়ায় সেও অনেক পরিচিতি পায়।
‘এ ছাড়াও সালমা শিক্ষিত ও আওয়ামী লীগ নেত্রী, তবে সে বাবার সঙ্গে প্রার্থী হওয়ায় বিষয়টি অনেকে ভালোভাবে নেননি। এর প্রভাব পড়েছে ভোটকেন্দ্রে। বিজয়ী হয়েছে আবদুল মালেক।’
ফুলবাড়ীয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুল আজিজ বলেন, ‘ভোটাররা যাকে পছন্দ করেছে, তাকেই ভোট দিয়েছে।’
মেয়ের কারণেই মোসলেম উদ্দিন পরাজিত হয়েছে কি না, এমন প্রশ্ন এড়িয়ে তিনি বলেন, ‘ভোটারদের ইচ্ছা পূরণ হয়েছে।’
এ বিষয়ে ঈগল প্রতীকে লড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী সেলিমা বেগম সালমার সঙ্গে কথা বলতে তার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিয়েও পাওয়া যায়নি। তার বাবা নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘মেয়ে বাবার কথা চিন্তা করেনি। সে প্রার্থী হয়েছে তার নিজের ইচ্ছায়। এখন দুজনেই পরাজিত হয়েছি। আমি যতদিন বেঁচে আছি, মানুষের কল্যাণেই কাজ করে যাব।’
বিজয়ী হওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মালেক সরকার বলেন, ‘ফুলবাড়িয়ায় সংসদ সদস্য থাকাকালীন তেমন উন্নয়ন করতে পারেননি মোসলেম উদ্দিন। তাকে অনেক দলীয় নেতা-কর্মীরাও পছন্দ করেন না।
‘এর মধ্যে নিজের মেয়েও বাবার সঙ্গে প্রার্থী হয়ে যান। সব মিলিয়ে সাধারণ ভোটারসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা আমার পক্ষে অবস্থান নেয়। এর ফলেই নির্বাচিত হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ফুলবাড়িয়ার উন্নয়ন করব। এখানে মাদক-সন্ত্রাসের কোনো স্থান হবে না। তা কাজের মাধ্যমেই প্রমাণ করা হবে। মোসলেম উদ্দিন মানুষের কল্যাণের জন্য যা করতে পারেননি, আমি তা করে দেখাব।’