দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি থাকতে শেষ সময়ে এসে পাল্টেছে গাইবান্ধা-২ সদর আসনের সমীকরণ। আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর পর ভোটের মাঠে মহাজোটের লাঙ্গল আর স্বতন্ত্রের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও এখন সেই চিত্র পাল্টে গেছে। আওয়ামী লীগের সমর্থকরা দলের স্বতন্ত্রের হয়ে মাঠে থাকলেও শেষ সময়ে হাত লাগিয়েছেন লাঙ্গলের হাতলে।
গাইবান্ধার পাঁচটি সংসদীয় আসনের মধ্যে গাইবান্ধা-২ সদর আসন একটি। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আসনটি জাতীয় পার্টিকে (জাপা) ছেড়ে দেয়। ফলে এই আসনের আ.লীগের টানা তিন বারের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ মাহাবুব আরা বেগম গিনি মনোনয়ন পেয়েও দলের নির্দেশে নির্বাচন কৌশলে তিনি তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন।
জাতীয় পার্টিকে এই আসনটি ছেড়ে দেয়ায় এ আসনে জোটগত প্রার্থী হয়ে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন জাপার সাবেক এমপি আব্দুর রশীদ সরকার। আব্দুর রশিদ আসনটি ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে দুই দফায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ ছাড়া তিনি ২০০৯ সালে গাইবান্ধা সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে তাদের নেতা-কর্মীদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেয়ার সুযোগ রাখায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জোটের প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ সারোয়ার কবীর। মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ট্রাক প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি। এ ছাড়া তিনি সদ্য পদত্যাগ করা সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও গণপরিষদের প্রথম স্পিকার শাহ আব্দুল হামিদের নাতি।
এ আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য প্রার্থীরা হলেন শাহ সারোয়ার কবীরের স্ত্রী ও আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থী মোছা. মাছুমা আক্তার (ঈগল পাখি), এন এনপি’র জিয়া জামান খান (আম) ও জাসদের মো. গোলাম মারুফ মনা (মশাল)।
নির্বাচনে এই আসনে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও শুরু থেকেই জোটের আব্দুর রশিদের লাঙ্গলের সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ছিল স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহ সারোয়ারের ট্রাক। আওয়ামী লীগেরই আরেকটি অংশ স্বতন্ত্র প্রার্থী সারোয়ারের সঙ্গে ভোটের প্রচারণায় মাঠে নামে। আর দলীয় সিদ্ধান্তে এমপি মাহবুব আরা বেগম গিনি নৌকার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়ে তার দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করে চলেন মহাজোটের লাঙ্গলের প্রার্থী আব্দুর রশীদ সরকারের সঙ্গে। এখন হিসাব পাল্টেছে।
নাম না প্রকাশের শর্তে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা বলছেন, প্রচার শুরুর দিকে ভোটের মাঠে ট্রাক শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা গেলে এখন সর্বশেষ সমীকরণ পাল্টেছে। ট্রাকের সঙ্গে গোপনে-প্রকাশ্যে প্রচারণায় থাকা অনেক নেতা-কর্মীই এখন লাঙ্গলের হয়ে কাজ করছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, আ.লীগের যেসব নেতা-কর্মী গোপনে ট্রাকের পক্ষে কাজ করেছেন তারাও পাল্টাচ্ছেন সুর। এ ছাড়া জোটগত প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আ.লীগের হওয়ার ফলে ভোটের প্রচার-প্রচারণা নিয়ে দ্বিধদ্বন্দ্বে থাকা তৃণমূল আ.লীগের সিংহভাগ নেতা-কর্মীও এখন লাঙ্গলে। ফলে প্রথম দিকে খানিকটা চাপে থাকলেও সব সংশয় কাটিয়ে বর্তমানে এ আসনে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে জোটের লাঙ্গল।
লাঙ্গলের প্রার্থী আবদুর রশিদ সরকার বলেন, ‘জোটগত সিদ্ধান্তে এ আসনের সাংসদ ও জাতীয় সংসদের হুইপ মাহাবুব আরা বেগম গিনিসহ আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের সিংহভাগ নেতা-কর্মীরা আমার সঙ্গে রয়েছেন। এ ছাড়া এরআগে আমি এ আসনের এমপি এবং উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলাম। সে সময়ে এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছি, নিশ্চয়ই মানুষ তা ভুলে যায়নি। আশা করছি আগামী ৭ তারিখের নির্বাচনে ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে লাঙ্গল জয়লাভ করবে।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহ সারোয়ার কবীর (আ.লীগ, ট্রাক) বলেন, ‘আমি সদ্য পদত্যাগ করা এই উপজেলার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। দায়িত্বপালনকালে অনেক উন্নয়ন করেছি, অনেক কর্মপরিকল্পনাও রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি উন্মুক্ত করে দেওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।’