আবার সরকার গঠন করতে পারলে নিজের ভুল-ত্রুটি শোধরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ১৫ বছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে তিনি বলেছেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার পরিকল্পনা তুলে ধরেছি। আমার ওপর ভরসা রাখুন। নৌকাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করুন। সবাই মিলে সোনার বাংলা গড়ে তুলব।’
বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। সন্ধ্যা সাতটায় বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ সব গণমাধ্যমে তার এ ভাষণ একযোগে প্রচারিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলা শুরু করেছিলেন। সে সময় তিনি একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র গড়ে তোলার ভীত রচনা করেছিলেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসররা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। ৭৫-পরবর্তী অবৈধ সরকারগুলোর জনবিচ্ছিন্নতা, লুটপাট ও দর্শনবিহীন রাষ্ট্র পরিচালনা বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাহীন রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ পরিচিতি পেয়েছিল বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছাাস এবং ভিক্ষুক-দরিদ্র-হাড্ডিসার মানুষের দেশ হিসেবে। তখন দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল প্রায় ৫৫ শতাংশ।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘২১ বছর পর ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারে এসে আমরা দারিদ্র্য বিমোচনে বেশ কিছু যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণ করে। আমরা পার্বত্য শান্তি চুক্তি করে পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করি। দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জন্য বিভিন্ন ভাতা চালু, তাদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি যেমন: আশ্রয়ণ প্রকল্প, ঘরে ফেরা, কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের মতো কর্মসূচি দারিদ্র্য বিমোচন এবং প্রান্তিক মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখে। কৃষক ও কৃষিবান্ধব নীতি গ্রহণের ফলে দেশ দ্রুত খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। পাশাপাশি আমরা বিভিন্ন খাতে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ-মেয়াদী নীতিমালা গ্রহণ করি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘দেশ যখন আর্থিক স্থবিরতা কাটিয়ে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মহাসড়কে অভিযাত্রা শুরু করে, ঠিক তখনই ২০০১ সালে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত আবার ক্ষমতায় আসে। শুধু রাজনৈতিক কারণে বহু চলমান উন্নয়ন প্রকল্প স্থগিত করে দেয়া হয়। হাওয়া ভবন খুলে অবাধে চলতে থাকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও দুঃশাসন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করে ২২ নেতা-কর্মীকে হত্যা এবং ৫০০-র বেশি মানুষকে আহত করে। জেলায় জেলায় বোমা হামলা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি, সেশন জট, ছাত্রছাত্রীদের অনিশ্চিত জীবন ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়কার সাধারণ চালচিত্র। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, অস্ত্র চোরাকারবারি, মানি লন্ডারিং, ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ, হাওয়া ভবনের দ্বৈত শাসনে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল।
‘মেয়াদ শেষে ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের ক্ষমতা হস্তান্তর করে নির্বাচন দেয়ার কথা থাকলেও তারা ক্ষমতাকে আকড়ে ধরতে নানা ছল-চাতুরির আশ্রয় নিতে থাকে। নির্বাচনে কারচুপির উদ্দেশ্যে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটারসমেত ভোটার তালিকা প্রণয়ন এবং আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন গঠন করে। তাদের এসব কর্মকাণ্ড বাংলাদেশকে অন্ধকারের পথে ধাবিত করে, যার ফলে দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়। সামরিক বাহিনী অন্তরালে থেকে ক্ষমতা দখল করে। ইয়াজুদ্দীন, ফখরুদ্দীন, মইনুদ্দীনের এই সরকার জনগণের অধিকার হরণ করে তাদের ওপর স্টিমরোলার চালানো শুরু করে। প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোকে ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নেয়। আমাকে এবং আমার দলের বহু নেতা-কর্মীসহ অন্যান্য দলের নেতা-কর্মীদের বন্দি করা হয়। ভিন্ন দল গঠন করার চেষ্টা করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু তাদের এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে দেশবাসী ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ায়। জনগণের আন্দোলনের মুখে তারা নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে সরকারে আসে। পরে ২০১৪ এবং ২০১৮-র নির্বাচনেও জয়ী হয়ে টানা পনের বছর দেশ পরিচালনা করছি। ১৫ বছর আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশের মধ্যে বিরাট ব্যবধান। মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেছে। মানুষ আজ স্বপ্ন দেখে উন্নত জীবনের; স্বপ্ন দেখে সুন্দরভাবে বাঁচার।
‘আসছে আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাইতে হাজির হয়েছি। এই উন্নয়নকে টেকসই করা, আপনাদের জীবন মান উন্নত করা, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত স্মার্ট সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ চাই। আমার ওপর ভরসা রাখুন। আসুন, সকলে মিলে এই বাংলাদেশকে স্মার্ট সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্ন পূরণ করি।’