দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে শনিবার রাতে দেশের পাঁচ জেলা থেকে বেশ কয়েকটি ভোটকেন্দ্রের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গিয়েছে। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্রসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা।
শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে এসব ঘটনাগুলো ঘটেছে।
সিলেটের চারটি কেন্দ্রের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ
ভোটের আগের রাতে সিলেটের চারটি ভোটকেন্দ্রের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ করেছে দুর্বৃত্তরা। এতে আতঙ্কিত হয়ে কেন্দ্রের ভেতর থেকে হুড়োহুড়ি করে বাইরে বেরিয়ে পড়েন সেখানকার দায়িত্বরতরা।
এ ছাড়া নগরের শাহজালাল ব্রিজের ওপর অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ, যানবাহনে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। মশাল জ্বালিয়ে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মিছিল করতেও দেখা গিয়েছে।
শনিবার রাত আটটা থেকে সাড়ে নয়টার মধ্যে এসব ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, রাত আটটার পর থেকে সিলেট নগরীর নয়াসড়ক এলাকায় কিশোরীমোহন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র, পাঠানটুলা দ্বিপাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র, দক্ষিণ সুরমার সিলাম পিএল মাল্টিলেটারাল হাইস্কুল কেন্দ্র এবং টুকের বাজার এলাকার হাজী আব্দুস সাত্তার বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় একদল দুর্বৃত্ত। এ সময় অগ্নিসংযোগের ভয়ে এসব কেন্দ্রে দায়িত্বরতরা বাইরে বেরিয়ে আসেন।
রাত পৌনে আটটার দিকে সিলেট নগরীর ইলেকট্রিক সাপ্লাই রোডে মশাল মিছিল বের করে সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রদল। মিছিল শুরুর পরপর বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এরপর মিছিলটি নগরীর শাহী ঈদগাহের দিকে এগোতে থাকলে দরটির নেতা-কর্মীরা আরও কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। এতে আশপাশ এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায়।
সে সময় কিছু সময়ের জন্য যানবাহন চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে নেতা-কর্মীদের হাতে থাকা জ্বলন্ত মশাল রাস্তায় ফেলে তারা সটকে পড়েন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মশাল সরিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করে।
অপরদিকে একই সময় সিলেট নগরীর শাহজালাল ব্রিজের উপর অগ্নিসংযোগ করেন সিলেট যুবদলের নেতা-কর্মীরা। এ সময় তারা ব্রিজের ওপর কয়েক দফা ককটেল বিস্ফোরণ এবং ব্রিজ দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন।
এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ বলেন, ‘কেন্দ্রের বাইরে ককটেল বিস্ফোরণের খবর পেয়েছি। এসব ঘটনায় কেউ আহত বা নিহত হয়নি। এখনও সিলেটে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ নজরদারি রাখা হচ্ছে।’
কালকিনিতে ভোটকেন্দ্রের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ
মাদারীপুরের কালকিনিতে একটি ভোটকেন্দ্রের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থল থেকে আরও একটি তাজা ককটেল উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শনিবার রাত ৮টার দিকে কালকিনি উপজেলার ৭২ নম্বর ভোটকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এটি গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র। এ কেন্দ্রের মোট ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ৬ শ’ ৯২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮ শ’ ৭০ জন, আর নারী ভোটারের সংখ্যা ৮শ’ ২২ জন।
একাধিক সূত্র জানায়, শনিবার দুপুরে সরকারি রির্টানিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে নির্বাচনি সরঞ্জামাদি নিয়ে ৭২ নম্বর ভোটকেন্দ্রে পৌঁছান প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পরে রাতে হঠাৎ কেন্দ্রের সামনে ককটেল ছুড়ে মারে দুর্বৃত্তরা। এ সময় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে।
খবর পেয়ে কালকিনি থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি তাজা ককটেল উদ্ধার করে পুলিশ।
কালকিনি থানার ওসি সরদার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে।’
মাদারীপুর-৩ আসনের সহকারী রির্টানিং কর্মকর্তা ও কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম কুমার দাশ জানান, ভোটকেন্দ্রের বাইরে মূলত ককটেল বিস্ফোরণ হয়। উদ্ধার হওয়া ককটেলটি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। দক্ষ কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় উদ্ধার হওয়া ককটেলটি নিষ্ক্রিয় করা হবে।
সুনামগঞ্জের ভোটকেন্দ্রসহ পৃথক ৪ স্থানে আগুন
সুনামগঞ্জে ধর্মপাশায় পৃথক তিনটি স্থানে খড়ের গাদায় এবং মধ্যনগরে একটি ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার রাত ১১টার দিকে ধর্মপাশা উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নের ধর্মপাশা-বাদশাগঞ্জ সড়কের পাশে মোদাহরপুর ও আহম্মদপুর গ্রামের পৃথক তিনটি খড়ের গাদায় আগুন দেয় দুর্বত্তরা। এতে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে ধর্মপাশা ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট স্থানীয় এলাকাবাসীর সহযোগিতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ধর্মপাশা থানার ওসি শামসুদ্দোহা বলেন, ‘অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে দুর্বৃত্তরা। ধর্মপাশার কোনো ভোটকেন্দ্র বা কোথাও যাতে অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে পুলিশের সর্তক অবস্থান রয়েছে।’
অপরদিকে ওইদিন রাত ৩টার দিকে মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের গড়াকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আগুন দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দুর্বৃত্তরা।
মধ্যনগর থানার ওসি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন জানান, মধ্যনগরের প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। রাত তিনটার দিকে পাহারাদারদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ওই কেন্দ্রের একটি কক্ষের জানালা দিয়ে দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। তবে দ্রুত আগুন নেভানোর ফলে তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতেই এই অগ্নি সংযোগ করতে পারে বলে জানান তিনি।
নোয়াখালীতে হঠাৎ বিপুল ককটেল বিস্ফোরণ, জনমনে আতঙ্ক
ভোটের আগের রাতে নোয়াখালীতে বিপুল পরিমাণ ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিস্ফোরণের পরপরই পুলিশ, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে অবস্থান নিয়ে পরিসিস্থিতি স্বাভাবিক করা চেষ্টা করেন।
শনিবার রাত ১০টা থেকে জেলা শহর মাইজদী ও আশেপাশের ইউনিয়নগুলোর বিভিন্ন স্থানে এসব ককটেল ও পটকার শব্দ পাওয়া যায়।
কাদির হানিফ ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘রাত ১০টার পর কয়েকজন যুবক মোটরসাইকেলে এসে কেন্দ্রের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। আমারা তাদের ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা এসেছেন।’
শুধারাম মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান পাঠান বলেন, ‘আমরা মাঠে আছি। জড়িতদের ধরার চেষ্টা করছি।’
হবিগঞ্জে বিপুল ককটেল বিস্ফোরণ
শনিবার ভোটের আগের রাতে জেলা নির্বাচন অফিসসহ হবিগঞ্জ শহরের বিভিন্ন স্থানে বিপুল পরিমাণ ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এ নিয়ে শহরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
শায়েস্তানগর সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভের পর শনিবার রাত ৮টার দিকে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
বিস্ফোরণের পর শহরের শায়েস্তানগর এলাকায় অবস্থান নেন পুলিশ, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য।
নিউজবাংলার সিলেট, মাদারীপুর, সুনামগঞ্জ, নোয়াখালী ও হবিগঞ্জ প্রতিনিধির পাঠানো তথ্য ও ছবি নিয়ে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে।