জাতীয় সংসদের ২৯তম আসন গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ)। জাতী পার্টির (জাপা) সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমঝোতায় এই আসনের নৌকার প্রার্থী দলের নির্দশে তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লাঙ্গলের সঙ্গে লড়াই করছেন তারই মেয়ে। ফলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেশ আলোচনায় রয়েছে আসনটি।
জাতীয় নির্বাচনে এই আসনে ভোট যুদ্ধে রয়েছেন মোট ১০ প্রার্থী। এ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছিলেন সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের বড় বোন শিল্পপতি আফরুজা বারী। কিন্তু মনোনয়ন পেলেও বিএনপির অংশগ্রহণ না করা এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-জাপা সমঝোতায় দলের নির্দেশে তিনি তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। জাতীয় পার্টিকে এই আসনটি ছেড়ে দেয়ার ফলে এখন এ আসনে মহাজোটের লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।
তবে, এ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী আফরুজা বারী না থাকলেও লাঙ্গলের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ‘ঢেঁকি’ প্রতীকে ভোটের লড়াইয়ে রয়েছেন তারই বড় মেয়ে আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগার (সাগর)। উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন সাগর। এ ছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে তার নাম রয়েছে।
অন্য প্রার্থীরা হলেন- বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির আইরিন আক্তার (হাত ঘড়ি), এনএনপির মর্জিনা খান (আম), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মো. আবু ববক্কর সিদ্দিক (গামছা), জাসদের গোলাম আহসান হাবীব মাসুদ (মশাল), বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. ফকরুল হাসান (ডাব), বিএনএফ-এর ওমর ফারুক সিজার (টেলিভিশন), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের খন্দকার রবিউল ইসলাম (ঘড়ি) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়নাল আবেদীন (ট্রাক)।
ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই জমে উঠছে এ আসনের নির্বাচনি প্রচার। প্রচারে নানা প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভোটারদের কাছে নিজেদের জনপ্রিয়তা ও যোগ্যতা তুলে ধরতে ব্যস্ত রয়েছেন প্রার্থীরা। তবে ভোটাররা বলছেন, এখানে ১০ জন প্রার্থী থাকলেও দিন-রাত একাকার করে ভোটের প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন শক্ত এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী। ভোটের মাঠে মূলত লড়াইটা হবে ঢেঁকি-লাঙ্গলে।
জাপার নেতা-কর্মীরা বলছেন, অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ হিসেবে ভোটের মাঠে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। পাশাপাশি জোটগত সিদ্ধান্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি অংশ জাপার পক্ষে কাজ করায় জাতীয় পার্টির জয় অনেকটা সহজ বলে মনে করেন তারা।
তবে স্থানীয় সচেতন ভোটারদের মন্তব্য, পাটোয়ারী এগিয়ে থাকলেও খুব একটা পিছিয়ে নেই আব্দুল্লা নাহিদ নিগার। মামা প্রয়াত সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন এবং শিল্পপতি মায়ের পরিচিতি কাজে লাগিয়ে ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছেন তিনি। এ ছাড়া দলের বেশ বড় একটি অংশের নেতা-কর্মীরা তার সঙ্গে প্রচারে নেমেছেন।
এ ছাড়াও গুঞ্জন রয়েছে, দলের নির্দেশে বাধ্য হয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলেও কৌশলে মেয়ের পক্ষে কাজ করছেন আফরোজা বারী। ভোটে মেয়েকে জয়ী করতে পরামর্শ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতাসহ সব ধরনের সহযোগিতা করছেন তিনি।
নিউজবাংলাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগার বলেন, ‘ভোটের মাঠে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। সাধারণ মানুষসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ আমার সঙ্গে রয়েছেন।
‘নির্বাচনে জয়ী হলে তিস্তার চর ও নদী ভাঙনের শিকার হওয়া মানুষদের উন্নয়নে কাজ করব। এ ছাড়া ২০১৬ সালে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত আমার মামা সাবেক এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের স্বপ্ন ও অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করব।’
লাঙলের প্রার্থী ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই আসনটি জাতীয় পার্টির দুর্গ। বিগত যেকোনো সময়ের চেয়ে আমার আমলে এ উপজেলায় বেশি উন্নয়ন হয়েছে। এ ছাড়া জোটগত সিদ্ধান্তে এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী না থাকায় আমার শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী ৭ তারিখে এই উপজেলার মানুষ জাতীয় পার্টিকে নির্বাচিত করবে। আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।’
‘জাতীয় পার্টির দুর্গ’ খ্যাত এই আসনটিতে ২০০১ সালে জামায়াতের প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে ২০০৮ সালে আবারও আসনটি দখলে নেয় জাতীয় পার্টি। এরপর ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের এমপি নির্বাচিত হয়ে ২০১৬ সালে নিজ বাড়িতেই গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। তার মৃত্যুর পর অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন তৎকালীন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা। পরে ওই বছর তিনিও সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মারা গেলে পরের উপ-নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। পরে ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি এমপি নির্বাচিত হন।