বাংলাদেশে যে গণতন্ত্র আছে তা প্রমাণ করতে রোববারের নির্বাচনে জনগণকে ভোটাধিকার প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিন।’
বৃহস্পতিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জে নির্বাচনি প্রচারণার শেষ জনসভায় তিনি এই কথা বলেন। এর আগে বেলা সোয়া তিনটার দিকে শহরের ইসদাইরে অবস্থিত এ কে এম শামসুজ্জোহা ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠে তাকে বহনকারী গাড়িবহর এসে পৌঁছায়। এরপর বেলা তিনটা ৪৬ মিনিটে প্রধান অতিথির বক্তব্য শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী।
জনসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে না হতে পারে, সেজন্য অনেক ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত হয়েছে। এ চক্রান্ত এখনও চলছে। যেহেতু নিজেরা নির্বাচন করে জিততে পারবে না, তাই তাদের উদ্দেশ্যে দেশের মানুষকে ভোট থেকে বঞ্চিত করা। এ চক্রান্ত মোকাবিলায় সবাইকে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে হবে।’
ভোটের দিন দেশের মানুষকে শান্তিপূর্ণভাবে থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন হবে ৭ তারিখে। নির্বাচনের দিন সারা দেশের মানুষের কাছে অনুরোধ করব, সকলে শান্তিপূর্ণভাবে থাকবেন।’
আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মিলিটারি ডিক্টেটররা যখন একে একে ক্ষমতায় এসেছে, জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে বন্দি করে রেখেছে, কিন্তু আওয়ামী লীগ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জনগণের অধিকার তাদের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে। আজকে দেশের মানুষ তার ভোটের অধিকার সম্পর্কে সচেতন। এই ভোটের অধিকার আপনার মৌলিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার; সেই অধিকার আমরা সংরক্ষিত করেছি। সবাই ভোটকেন্দ্রে যাবেন, ভোট দিয়ে প্রমাণ করবেন বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিদ্যমান।’
‘বিএনপি নির্বাচনে আসতে ভয় পায়’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৫ বছর ধরে আমরা সরকারে। ২০০৮-এর নির্বাচনে আমরা জয়লাভ করেছিলাম। সেইদিন বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় ঐক্যজোট আর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আমাদের মহাজোট। সেই নির্বাচনে শুধু মাত্র নৌকা মার্কায় আওয়ামী লীগ ২৩৩টি সিট পেয়েছিল। আর বিএনপি পেয়েছিল মাত্র ৩০টি সিট। বাকিগুলো আমাদের যারা জোটে ছিল, তারা পেয়েছিল। তারপর থেকে বিএনপি আর নির্বাচনে আসতে চায় না, ভয় পায়। যার জন্য তারা সন্ত্রাস করে।’
‘জ্বালাও-পোড়াও বিএনপির একমাত্র গুণ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচন বন্ধ করার জন্য ২০১৩ থেকে তারা অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করে। তিন হাজারের ওপর তারা মানুষ পুড়িয়েছে। তার মধ্যে ৫০০ মানুষ মারা গেছে। তিন হাজার আট শ’র গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ খুন- এটাই হচ্ছে বিএনপির একমাত্র গুণ; তারা এটাই পারে, আর কিছু পারে না। মানুষকে কিছু দিতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যহত আছে। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যহত আছে বলেই বাংলাদেশে এত উন্নয়ন হয়েছে; বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। বাংলাদেশকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না। বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাবে উন্নয়নের পথে। যতই ষড়যন্ত্র হোক, আমাদের শক্তি এ দেশের জনগণ; আমাদের শক্তি এ দেশের মানুষ। আর সেই মানুষকে নিয়ে আমাদের রাজনীতি।’
দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমার গ্রাম, আমার শহর। গ্রামের মানুষকে নানা সুবিধা দিয়ে সকল উন্নয়ন করেছি। পদ্ম সেতু নিয়ে আমাদের ওপর অপবাদ দেয়ার চেষ্টা করেছিল। আমি সেটার প্রতিবাদ করেছিলাম। পরে তারা প্রমাণ করতে পারে নাই।
‘পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংক ব্যাংক দূর্নীতির কথা বলেছিল, কিন্তু তারা প্রমান করতে পারে নাই। মামলা করেছে, কিন্তু আদালত বলেছে, এখানে কোনো দুর্নীতি হয় নাই। আমি পদ্মা সেতুকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, নিজেদের অর্থায়নে পদ্ম সেতু করব এবং নিজের অর্থায়নেই পদ্মা সেতু করে বিশ্বকে দেখিয়েছি- বাংলাদেশ পারে। ৭ মার্চের বক্তব্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন- কেউ দাবায় রাখতে পারবে না। এখন বাংলাদেশকে কেউ দাবায় রাখতে পারবে না।’
নারায়ণগঞ্জবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে তিনটি মেট্রোরেল তৈরি করার পরিকল্পনা আছে। নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য আমরা তিনটি মেট্রোরেলের লাইন তৈরি করব। এমআরটি লাইন ১, ২ ও ৪। এমআরটি লাইন-১ ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের ওপর দিয়ে মেট্রোরেল চলবে। এমআরটি লাইন-১, ২ ও ৪- এগুলো সবই যাবে নারায়ণগঞ্জের ওপর দিয়ে। এ ছাড়া আমরা নারায়ণগঞ্জে স্পেশাল ইকনোমিক জোন করব।’
নারায়ণগঞ্জকে স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণ করে দিচ্ছি। দেশের মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছে বলেই এটা আমরা করতে পেরেছি। আপনাদের সেবা করতে পেরেছি। সারা দেশে আমরা উন্নয়ন অগ্রগতি করেছি।’
জনসভায় নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাইয়ের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তার আগে বক্তব্য দেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শামীম ওসমান, নজরুল ইসলাম ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী।