বরিশাল-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর মিছিলে হামলা চালিয়ে ১২টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও চারটি ভাঙচুর করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে বরিশাল-২ আসনের বানারীপাড়া উপজেলার বাইশারী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন বানারীপাড়া থানার ওসি মো. মাইনুল ইসলাম।
স্বতন্ত্র ঈগল প্রতীকের প্রার্থী শের-ই-বাংলা একে ফজলুল হকের নাতি একে ফাইয়াজুল হক রাজুর অভিযোগ, ‘বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাওলাদ হোসেন সানা ও তার ছোট ভাই ইউপি চেয়ারম্যান রাহাদ আহম্মেদ ননীর নেতৃত্বে হামলা করা হয়েছে। হামলায় আমার অন্তত ৪০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।’
তবে আহতের বিষয়টি জানেন না বলে জানিয়েছেন ওসি মাইনুল ইসলাম।
এ বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফাইয়াজুল হক রাজু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঈগল প্রতীকের পক্ষে মোটরসাইকেলে মিছিল নিয়ে দুপুর পৌনে দুইটার দিকে উপজেলার মরিচবুনিয়া থেকে বানারীপাড়া পৌরশহরের উদ্দেশে রওনা দেয় আমার কর্মী-সমর্থকরা। বাইশারী কলেজের উত্তর পাশে মিছিলকারীরা পৌঁছালে বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক, সাধারণ সম্পাদক মাওলাদ হোসেন সানা ও তার ছোট ভাই উদয়কাঠি ইউপি চেয়ারম্যান রাহাদ আহম্মেদ ননী আগ্নেয় ও ধারালো অস্ত্র এবং লাঠিসোটা নিয়ে মিছিলে হামলা করে। তারা ঈগলের কর্মীদের ওপর গুলি করে; এছাড়া আমার কর্মী-সমর্থকদের এলোপাতাড়িভাবে পেটায় ও কুপিয়ে আহত করে। এ ঘটনায় আমার অন্তত ৪০ কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন। হামলাকারীরা আমাদের ১২টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করেছে। এ ছাড়া চারটি মোটরসাইকেল পিটিয়ে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।’
এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দেয়া হবে বলে জানিয়ে রাজু বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তারা কী ব্যবস্থা নেয় সেটাও দেখব।’
এ সময় আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা ভঙ্গ করেছে হামলাকারী সন্ত্রাসীরা। এরা কীভাবে আওয়ামী লীগের নেতা হয়? প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন- একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হবে।’
নিজেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সদস্য দাবি করে রাজু বলেন, ‘আমার দাদা ছিলেন শের-ই-বাংলা একে ফজলুল হক। তার বাবা ফায়াজুল হক আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি ও মন্ত্রী ছিলেন। আমাদের ওপর এ ধরনের হামলা মেনে নেয়া যায় না।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, উপজেলার বাইশারী থেকে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী একে ফাইয়াজুল হক রাজুর কর্মীরা ৩০/৩৫টি মোটরসাইকেলে মিছিল নিয়ে ইলুহারের উদ্দেশে দিকে যাচ্ছিলেন। বাইশারী কলেজের সামনে পৌঁছালে সানা ও ননীর নেতৃত্বে শতাধিক লোক মিছিলে হামলা চালায়। তারা মিছিলকারীদের ওপর অন্তত ৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে; এরপর পেটানো ও কোপানো শুরু করে। ঈগলের কর্মীদের এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করে তারা। পরে বিজিবি সদস্যরা এলে হামলাকারীরা এলাকা ত্যাগ করে।
আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
ওসি মো. মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের ১২টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। চারটি ভাঙচুর করা হয়েছে। কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তবে জানি না।’
বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অন্তরা হালদার বলেন, ‘গুলির কোনো আলামত পাইনি। তবে ১২টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও ৪টি ভাঙচুর অবস্থায় পেয়েছি। এ ঘটনায় ওসিকে দ্রুত মামলা করে জড়িতদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
অভিযুক্ত উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাওলাদ হোসেন সানা ও উদয়কাঠি ইউপি চেয়ারম্যান রাহাদ আহম্মেদ ননীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, বরিশাল-২ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেনন, ঈগল প্রতীক নিয়ে ফাইয়াজুল হক রাজু, গামছা প্রতীক নিয়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নকুল কুমার বিশ্বাস, সোনালী আঁশ প্রতীক নিয়ে তৃণমুল বিএনপির মো. শাহজাহান সিরাজ, আম প্রতীক নিয়ে ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির (এনপিপি) সাহেব আলী এবং ঢেকি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মনিরুল ইসলাম।
লাঙল প্রতীকের জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।