‘২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত হয়েও সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ২ কোটি টাকা দিয়ে নমিনেশন এনেছিলেন’ বলে মন্তব্য করেছেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুট।
বুধবার রাতে জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা বাজার সুনামগঞ্জ—১ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী রনজিত সরকারের সমর্থনে জনসভায় এসব কথা বলেন তিনি।
নুরুল হুদা মুকুট বলেন, ‘নিজের প্রথম এমপি ইলেকশনের মনোনয়ন পাওয়ার ১৫ দিন আগে মোয়াজ্জেম হোসেন রতন আমার বাসায় গিয়েছিলেন। আমাকে সালাম করে বলেছিলেন- ভাই সাহেব, আমি তো উপজেলা ইলেকশন করব, উপজেলা চেয়ারম্যান হব। আপনি আমাকে ধর্মপাশা আওয়ামী লীগের একটি মেম্বারশিপ দেন। আমি তখন জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি, মতিউর রহমান সাহেব ছিলেন প্রেসিডেন্ট। মেম্বারশিপ নেয়ার জন্য আমার কাছ থেকে একটা প্যাডে দস্তখত নিয়ে যান তিনি। এরপর তিনি মতিউর রহমান সাহেবের বাসায় যান, মতিউর রহমান সাহেব তাকে (মোয়াজ্জেম হোসেন রতন) বাসা থেকে বের করে দেন। দুইদিন পর উনি এসে আমাকে আবার বললেন- ভাই সাহেব, আপনি তো পেছনে পড়ে গেছেন। আমি ২ কোটি টাকার বিনিময়ে নমিনেশন নিয়ে এসেছি।’
তিনি বলেন, ‘কানাডার সিটিজেন উনার বন্ধুকে একটা গাড়ি উপহার দিয়ে নমিনেশন নিয়ে এসেছেন। তখন বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এবং সৈয়দ রফিকের মধ্যে কমপিটিশন চলছিল নমিনেশনের জন্য। নেত্রী বিরক্ত হয়েছেন দুজনের কম্পিটিশন দেখে। তিনি সরোয়ার সাহেবকে বললেন- দেখ কাউকে পাওয়া যায় কি না। সরোয়ার সাহেব বললেন- নেত্রী, আমরা ওই এলাকার সবচেয়ে যোগ্য একজন ইঞ্জিনিয়ারকে পেয়েছি। উনি একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার।
‘সে সময় তিনি (রতন) আমাকে বলেন- আমি তো ওই এলাকার কোনো মানুষকে চিনি না। আপনি আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন। তখন আমি তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন খান ও সম্পাদক অমল করকে ডেকে পরিচয় করিয়ে দেই। তারপর উনি বললেন- ভাই সাহেব, আমার কাছে কোনো টাকা নাই। আপনি এখন আমাকে টাকা দেন, একমাস পর দিয়ে দেব। আমি দুই লাখ টাকা উনাকে হাওলাত দিলাম। তাহিরপুরের অনেকে মানুষের কাছ থেকে এক লাখ, দুই লাখ, পাঁচ লাখ টাকা করে ধার করে নির্বাচন করেছেন তিনি, কিন্তু নির্বাচিত হয়ে তিনি নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করা শুরু করেন। ধর্মপাশায় উনার তিন তিনটে বাড়ি, ঢাকায় বিরাট অট্টালিকা আছে, ফ্ল্যাট আছে, কানাডাতেও উনার বাড়ি আছে। আপনার-আমার পকেট থেকে টাকা নিয়ে উনার নিজের উন্নয়ন করেছেন। অনেক মানুষকে তিনি টাকা দিয়ে কিনছেন। আপনাদের জামালগঞ্জেও অনেক মানুষকে পকেটে পুরেছেন।’
মুকুট বলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা যারা মানে না, তারা আমার নেত্রীর দল করতে পারে না। জামালগঞ্জ আওয়ামী লীগে তাদের রাখা যাবে না। আমরা ঐক্যবদ্ধ জীবনযাপন করছি। আমরা প্রগতিশীল রাজনীতি, জননেত্রী শেখ হাসিনার রাজনীতি করি। আমাদের চলাফেরা দেখে বুঝতে পারবে না, কে হিন্দু আর কে মুসলমান। আমাদের ইসলাম ধর্মের যার যার ধর্ম পালনের কথা বলা আছে। কারও ধর্মের ওপর আঘাত করা যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘সবাইকে ভোট দিতে যেতে হবে। ভোট কাস্ট কম হলে আপনাদের এলাকার বেইজ্জতি হবে। আপনারা বিপুল পরিমাণে ভোট কাস্ট করবেন এবং রনজিত সরকারকে বিজয়ী করবেন।’