বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সরকার কৃত্রিম ভোটার উপস্থিতি দেখাতে চাইছে: বিএনপি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ৫ জানুয়ারি, ২০২৪ ২০:৫৯

ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির প্রায় এক কোটি ২৮ লাখ সুবিধাভোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়া নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ডামি প্রার্থী ও ডামি দল তৈরির পর এখন তৈরি করা হচ্ছে ডামি ভোটার।’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রোববার ভোট গ্রহণের দিনে কেন্দ্রে কৃত্রিমভাবে ভোটার উপস্থিতি দেখাতে চাইছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা ড. আবদুল মঈন খান। তিনি বলেছেন, ‘ভোটার উপস্থিতি দেখানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ভোটারদের ভয় দেখানোসহ বিভিন্ন অসাংবিধানিক, অনৈতিক ও প্রতারণামূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।’

বিএনপির এই নেতা শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে সরকারের সব ধরনের হুমকি ও ভয়ভীতি উপেক্ষা করে ‘প্রহসনের’ নির্বাচনে বর্জন করতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।

ভোটগ্রহণের দু’দিন আগে মঈন খানের গুলশানের বাসভবন প্রাঙ্গণে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে বিএনপির মহাসমাবেশ বানচালের পর এটাই বিএনপির প্রথম আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন।

মঈন খান বলেন, ‘আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় আসন ভাগাভাগি ও বণ্টনের একতরফা নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে সমালোচনা চলছে। সরকার ডামি প্রার্থী ও ডামি দল তৈরি করেই থেমে নেই। তারা এখন জোর করে ডামি ভোটার তৈরির দিকে মনোনিবেশ করেছে।’

‘জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত অর্থহীন নির্বাচনে কৃত্রিম ভোটার উপস্থিতি দেখানোর জন্য সরকার যেভাবে সহিংসতার আশ্রয় নিয়েছে, তা নৈতিকভাবে গণবিরোধী ও রাজনৈতিকভাবে শিশুসুলভ।

‘ভোটারদের উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য তাদের সব কৌশলের তালিকা এখন আন্তর্জাতিক স্টেকহোল্ডারদের কাছে স্পষ্ট।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপিসহ গণতন্ত্রপন্থী ৬২টি রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি দেশের সব শ্রেণি-পেশার ভোটার এবং দেশের প্রতিটি সচেতন নাগরিক ইতোমধ্যে তথাকথিত এই নির্বাচন বর্জন ও প্রত্যাখ্যান করেছে।

‘ক্ষমতায় টিকে থাকতে মরিয়া হয়ে অবৈধ সরকার আসন বণ্টন ব্যবস্থাকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগ ও রাষ্ট্রযন্ত্রের চিহ্নিত মহল ষড়যন্ত্রের নীলনকশা প্রণয়ন করেছে।’

বিএনপির এই বর্ষীয়াণ নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও তার অধীনস্থ রাষ্ট্রযন্ত্র মিথ্যা ও জাল ভোটার উপস্থিতি দেখানোর জন্য অসংখ্য অনৈতিক, অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক উদ্যোগ নিয়েছে।’

‘সরকারের এমপিরা হুমকি দিচ্ছেন যে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির লাখ লাখ সুবিধাভোগী ভোটকেন্দ্রে না গেলে তারা তাদের আর্থিক সুবিধা হারাবেন।’

‘বর্তমানে প্রায় এক কোটি ২৮ লাখ মানুষ বিভিন্ন সামাজিক সুবিধা পাচ্ছেন, যা সব সরকারের অধীনে একটি চলমান প্রক্রিয়া। এসব সুবিধাভোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়া নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বলা হচ্ছে, ৭ জানুয়ারি ভোট না দিলে তাদের ভাতা বাতিল করা হবে।’

ড. মঈন আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা কৌশল অবলম্বন করে অনেক জায়গায় জোর করে সরকারি সুবিধাভোগীদের কার্ড জব্দ করতে শুরু করেছেন। সুবিধাভোগীদের ঘরে ঘরে গিয়ে হুমকি দেয়া হচ্ছে, তারা যদি ভোটকেন্দ্রে না যায় এবং জনসমক্ষে ভোট না দেয় তবে তারা তাদের কার্ড ফেরত পাবে না।

‘বিভিন্ন ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের ভোট দিতে বাধ্য করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।’

সারাদেশে প্রায় ২০ লাখ সরকারি কর্মচারীকে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেয়ার সুযোগ করে দিতে সরকার বেআইনিভাবে নজিরবিহীন উদ্যোগ নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপির এই নেতা।

তিনি বলেন, ‘তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এ ধরনের সিদ্ধান্ত প্রশাসনের একটি বড় অংশের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি করেছে। এটি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভোটাধিকার নিয়ন্ত্রণের একটি প্রচেষ্টা।

‘একইসঙ্গে তাদের পরিবারের সদস্যদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এছাড়া প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারসহ বিভিন্ন নির্বাচনি দায়িত্বে নিয়োজিত বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের এক লাখের বেশি কর্মকর্তাকে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে বলা হচ্ছে।’

সংবাদ সম্মেলনে মঈন খান বলেন, ‘তথাকথিত নির্বাচনের দিন আনসার-ভিডিপির ৬১ লাখ সদস্যের একটি বড় অংশ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের প্রত্যেকের জন্য ডাকযোগে ভোট গ্রহণ নিশ্চিত করতে এবং প্রতিটি পরিবারের কমপক্ষে পাঁচজন সদস্যকে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য সদর দপ্তর থেকে প্রতিটি ইউনিট ও ব্যাটালিয়নকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সারাদেশে পুলিশ সদস্যরা ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর মিশনে নেমেছে। ঢাকার পুলিশ কমিশনার নিজে দুই সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের ডেকে ভোটকেন্দ্রে যতটা সম্ভব ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। বিভিন্ন স্থানে পুলিশের এসপি ও ওসিরা আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের প্রচারে সরাসরি সম্পৃক্ত এবং জনগণকে ভোট দিতে বলছেন।

‘জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, ভোটারের অংশগ্রহণ বাড়ানোর রাজনৈতিক দায়িত্ব পুলিশকে কে দিয়েছে? এই পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের সাংবিধানিক ও আইনগত ভিত্তি কী?’

অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতারা ভোটকেন্দ্রে না গেলে জাতীয় পরিচয়পত্র বাতিল ও বিভিন্ন ইউটিলিটি সেবা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিচ্ছেন। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা নানা কৌশল ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আর জাল ভোট দিয়ে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।’

বিএনপির এই নেতা জনগণকে সাহসের সঙ্গে ‘অবৈধ’ সরকারের হুমকি মোকাবিলা এবং যারা তাদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধ্য করছে তাদের নাম রেকর্ড করে রাখার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘এই একদলীয় সরকারের সময় শেষ। সুতরাং তাদের অন্যায্য ও অবৈধ হুমকি নিয়ে চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। আমরা আশা করি, বাংলাদেশের জনগণ শিগগিরই একদলীয় শাসনের কবল থেকে মুক্ত হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘সরকার বিএনপির ওপর দোষ চাপানো এবং তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে কলঙ্কিত করার জন্য যানবাহন ও ট্রেনে অগ্নিসংযোগের মতো নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।

‘ক্ষমতাসীন দল একতরফা নির্বাচন করে জনগণের ভাগ্য নিয়ে খেলছে। তারা দেশ ও এর সব অর্জনকে ধ্বংস করছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান নির্বাচন বয়কটের অংশ হিসেবে শনিবার সকাল ৬টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল শান্তিপূর্ণভাবে পালনের জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘আমরা জনগণকে ধর্মঘট পালন ও নির্বাচন বয়কটের আহ্বান জানিয়েছি। সেজন্য আমাদের নেতা-কর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করবেন।’

এ বিভাগের আরো খবর